জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কাগজে-কলমে বা বাস্তবে হল না থাকলেও ‘ছাত্র হল-১’ নাম দিয়ে প্রাধ্যক্ষ নিযুক্ত করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল ছাড়াই প্রাধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে রসিকতাও করছেন অনেকে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. শেখ গিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান সাদীকে ‘ছাত্র হল-১’ এর প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দুই বছরের জন্য তিনি এ পদে থাকবেন এবং বিধি মোতাবেক ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্য হবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ নিয়োগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘হল নেই, অথচ প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নতুন প্রাধ্যক্ষকে নিয়োগ দেওয়ার পর তো তাকে ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হবে। কাকে খুশি করার জন্য এমন অহেতুক সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তা আমাদের মাথায় আসছে না। এ প্রশাসন কি যে করছে, কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাদের জন্য যা করা দরকার, তা-না করে উল্টোপথে হাঁটছে।’
এ বিষয়ে জানতে নতুন প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান সাদীকে কল দেওয়া হলে তিনি বলেন, “দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের হল নির্মাণে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা ও অস্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করার জন্য এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে লিখিতভাবে আমি কোনো কর্মপরিকল্পনা হাতে পায়নি।”
তিনি বলেন, “আমাদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে হল নির্মাণে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা জন্য মূলত দায়িত্বশীল একজন ব্যক্তি প্রয়োজন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত অস্থায়ী আবাসন ব্যবস্থাও করতে হবে। এ দুই দায়িত্বের জন্যে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কর্মপরিকল্পনা আমার হাতে আসলে সে অনুযায়ী কাজ করতে পারব।”
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাবিনা শরমিন বলেন, “আসলে আমাদের ছেলেদের কোনো হল নেই। তবে অস্থায়ী কিংবা স্থায়ীভাবে হোক আমরা হল উদ্ধার, বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার ব্যবস্থা, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে হল নির্মাণ ইত্যাদি যাবতীয় কাজ তদারকি করার জন্য তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।”
শিক্ষার্থীদের স্থায়ী ও অস্থায়ী আবাসন পরিকল্পনা এগিয়ে নিতেই এমন পদক্ষেপের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, “আমাদের জরুরি ভিত্তিতে এখন শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। সেজন্য দুটি বিষয় সামনে এসেছে। ভবন ভাড়া নিয়ে শিক্ষার্থী উঠানো, যা অস্থায়ী; আর দ্বিতীয়টি হলো হল নির্মাণ। এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির প্রয়োজন। এজন্যই তাকে দায়িত্বটা দেওয়া হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের দাবিটা দ্রুত পূরণ হবে।”
২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো আবাসিক হল ছিল না। তবে গত ২০২২ সালে ১ হাজার ২০০ ছাত্রীর আবাসন সম্বলিত একমাত্র বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল চালু করা হয়। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব শিক্ষার্থীকেই বাসা ভাড়া নিয়ে নিয়ে থাকতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে আবাসন সুবিধা নিয়ে আন্দোলন করলেও কার্যত আলোর মুখ দেখেননি তারা।