র্যাগিংমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি ও নবীন শিক্ষার্থীদের স্বাগত জানিয়ে র্যালি ও মানববন্ধন করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) সংস্কার আন্দোলন।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ রফিক-জব্বার হল থেকে র্যালিটি শুরু হয়ে মওলানা ভাসানী হল, বটতলা, আ ফ ম কামালউদ্দিন হল ও রেজিস্ট্রার ভবন হয়ে শহিদ মিনারে এসে মানববন্ধনে মিলিত হয়।
র্যালিতে শিক্ষার্থীদের ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, র্যাগিং এর বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘এসো নবীন ভয় নাই, জাহাঙ্গীরনগরে র্যাগ নাই’, ‘জাহাঙ্গীরনগরের পক্ষ থেকে, লাল গোলাপ শুভেচ্ছা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়।
মানববন্ধনে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান ধ্রুব বলেন, এতদিন জাবিতে একটি রাজনৈতিক দল গণরুম কালচার চালু রেখে হলে হলে সিন্ডিকেট করেছে, যা অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গের কারণ। আমরা চাই, আর কখনো যেন কোনো রাজনৈতিক দল এ ধরনের কালচার গড়ে তুলতে না পারে। র্যাগিং মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যে আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। এই কালচার বন্ধ করতে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতেই হবে।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৫০ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজমুল ইসলাম বলেন, র্যাগিং কালচার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে স্কুল-কলেজেও ছড়িয়ে পড়েছে। আগে একজন নবীন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে আসলে তাকে মুরগী নামে আখ্যা দেওয়া হতো। একটি মুরগী দেখলে যেমন শেয়াল ঝাঁপিয়ে পড়ে, তেমনি সিনিয়ররা ওই নবীন শিক্ষার্থীর উপর কে কার চেয়ে বেশি র্যাগ দিতে পারে, সেই যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ ধরনের কালচার যেন আর গড়ে উঠতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিগত স্বৈরাচারের আমলে ম্যানার শিখানোর নামে যে অন্যায় দিনের পর দিন করা হয়েছে, তা আর সহ্য করা হবে না।
বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী নাজিরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আসার পর নবীন শিক্ষার্থীদের যে ধরনের মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়, তা খুবই নিন্দনীয়। এগুলো বন্ধ করতে হবে। আমরা প্রশাসনের কাছে একটি এন্টি-র্যাগিং সেল গঠনের দাবি জানাচ্ছি। যেন নবীনরা এ ভোগান্তি থেকে মুক্তি পায়।
জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক ইয়াহিয়া জিসান বলেন, আমরা জুলাই বিপ্লবের পর একটি পরিবর্তন চেয়েছি, যেখানে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা গণরুম ও র্যাগিং কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে কোনো র্যাগিং দেখতে চাই না। সব স্তরের স্টেকহোল্ডারদের এ কালচারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, র্যাগিং মুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যে সময়োপযোগী এ আয়োজনকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ব্যাবস্থা নিয়েছি, যেন কোনো র্যাগিং না হয়। এর পাশাপাশি আমরা প্রক্টরিয়াল বডি সর্বদা সচেষ্ট আছি। প্রক্টরিয়াল টিম আজ রাত থেকে আগামী ১০-১২ দিন করা নজরদারিতে রাখবে, যেন র্যাগিং কালচার পুনরায় চালু না হয়।
অধ্যাপক খো. লুৎফুল এলাহী বলেন, আমি র্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের এ র্যালির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি। আমি সবাইকে আহ্বান জানাবো, এতদিন পরে আমরা যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, সেখানে যেন কোনো ধরনের র্যাগিং কালচার না থাকে। পাশাপাশি নবীনদের বলবো, নিজেরা সচেতন থেকে র্যাগের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে।
তিনি বলেন, নবনির্মিত হলগুলোতে গ্যাস সংযোগ দিয়ে নতুন হলে কিভাবে ডাইনিংয়ের ব্যবস্থা করা যায়, সেদিকে সুনজর দেওয়ার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
উল্লেখ্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন ব্যাচ (৫৩ ব্যাচ) এর আগমন হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে হলগুলোতে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য সিট নিশ্চিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো হলেই গণরুম নেই বলে খোঁজ পাওয়া গেছে। এর পাশাপাশি যেন র্যাগিং কালচারও না থাকে, সেই লক্ষ্যে এ আয়োজন করে জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলন।