সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে পাবনার চাটমোহর এনায়েতুল্লাহ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আবু ইসহাককে জোরপূর্বক বের করে দেওয়ার দেড় মাস পার হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। হয়নি কোনো তদন্ত কমিটি, এমনকি দেওয়া হয়নি কোনো শোকজ। উল্টো ‘সন্ত্রাসী’ কায়দায় জোরপূর্বক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ দখলকারী রবিউল ইসলামকে বৈধতা দিয়েছেন তারা। এ নিয়ে সচেতন মহলে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এর আগে, গত ৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন ও সংস্থাপন শাখার উপ-সচিব কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা অনান্য শিক্ষকদের জোরপূর্বক পদত্যাগ বা হেনস্তা না করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (উপ-সচিব) হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বা সুপারের অবর্তমানে প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠতম শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বা সুপার পদে দায়িত্ব প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ সব নির্দেশনা উপেক্ষা করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর চাটমোহর এনায়েতুল্লাহ ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আবু ইসহাককে কোনো কারণ ছাড়াই মাদ্রাসা থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়। পরে অপেক্ষাকৃত বয়সে অনেক জুনিয়র শিক্ষক রবিউল করিম বাচ্চু স্বেচ্ছাচারীতার মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করে ওই চেয়ারে বসেন।
ঘটনার বিচার চেয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এবং ৩০ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বরাবর অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আবু ইসহাক। কিন্তু ঘটনার দেড় মাস পার হয়ে গেলেও সে বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে নিরব ভূমিকা পালন করছেন তারা।
ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে স্থানীয় কিছু লোকজন মাদ্রাসায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আবু ইসহাকের কক্ষে যান। তারা তাকে আওয়ামী লীগের দোসর, দুর্নীতিবাজসহ বিভিন্ন অশ্লীল ভাষায় অপমান করেন। একপর্যায়ে তারা যাকে খুশি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বানাবেন বলে তাকে চেয়ার ছেড়ে চাবি বুঝিয়ে দিয়ে বের হয়ে যেতে বলেন। তিনি নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তারা শোনেননি। অনেকটা জোর করেই ভুক্তভোগীকে মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করেন এবং মাদ্রাসায় তালা ঝুলিয়ে দেন।
এর কিছু সময় পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদের দাবিদার একই মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক রবিউল করিম বাচ্চুকে ফুলের মালা পরিয়ে চেয়ারে বসিয়ে উল্লাসসহ মিষ্টি বিতরণ করেন কয়েকজন শিক্ষকসহ ওইসব লোকজন। ওই সময় এ সব ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ে।
ওই সময় মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দাবিদার রবিউল করিম বাচ্চু সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘নিয়োগকালে ম্যানেজিং কমিটি রেজুলেশন করে আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিয়েছে। আবু ইসহাককে বারবার বলার পরও তিনি দায়িত্ব বুঝিয়ে দেননি। এলাকাবাসী তাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের চেয়ারে বসিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু এটা তিনি পারেন কি-না বা আইন সম্মত কি-না, সে বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।’
জানা গেছে, নিয়োগ সংক্রান্ত কার্যক্রমের মেয়াদ থাকে ছয়মাস। ছয়মাস অতিবাহিত হলে নিয়োগ কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে হয়। কিন্তু সেটিও মানা হচ্ছে না। মাদ্রাসাটির নিয়োগ কার্যক্রম শুরুর পর ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর রবিউল করিমকে সাচিবিক দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে হিসেবে ওই নিয়োগ কার্যক্রম শুরু পর এক বছর এক মাস পার হয়ে গেছে।
এদিকে, ঘটনার এক মাস ১৭ দিন পর মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে মাদ্রাসায় সরেজমিনে পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মাহফুজা সুলতানা। এ সময় চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেদুয়ানুল হালিম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মগরেব আলীসহ সাংবাদিক ও সুধীজনরা উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে জোরপূর্বক পদ দখলকারী রবিউল করিম বাচ্চুকেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা জানান এডিসি। কিন্তু আবু ইসহাককে হেনস্তা করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলেননি বা ব্যবস্থা নেননি।
অজ্ঞাত কারণে কেন কোনো তদন্ত কমিটি বা তদন্ত হলো না, অভিযুক্ত চেয়ার দখলকারীকে শোকজ করা হলো না ইত্যাদি বিষয়ে জানতে সাংবাদিকরা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মাহফুজা সুলতানাকে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো মন্তব্য না করে মাদ্রাসা ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মাহফুজা সুলতানার সঙ্গে কথা বলার জন্য বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত কয়েকটি মোবাইল নম্বর থেকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়া মেসেজ পাঠিয়েও তার সাড়া পাওয়া যায়নি।