ক্যাম্পাস

কুহেলি উত্তরী তলে হেমন্তের কুবি

প্রকৃতিতে শরৎ ঋতুকে বিদায় দিয়ে শুরু হয়েছে হেমন্ত। দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। দিনভর গরম থাকলেও বিকেল থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে প্রকৃতি। শরতের বিদায় হতে না হতেই হেমন্তকে পাশ কাটিয়ে যেন আগাম বার্তা দিচ্ছে শীত। সন্ধ্যা নামতেই শীত শীত অনুভূত হচ্ছে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি ও পরিবেশটা পুরোপুরি গ্রামীণ আবহে তৈরি। এ কারণে এখানে শীতের প্রকোপ একটু বেশিই। ক্যাম্পাসটিতে কুয়াশা নামে বৃষ্টির মতো। গাছের নরম-কচি পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে মিষ্টি রোদ। কুয়াশার আভাস ছাড়িয়ে ভোরের রক্তিম সূর্য যখন পূব আকাশে উঁকি দেয়, ঠিক তখনই সোনালি রোদের রঙচটা আলোয় শিশির জমা ঘাসগুলো চিকচিক করে ওঠে।

হেমন্তের সকালে খোলা মাঠের উপর শিশিরে সিক্ত ঘাসগুলোর নুয়ে পড়ার দৃশ্য, শিল্পীর রং-তুলি দিয়ে আঁকা ছবিকেও হার মানাবে। মেঘমুক্ত সুনীল আকাশটাও যেন শীতের হাতছানি দিয়ে ডাকছে। বিকেল গড়ালেই পশ্চিমে ঢলে পড়ছে সূর্য। গোধূলি লগ্নের রাঙা সূর্য সবাইকে রোমাঞ্চিত করে জলদিই নামিয়ে দিচ্ছে সন্ধ্যা।

এ মৌসুমেই কুবি শিক্ষার্থীরা মেতে উঠে শীতের আমেজে। আর শীত মানেই সাংস্কৃতিক উৎসবের ধুম। শীতের আগমনীতে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন খেলাধুলা ও উৎসবের আয়োজন করা হয়। শীতকালীন আন্তঃবিভাগ ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট টুর্নামেন্টগুলোতে শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন।

হেমন্ত ঋতুর শুরুতে প্রতি বছর হেমন্ত উৎসব পালনের প্রচলন রয়েছে ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও সংগঠনের উদ্যোগে পিঠা উৎসব, বইমেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শীতের রাতে শিক্ষার্থীদের দেখা মিলে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার ছাদে, মুক্তমঞ্চসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে কাঠ পুড়িয়ে বারবিকিউ করতে। আগুনকে ঘিরে বসে গানের আসর। এ যেন কুয়াশার চাদরে অপরূপ সৌন্দর্যে সেজে উঠে ক্যাম্পাস।

ঘন কুয়াশায় মাঝেও মধ্যরাতে কৃষ্ণচূড়া রোড, শহিদ মিনার রোড, পাহাড়তলি রোডে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো কেউ বন্ধ করে না। এসময়ে চলতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ও নাম সম্বলিত হুডি বানানোর ধুম, চলে ভ্রমণের নানা পরিকল্পনা।

কুবিতে শীতের অন্যতম আকর্ষণ খেজুরের রস। ক্যাম্পাসে খেঁজুর গাছ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে সংগৃহীত টাটকা খেঁজুরের রসই শিক্ষার্থীদের শীতের আমেজ ধরে রাখে।

শীতের আবহ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হয় রাইজিংবিডির। লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী হোসাইন মোহাম্মদ পিয়াস বলেন, ‘ক্যাম্পাসে এখন বইছে শীতকালের মৃদু হিমেল হাওয়া। পরিবার থেকে দূরে থাকলেও এ সময়টাকে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মিলে খুব উপভোগ করছি। ক্যাম্পাসের শীতের স্নিগ্ধ কুয়াশা আমার মনকে মুগ্ধ করে। সকালে ঘাসে শিশির ভেজা বিন্দু আর পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় আমাদের ক্যাম্পাস। অন্যান্য জায়গার তুলনায় এখানে সন্ধ্যা হলেই নামতে থাকে কুয়াশা। সেই কুয়াশা ভেজা রাতে রাতভর ব্যাডমিন্টন খেলতে খুব ভালো লাগে।

ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার কেয়া রাইজিংবিডিকে বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর আমাদের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। একেক ঋতুতে একেক রূপ ধারণ করে আমার প্রিয় এ ক্যাম্পাস। শরৎকালে কাশফুলে ভরে উঠেছিল। এখন সন্ধ্যার পর কিংবা সকালে ক্যাম্পাসে বের হলে বোঝা যায় শীতের আগমনী বার্তা। ঘন কুয়াশায় পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটতে ভালোই লাগে। সুনীতি-শান্তি (শেখ হাসিনা) হলের সামনে পিঠার দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে পিঠা খাওয়ার সময়গুলো স্মৃতি হিসেবে থাকবে। ক্যাম্পাস থেকে চলে যাওয়ার পর এ সময়টাকে খুব মিস করবো।