ক্যাম্পাস

ছিনতাইয়ের স্বর্গরাজ্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক, আবারও শিকার জাবি শিক্ষার্থী

পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাবে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন সিঅ্যান্ডবি থেকে মীর মোশারফ হোসেন হল গেইট সংলগ্ন এলাকা যেন ছিনতাইয়ের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত শোনা যায় ছিনতাইয়ের অভিযোগ। শনিবার (১২ অক্টোবর) রাতেও টিউশন থেকে ফেরার পথে ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থী রাসেল হোসাইন। 

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৫০তম ব্যাচের (২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ) এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলায়। 

ভুক্তভোগী রাসেলের বন্ধু শাহরিয়ার জানান, রাত ৮টার কিছু আগে কলমা এলাকা থেকে টিউশন শেষে হলে ফিরছিলেন রাসেল। পরে সিঅ্যান্ডবি থেকে গাড়ি না থাকায় হেঁটেই হল গেইটের দিকে আসছিলেন তিনি। হলের গেটে পৌঁছার মাত্র কয়েক গজ দূরে ছিনতাইকারীরা তার পথরোধ করে দাঁড়ায়। তার সঙ্গে থাকা টিউশনির ৯ হাজার টাকা এবং কিছুদিন আগে কেনা মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়। পরে ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে মারাত্মকভাবে জখম করে পালিয়ে যায়। ১৫ মিনিটের মতো সেখানে অপেক্ষা করে কাউকে না পেয়ে তিনি নিজেই রিকশাযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে আসেন। তিনি কোমরের ডান পাশে গুরুতর আঘাত পান।

ভুক্তভোগী রাসেল জানান, টিউশনির টাকা দিয়ে নিজের খরচ চালান তিনি। টিউশনির একসঙ্গে পাওয়া দুই মাসের বেতন নিয়ে আসছিলেন তিনি।

তিনি জানান, ছিনতাইকারীরা ছিল অল্পবয়সী, সংখ্যায় ছিল তিনজন। তারা প্রথমে এসে গলায় শক্ত করে ছুরি ধরেন। এতে তার শ্বাস একেবারে বন্ধ হয়ে আসছিল। ভয়ে তিনি সঙ্গে সঙ্গে সব দিয়ে দেন। তিনি যাতে আর কাউকে ডেকে আনতে না পারেন, সে জন্য ছিনতাইকারীরা যাওয়ার সময় তার কোমরে একটা কোপ দিয়ে যায়।

তিনি আরও জানান, মানিব্যাগে জাতীয় পরিচয় পত্র, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিয়পত্র ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল। মোবাইল হারিয়ে তিনি কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। পরে আহতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে আসলে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্ট করলে সবাই সাহায্যের জন্য ছুটে আসে। 

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে ডা. রিফাতের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক চিকিৎসা ও সেলাই করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম, রবীন্দ্রনাথ হলের প্রাধ্যস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল হাসান চৌধুরী সজল সেখানে উপস্থিত হন।

এনাম মেডিক্যালের অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. আ. তাহের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকেই আর তাকে জীবাণুনাশক এটিএস দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এখানে নতুন করে সেটা ওপেন করলাম না। ২৪ ঘণ্টা আমাদের অবজারভেশনে রাখার জন্য তাকে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

নিরাপত্তার বিষয়ে রাসেলের বন্ধু আবদুস সবুর বলেন, এমএইচের এ রোডে প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটছে। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আক্রান্ত হয়েছেন। প্রশাসন এবং পুলিশ তারপরও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আর কত দুর্ঘটনা ঘটলে প্রশাসনের টনক নড়বে!

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, আমরা খবর পেয়ে দ্রুততম সময়ে সেখানে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারও যথেষ্ট আন্তরিক ছিল। তার অবস্থা এখন অনেকটা স্টেবল। তারপরও আমরা তাকে হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা রাখার পরামর্শ দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য আমরা সচেষ্ট আছি। 

সিঅ্যান্ডবি থেকে হল গেইট পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. সোহেল আহমেদ বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ওই এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত আলো এবং পুলিশ বক্স স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। সাভার সার্কেল পুলিশের সঙ্গে এ নিয়ে দুবার আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল দশমী উদযাপিত হবার পর এ বিষয়ে কার্যকরি পদক্ষেপগুলো দৃশ্যমান হবে বলে আশা রাখছি।