ক্যাম্পাস

সিনেমার মাধ্যমে সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভব: রায়হান রাফি

জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা রায়হান রাফি বলেছেন, ‘সিনেমার মাধ্যমে সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন করা সম্ভব। আমাদের সব ধরনের সিনেমা বানানোর স্বাধীনতা এবং সেন্সরশিপ যদি আরও সহজ করা হতো, তাহলে সমাজের ধারা অনায়াসেই পরিবর্তন হয়ে যেত।’

শনিবার (২৬ অক্টোবর) বেলা ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘ম্যাজিক লণ্ঠন কথামালা ১২; বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সাম্প্রতিক গতি-প্রকৃতি এবং ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক চলচ্চিত্র বিষয়ক অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ অ্যাকাডেমিক ভবনের ১৫০ নম্বর কক্ষে চলচ্চিত্র বিষয়ক গবেষণা জার্নাল ও সংগঠন ‘ম্যাজিক লণ্ঠন’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

রায়হান রাফি বলেন, ‘সিনেমা একটি শিল্প। এটি শুধু বিনোদনের জন্য নয়, এর মাধ্যমে প্রতিবাদ করা যায়, সমাজের কথা তুলে ধরা যায়। সিনেমার ভিজ্যুয়াল দিয়ে অনেককিছু সম্ভব, যেখানে মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। এটা আমাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করবে। যখন মানুষ সাহসের সঙ্গে সিনেমা বানাতে পারবে, তখন সমাজকে অনায়াসেই পরিবর্তন করা সম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, ‘চিত্রনাট্যে সবার একটা নিজস্বতা থাকে, সে চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে মেলায়। কিন্তু চলচ্চিত্রে নিজের গল্প তুলে ধরা হয়। আমাদের দেশের অন্যতম একটা সংকট হলো, সিনেমার লেখক নেই। আমাদের নিজেদেরই গল্প লিখতে হয়, সঙ্গে সিনেমাটাও নির্মাণ করতে হয়। ফলে ধারাবাহিকতা থাকে না।’

প্রশ্নোত্তর পর্বে জনপ্রিয় এ নির্মাতা বলেন, ‘যে দল ক্ষমতায় আসে, তারাই চায় বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সিনেমা বানাতে। কোনো দলের সমালোচনা করে সিনেমা বানলে যদি কেউ বাঁধা না দেয়, তাহলে বুঝবো আমরা স্বাধীন। আমরা আশাবাদী সেন্সর বোর্ডে প্রক্রিয়াগুলো অনেক সহজ করা হবে এবং আমরা সিনেমার স্বাধীনতা খুঁজে পাব।

রায়হান রাফি নারী বিদ্বেষী এবং সিনেমায় নারীকে অবমাননা করে উপস্থাপন করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে এখানেই আমাদের মানসিক সমস্যা। এ যুগে এসে এ রকম ভাবার সুযোগ নেই। পরান সিনেমা কেনো এত জনপ্রিয় সবাই দেখেছেন। আর দামাল ছবি কেনো বেশি দর্শক পায়নি, সেটা বুঝতে পারলেই এর উত্তর পরিষ্কার হয়ে যাবে।’

পরবর্তী সিনেমার বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে রাফি বলেন, ‘পরবর্তী সিনেমা ক্রসফায়ার নিয়ে। তাছাড়া বিগত ইতিহাসে ঘটে যাওয়া বিডিয়ার বিদ্রোহ, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, পুলিশ-আর্মিদের জীবন এবং জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পুরো ইতিহাস নিয়েও সিনেমা বানানোর পরিকল্পনা চলছে।’

চলচ্চিত্রে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এ গুণী নির্মাতা বলেন, ‘সিনেমাতে আসেন, আপনাদেরই দরকার এ প্ল্যাটফর্মে। পরিচালক জিনিসটা অনেক পাওয়ারফুল, যা ভাবা হবে তাই বানানো সম্ভব। এমনকি ভাবার জন্য অনেক টাকাও পাওয়া যায়।’

সমাপনী বক্তব্যে সংগঠনটির সম্পাদক ড. কাজী মামুন হায়দার রানা বলেন, ‘আশির দশকে পক্ষপাতীত্ব করে অনেক মেধাবী পরিচালক-অভিনেতাকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। আমাদের দেশে অদ্ভুত রকমের একটা প্রথা চলছে, যা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রটাকে ধ্বংস করে ফেলছে। ফেসবুক রিল, ইউটিউব ভিডিওকে প্রমোট করার মাধ্যমে সিনেমার চাহিদা কমিয়ে ফেলছে। মূলত ফ্রি’তে সিনেমা দেখাতে গিয়ে সম্পূর্ণ প্ল্যাটফর্মটাই নষ্ট হয়ে গেছে। পৃথিবীতে কোনো কিছু ফ্রি দেখানো উচিত নয়।’

এর আগে, শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ম্যাজিক লণ্ঠনের সহকারী সম্পাদক রিতা জান্নাত। অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনায় ছিলেন আরশি জান্নাত ও জরিন আল জান্নাত।

অনুষ্ঠানে পরিচালক রায়হান রাফিকে ম্যাজিক লণ্ঠনের সদস্যরা সম্মাননা, ক্রেস্ট ও উপহার সামগ্রী প্রদান করেন।

এর আগে, ‘ম্যাজিক লন্ঠন’ সংগঠনটি যাত্রা শুরু করে ২০১১ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছর জানুয়ারি ও জুলাই মাসে একই নামে জার্নাল প্রকাশ করে সংগঠনটি। এ জার্নালে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের লেখা চলচ্চিত্র, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, নিউ মিডিয়া বিষয়ক প্রবন্ধ-নিবন্ধ ও সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এছাড়া সপ্তাহের প্রতি রোববার চলচ্চিত্র বিষয়ক ও বুধবার সাধারণ পাঠচক্র করা হয়। ম্যাজিক লণ্ঠনের প্রযোজনায় সংগঠনটির সদস্যরা নিয়মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রও নির্মাণ করে থাকেন।

‘ম্যাজিক লণ্ঠন কথামালা’ প্রথমবার অনুষ্ঠিত হয় ২০১২ সালে। এর কথামালায় কথা উপস্থাপনা করেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা নূরুল আলম আতিক, আবু সাইয়ীদ, গোলাম রাব্বানী বিপ্লব, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, মেজবাউর রহমান সুমন, কাজী হায়াৎ, অভিনয় শিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, রোকেয়া প্রাচী প্রমুখ।