বরাদ্দকৃত কক্ষ ব্যবহারের সুযোগ চেয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে, এ সব কক্ষ না ছাড়তে পাল্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন ফোকলোর এবং ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
রোববার (৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ কর্মসূচি পালন করেন। অপরদিকে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে একই জায়গায় অবস্থান নেন ফোকলোর ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, গত ৮ অক্টোবর কলা অনুষদের ডিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবনের চতুর্থ তলার ২৩টি ও পঞ্চম তলার একটি কক্ষ চারুকলা বিভাগের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে কাগজে-কলমে বরাদ্দ পেলেও কক্ষগুলো ব্যবহার করতে পারছে না বিভাগটি। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর স্টাডিজ ও ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ চারুকলা বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত ওই কক্ষগুলো নিজেদের দখলে নিয়ে ব্যবহার শুরু করেছে। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষকে বিভিন্নভাবে জানিয়েও ফল না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে এ কর্মসূচি পালন করেন।
তারা আরও জানান, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু হওয়া বিভাগটিতে মোট পাচঁটি ব্যাচের অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চলমান থাকলেও নিজস্ব শ্রেণিকক্ষ ও অফিস কক্ষ নেই। ফলে এতদিন অন্য একটি বিভাগ থেকে ধার করা অফিস কক্ষ ও টিএসসিসির কিছু কক্ষে শ্রেণি কার্যক্রম চলছিল। আগস্ট মাসের শুরুর দিকে অনুষদীয় মিটিংয়ে ওই কক্ষগুলো বরাদ্দের সিদ্ধান্ত হয়। একই সভায় ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ও ফোকলোর স্টাডিজকে একই ভবনের পঞ্চম তলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে বিভাগ দুটি নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষগুলোতে না গিয়ে চতুর্থ তলার চারুকলার জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষগুলো ব্যবহার অব্যাহত রেখেছেন।
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা পাঁচ বছর ধরে ছয়টা ব্যাচ একটি কক্ষে ক্লাস করে আসছি। আর ছয়মাস ধরে সাবেক উপাচার্যের মৌখিক আশ্বাসে আমরা চতুর্থ তলার কক্ষগুলোতে ক্লাস করে আসছি। কিন্তু অক্টোবরের শুরুর দিকে প্রশাসন থেকে চারুকলা বিভাগের সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা করে চতুর্থ তলায় ২৩টি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্ত আমাদের জন্য যে কক্ষ বরাদ্দ দিয়েছে তা খুবই অপ্রতুল। এখন চারুকলার শিক্ষার্থীরা দাবি করছে আমরা অন্যায়ভাবে এই কক্ষগুলো দখল করে আছি, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
তারা আরও বলেন, ‘আমাদের নাকি এ কক্ষগুলোতে ক্লাস করার অধিকার নেই। তাই প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য আমরা এ আন্দোলন করছি। কেননা প্রশাসন চারুকলার সুযোগ-সুবিধা দেখছে। অথচ এর চেয়ে পুরনো বিভাগ হলেও আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না, বরং প্রতিনিয়ত বৈষম্য করা হচ্ছে।’
এ বিষয়ে চারুকলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অবশ্যই যৌক্তিক। কর্তৃপক্ষ থেকে বিভাগের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষেই তাদের উঠতে দেওয়া উচিত। তবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির যেন সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার।
ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি আতিফা কাফি বলেন, ‘উপাচার্য স্যার কক্ষগুলো পুনরায় বন্টনের জন্য আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। আমরাও আলোচনা করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিব। উপাচার্য আশ্বস্ত করেছেন খুব দ্রুত এর সমাধান করা হবে।’
ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সভাপতি ড. আবু শিবলী মো. ফতেহ আলী চৌধুরী বলেন, ‘প্রশাসন যেখানে বরাদ্দ দেবে, সেখানে যাব। এখানে আমি প্রশাসনের আওতায় কাজ করছি। কিন্তু বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ রুমগুলো ছাড়তে চাচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা এখন আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা আজও আন্দোলন করেছে। আমি তাদের বুঝিয়েছিলাম যে, এভাবে আন্দোলন করে কিছু হবে না। প্রশাসন যেটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তেমনই হবে। কলা অনুষদের ডিন বাইরে আছেন। তিনি আসলে খুব দ্রুত এটির সমাধান করা হবে বলে উপাচার্য আশ্বাস দিয়েছেন।’
কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, ‘ছোট একটি সমস্যাকে বড় করে তোলা হচ্ছে। আমরা সবগুলো বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে বসে কক্ষ বরাদ্দের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু বরাদ্দকৃত কক্ষে না গিয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টির সমাধান শিক্ষকদের হাতেই রয়েছে বলে আমি মনে করি। তারা বললে বরাদ্দকৃত কক্ষে যেতে শিক্ষার্থীরা বাধ্য।’
তিনি বলেন, ‘উপাচার্যের নির্দেশে বিষয়টি নিয়ে আমি ডেভোলপমেন্ট স্টাডিজ ও ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগের সভাপতির সঙ্গেও আলাদাভাবে কথা বলেছি। তারপরও নির্দেশ না মেনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এখন কেউ যদি গায়ের জোরে নির্দেশ অমান্য করে, তাহলে আমাদের করার কী থাকে। আমরা তো আর পুলিশ প্রশাসন না। আমরা মনে হয়, উপাচার্যকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার জন্য পরিকল্পিতভাবেই এ সব করা হচ্ছে।
এদিকে উভয় বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। আলোচনায় তিনি সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।
এর আগে, একই দাবিতে গত ২৩ অক্টোবর মানববন্ধন করে চারুকলা বিভাগেরর শিক্ষার্থীরা। পরে উপাচার্য অতি দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিলে আন্দোলন স্থগিত করেছিলেন তারা।