ক্যাম্পাস

মাস পেরোলেও প্রকাশ হয়নি আসন বরাদ্দের দ্বিতীয় তালিকা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) দীর্ঘ আট বছর পর আবাসিক হলগুলোতে আসন বরাদ্দ দিয়ে প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আসন ফাঁকা সাপেক্ষে পরের সপ্তাহে দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল। কিন্তু প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো মেধাতালিকা প্রকাশ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা গেছে, গত ৪ অক্টোবর হলের আসন বরাদ্দ দেওয়ার পরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ জানানো হয়। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে মেধার ভিত্তিতে দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তা প্রকাশ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বিপাকে পড়েছেন অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীরা। অধিকাংশ বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষা শুরু হওয়ায় হলের বাইরে থাকতে কষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।

আইসিটি সেল এবং বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশের পর বিভিন্ন সমস্যা ও অভিযোগ নিয়ে অন্তত ৭০০টি আবেদন পড়েছে। এগুলো সমাধান করে দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ করতে সময় লাগছে। শিক্ষার্থীদের প্রতিটি অভিযোগ আমলে নিয়ে কাজ হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এদিকে শিক্ষার্থীরা জানান, কোনো বিভাগ থেকে ৫০ জন আসন পেয়েছেন, কোনো বিভাগ থেকে অল্প কয়েকজন আসন পেয়েছেন, আবার অনেক শিক্ষার্থী হলে আসন নিয়েও অবস্থান করেন না। এমনকি এক শিক্ষার্থীকে দুই হলেও আসন পেতে দেখা গেছে। অন্যদিকে, দীর্ঘ সময় পর বছরের শেষ দিকে ক্যাম্পাস সচল হওয়ায় প্রায় সব বিভাগে পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় আবাসন ব্যবস্থার সুরাহা না হওয়ায় হতাশায় রয়েছেন অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা শিক্ষার্থীরা।

অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আদিবুজ্জামান তিতাস বলেন, ‘হলে আসন দেওয়ার ক্ষেত্রে ফলাফল, দূরত্ব, আর্থিক অবস্থা, সহশিক্ষা কার্যক্রম এ সব কিছু বিবেচনা করা দরকার ছিল। তা-না করে শুধু রেজাল্টের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে। এরপর বলা হয়েছিল, এক সপ্তাহ পরেই আবার দ্বিতীয় তালিকা দেওয়া হবে। কিন্তু তার কোনো খোঁজখবর নেই।’

শিক্ষার্থী তপন কুমার বলেন, ‘আমি অপেক্ষমাণ তালিকার চতুর্থ নম্বরে আছি। প্রশাসন মেধাতালিকা দিলে আমি আসন পাব- এ আশায় কটেজ ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন বিপদে পড়তে হচ্ছে।’

জানা গেছে, ছাত্রী হলগুলোতে আগে থেকেই প্রায় সব আসনে শিক্ষার্থীরা বৈধভাবে অবস্থান করছেন। নতুন করে কিছু আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ছাত্র হলগুলোর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ আসন খালি রয়েছে। এর মধ্যে আলাওল ও এএফ রহমান হলে প্রায় অর্ধেক আসন খালি। অন্য হলগুলোর মধ্যে সোহরাওয়ার্দী হলে তেমন আসন খালি নেই। আমানত, শাহজালাল ও আব্দুর রব হলে কিছু আসন খালি রয়েছে। অন্যদিকে, নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু হল ও অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলের কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি।

এ বিষয়ে আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের আইসিটি সেলে যে সব অভিযোগ পড়েছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করছি। এ সব কাজ শেষ করতে এক সপ্তাহ সময় লাগবে। আমাদের কাজ শেষ হওয়া মাত্রই আমরা দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ করবো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘মেধার ভিত্তিতে আসন বরাদ্দ দেওয়ায় যে সব বিভাগে ফলাফল ভালো হয়, সেসব বিভাগের শিক্ষার্থীরা আসন বেশি পেয়েছে। আর যে সব বিভাগে তুলনামূলক সিজিপিএ কম উঠে, সে সব বিভাগের শিক্ষার্থীরা হলে আসন কম পেয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশের পর বেশকিছু অভিযোগ পড়েছে। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে কাজ চলছে। আমরা চাচ্ছি যে অভিযোগগুলো এসেছে, পরবর্তী ফলাফলে এগুলোর পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে। এজন্য একটু দেরি হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী সপ্তাহে দ্বিতীয় মেধাতালিকা প্রকাশ করা হবে।’