শরৎ ও হেমন্ত ঋতুতে ফোটে শিউলি ফুল। কমলা আর সাদা রঙের মিশ্রণে এ ফুল দেখতেও অসম্ভব সুন্দর। সবুজ ঘাসের ওপর ঝরে পড়া কমলা-সাদার এই শিউলি ফুলের সৌন্দর্যে চোখ আটকে যাবে যে কোনো মানুষেরই। কুয়াশা জড়ানো হিম-শীতল বাতাস এই ফুলের মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে দেয় চারিদিকে।
শিউলি ফুল সন্ধ্যা থেকে ফুটতে শুরু করে এবং সকাল হওয়ার আগেই ঝরে যায়। এ ফলটি রাতে ফোটে। এ জন্য এটাকে রাতের রানিও বলা হয়। সূর্যের আলো ফুটতে না ফুটতেই যেন পাহাড় সমান বেদনা বুকে নিয়ে অশ্রুবিন্দুর মতো ঝরে পড়ে। বাদ যায় না লাল মাটি আর পাহাড় ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবেষ্টিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) হেমন্তের শিউলিও।
কুবির প্রতিটি ভোরের সৌন্দর্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করে অপরূপ শিউলি ফুল। বিবিএ ফ্যাকাল্টির পাশের ঢালুতে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সারি সারি শিউলি ফুলে ভরা প্রাঙ্গণ এক অপার্থিব দৃশ্য সৃষ্টি করে রেখেছে। সন্ধ্যার পর, গভীর রাতে কিংবা ভোরে অনেকে ক্যাম্পাসে ছুটে আসেন শিউলির এ মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণ নিতে।
দেখলে মনে হবে, হেমন্তের সকালে ফুলগুলো ঘাসের ওপর স্নান করছে। সবুজ ঘাসের ওপর সারারাত ধরে শিশিরে স্নান শুভ্রতায় ভরা শিউলি ভোরবেলায় সযত্নে কুড়িয়ে নেন ফুলপ্রেমীরা। এ সময় কেউ আবার ফুল দিয়ে সাজিয়ে নিজের নাম লেখেন। কেউ-বা ফুল কুড়িয়ে দুই হাতে নেন সুঘ্রাণ। কেউ-বা বইয়ের ভাঁজে লুকিয়ে রাখেন প্রিয়জনকে দেখাবেন বলে। অনেকে আবার ফুলগুলো সংগ্রহ করে ফিরছেন বাসায়। তবে কেউ ভুলছেন না, শিউলি সঙ্গে কাটানো মুহূর্তটি মোবাইলে ধারণ করতে।
শিউলি ফুল কুড়িয়ে নিতে ও সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসা কুবি শিক্ষার্থী ও পর্যটকদের সাথে কথা হয় রাইজিংবিডির।
ফুল কুড়াতে কুড়াতে কুবির বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুন্নী আক্তার হালিমা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘শিউলি ফুলের এ বাগানটি আমাদের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। আমি খুব ভোরে শিউলি ফুল কুড়াতে চলে আসি। শিশিরভেজা ঘাসের মধ্যে এমন দৃশ্য মনকে দোলা দিয়ে যায়। সবুজ ঘাসের মধ্যে সাদা-কমলার মাখামাখি সত্যিই মনোমুগ্ধকর।’
কুবিতে ঘুরতে আসা পর্যটক মো: আশিকুর রহমান বলেন, ‘আহা কী গন্ধ! মন আকুল করে দেওয়ার মতো গন্ধ। এ ক্যাম্পাসে শিউলি ফুলের বাগান আছে, তা জানা ছিল না। গন্ধ পেয়ে কিছুটা সামনে এগিয়ে দেখি নয়নাভিরাম শিউলি ফুল। শিউলি আমার খুবই প্রিয় ফুল।’
প্রসঙ্গত, শিউলি ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Nyctanthes arbor-tristis। এটি হচ্ছে নিক্টান্থেস (Nyctanthes) প্রজাতির একটি ফুল। এটি দক্ষিণ এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ড থেকে পশ্চিমে বাংলাদেশ, ভারত, উত্তরে নেপাল ও পূর্বে পাকিস্তান পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যায়। এ ফুল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যফুল ও থাইল্যান্ডের কাঞ্চনাবুরি প্রদেশের প্রাদেশিক ফুল।
শিউলি গাছের বাকল বা চাল নরম ও ধূসর বর্ণের হয়। এই গাছ ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। গাছের পাতাগুলো ৬-৭ সেন্টিমিটার লম্বা ও সমান্তরাল।