ক্যাম্পাস

নতুন নির্বাচন মানে শহিদদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা: ফরহাদ মজহার

কবি ও চিন্তাবিদ ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘এ সরকার রক্ত দিয়ে নির্বাচিত, শহিদদের লাশের দ্বারা নির্বাচিত। যে সরকার রক্ত দিয়ে নির্বাচিত করেছি, তাদের বিপরীতে আপনারা নির্বাচিত সরকার চাচ্ছেন। তার মানে আমাদের শহিদদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন।’

বুধবার (৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে ‘গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী বাংলাদেশ: রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী, সংবিধান ও গঠন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপি ও জামায়াতের উদ্দেশ্যে করে তিনি এ সব কথা বলেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রচিন্তা আয়োজিত এ সভায় তিনি বলেন, ‘যারা নির্বাচনের নামে পুরাতন ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখছেন, তারা ফ্যাসিস্ট। বিএনপিকে বোঝাতে হবে, বিএনপির ওপর আমরা আশা ছাড়তে রাজি না। বিএনপির যে সব নেতা-কর্মী এ গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের অবদান স্বীকার করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া ফ্যাসিস্ট শক্তির অধীনে নির্বাচনে যেতে চাননি। তিনি নির্বাচনে না যেতে চাওয়ার মধ্য দিয়ে যে আপসহীন ব্যবস্থা তৈরি করেছেন, সেটাই গণ-অভ্যুত্থানে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। তার যে যথাযোগ্য অবদান, সেটা আমরা স্বীকার করি। আমি তারেক রহমানকে বলতে চাই, আপনার মা’কে যদি ভালোবাসেন, তার যে আপসহীন অবস্থান ছিল ফ্যাসিস্ট শক্তির বিরুদ্ধে, সে আপসহীন অবস্থান আপনি গ্রহণ করুন। বাংলাদেশের তরুণরা আপনাকে মাথায় তুলে রাখবে।’

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নেই বলে রাষ্ট্রপতি তার শপথ ভঙ্গ করেছেন। এরপর তিনি আর এই পদে থাকতে পারেন না। বর্তমান সরকার স্বাধীন না। এ সরকার জনগণের সরকার হতে পারবে না ততক্ষণ, যতক্ষণ রাষ্ট্রপতির পরাধীনতায় থাকবে। এ সরকার নিজে ঘোষণা দিতে হবে তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।’

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের জায়গায় আপনারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বিভিন্ন ক্ষমতাধর জায়গাগুলো দখলে নিয়েছেন। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের হাসান মাহমুদ (সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী) বলেই দিয়েছে, বিএনপি আর আওয়ামী লীগ একসঙ্গে আন্দোলন করবে।’

তরুণদের উদ্দেশ্যে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘নিজেরা চিন্তা করতে শিখুন। আবেগ দিয়ে পুলিশ মোকাবেলা করা যায়, জীবন দেওয়া যায়, পঙ্গু হওয়া যায়। কিন্তু আবেগ দিয়ে রাষ্ট্র গঠন করা যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ সরকারের উচিত ছিল, শহিদ মিনারে গিয়ে জনগণের সামনে শপথ নেওয়া। কিন্তু তারা রক্ত দিয়ে অর্জিত বিজয়কে ফ্যাসিস্ট সংবিধানের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলেছে। আমি তখনই সাহস নিয়ে এর সমালোচনা করেছিলাম। কিন্তু তখন অনেকে আমাকে নিয়ে ট্রল করেছে। তারা এখন ঠিকই বুঝতে পেরেছে।’

৭২-এর সংবিধান পাকিস্তানি সংবিধান উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট সরকারকে সাংবিধানিকভাবে বৈধতা দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ড. কামাল হোসেন। ৭২-এর সংবিধান পাকিস্তানি সংবিধান। এ সংবিধান দিয়ে রাজনৈতিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। পৃথিবীতে কোনো ব্যক্তি নিজেকে সংবিধান প্রণেতা বলেন না, ছিঃ কামাল হোসেন। নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে হবে। আর নতুন গঠনতন্ত্র জনগণ প্রণয়ন করবে, এটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। জনগণকে বাদ দিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনো আলোচনা নয়। আমরা জনগণকে আবারও বাদ দিচ্ছি। আগের গঠনতন্ত্র জনগণ লিখেনি।’

সভায় আরও বক্তব্য দেন,রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও ‘রাষ্ট্রচিন্তা'র প্রতিষ্ঠাতা হাসনাত কাইয়ুম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দিন, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসির উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।