ক্যাম্পাস

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এখন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক, মারধরের অভিযোগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ময়মনসিংহ জেলা ছাত্র কল্যাণের উপদেষ্টা পদ পেতে সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আল-আমিন ও সাধারণ সম্পাদক রিয়ান রাব্বি কিনকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি ছাত্রদলের প্রভাবশালী নেতা বলে জানা গেছে।

অভিযুক্ত নাহিয়ান বিন হক ওরফে অনিক ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম স্বাক্ষরিত জবির সাবেক শরীফ-সিরাজের কমিটিতে সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি জবি শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। মারধরের সময় তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন রাশেদ বিন হাশিম। এ দুজনই কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সহ-সভাপতি কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেতের অনুসারী।

জানা যায়, রোববার (২০ অক্টোবর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্র কল্যাণের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আল-আমিন ও সম্পাদক রিয়ান টিএসসিতে আসেন। সেখানে সিরাজের চায়ের দোকানে জুনিয়রদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন তিনি। এ সময় অতর্কিত হামলা করে উভয় দলের প্রভাবশালী নেতা অনিক ও তার সহযোগীরা বেধড়ক মারধর করেন। ওই দোকানের কয়েকটি গ্লাস ও জিনিসপত্রও ভাঙচুর করেন তারা।

হামলায় জড়িতরা হলেন, ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ও শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাহিয়ান বিন হক ওরফে অনিক, ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তুষার পাল, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আহসান মল্লিক, রাশেদ বিন হাশিম, আহম্মেদ কাওসার আকাশ, রাশেদুল ইসলাম রাহাত, মিয়া রাসেল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সোলাইমান খান সাগর, ওমর ফারুক ও ছাত্রদল কর্মী ইসরাফিল।

হামলার শিকার রিয়ান রাব্বি কিন বলেন, আমরা রোববার সিনিয়র-জুনিয়র সবাই একসাথে বসে চা খাচ্ছিলাম। এসময় ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রকল্যাণের সাবেক সভাপতি আল আমিন উপস্থিত ছিল। এক পর্যায়ে অনিক ও রাশেদের নেতৃত্বে আল আমিনের ওপর হামলা করা হয়। তখন আমি আল আমিন ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেও খুব আহত হয়েছি, এখনও চিকিৎসা নিচ্ছি। ওরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আসে। ওরা রানিং ছাত্রদল করে। ওরাই সব; এটাই ওদের কথা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল নেতা অনিক নেত্রকোনা জেলার হলেও রাজনৈতিক প্রভাবে ময়মনসিংহ জেলার উপদেষ্টা হতে চান। এতে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্র কল্যাণের অন্য শিক্ষার্থীরা বিরোধিতা করায় মারধর করে উভয় দলের প্রভাবশালী নেতা অনিক ও তার সহযোগীরা। মারধরে আহত ভুক্তভোগী আল-আমিন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।

ভুক্তভোগী আল-আমিন বলেন, আমি কোনো রাজনীতিতে যুক্ত না। নাহিয়ান বিন হক অনিক অন্য জেলার হয়েও আমাদের জেলা ছাত্র কল্যাণে প্রভাব খাটাতে চান। আমি ক্যাম্পাস জীবনে অরাজনৈতিক সংগঠনে কাজ করেছি। তিনি তার ইচ্ছেমতো নেতৃত্ব দিতে চান। এ ব্যাপারে বিরোধিতা করায় আমার উপর অতর্কিতভাবে আক্রমণ করেছেন। এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন ধরে আমার কাছে চাঁদা চান। কিন্তু আমি দিতে অস্বীকৃতি জানানোও আমাকে মারধরের আরেকটি অন্যতম কারণ।

তবে এ মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন উভয় দলের প্রভাবশালী নেতা অভিযুক্ত নাহিয়ান বিন হক ওরফে অনিক। তিনি বলেন, আমি আল-আমিন নামের কোনো ছেলেকে চিনি না এবং মারিনি। ওটা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। মূলত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের একটা বাকবিতণ্ডা হয়। ওইদিন সন্ধ্যায় জবি ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি হানিফ আহমেদ তার কিছু অনুসারী নিয়ে বসে বেগম খালেদা জিয়া সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করছিল এবং তারা ছাত্রকল্যাণের নামে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছিল।

ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিনা তিনি বলেন, এক যুগের বেশি ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত আছি। কয়েকবার গ্রেপ্তার হয়ে নির্যাতিত হয়েছি। আওয়ামী লীগের কুচক্রী মহল পার্টিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই আমাকে নানাভাবে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে। 

দোকানে ভাঙচুরের শিকার দোকানী সিরাজ বলেন, ওরা হঠাৎ করে এসেই একজনকে মারা শুরু করে। অনেক সিনিয়র, কাউকেই চিনি না। কয়েকটি কাপ ও অন্যান্য জিনিসপত্র ভেঙে ফেলেছে।

অভিযোগের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সহ-সভাপতি কাজী জিয়া উদ্দিন বাসেত বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে টিএসসিতে ঝামেলা হলে সমাঝোতা করতে আমাদের সঙ্গে অনিক ও তার অনুসারিরা মিউচুয়াল করাতে যায়। অনিক ছাত্রদলের সঙ্গে ২০১২ সাল থেকে আছে। এগুলো মিথ্যা বানোয়াটভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। 

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে জবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা বলেন, ঘটনাটি আমরা শুনেছি এবং পরপরই কেন্দ্রীয় ছাত্রদলে বিষয়টি জানিয়েছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের পরবর্তী নির্দেশনা জানা যাবে।

জবি ছাত্রদল সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলামকে কল দিলে তিনি বলেন, আমি সমাবেশে আছি। ফোনে কথা শোনা যাচ্ছে না। পরে আপনার সাথে কথা বলব। 

তবে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে জানি না। জবি ছাত্রদলের সভাপতির সঙ্গে কথা বলব। এখন অভিযুক্ত নাহিয়ান বিন হক অনিক ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত কিনা, সেটা জেনে আমি সাংবাদিকদের জানাতে পারব।