জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) পড়াশোনার পরিবেশ ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র ধ্বংস করে আবাসিক হলের পাশে অপরিকল্পিতভাবে অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
রোববার (১৭ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় এ দাবিতে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ সালাম-বরকত হলের শিক্ষার্থীরা। তবে উপাচার্য অসুস্থজনিত কারণে অফিসে না থাকায় উপাচার্যের একান্ত সচিব এ স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।
স্মারকলিপির সঙ্গে এ দাবির সমর্থনকারী শতাধিক শিক্ষার্থীর স্বাক্ষরও জমা দেন তারা। এর অনুলিপি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) বরাবরও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া আবাসিক হলের ঠিক পাশেই অ্যাকাডেমিক স্থাপনা করলে উভয়ই ভবিষ্যতে বহুমুখী সমস্যায় পড়বে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আবাসিক এলাকায় এ বহুতল ভবন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হলেও বসবাসরত স্টেকহোল্ডারদের কোনো ধরনের মতামত নেওয়া হয়নি।
এ পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ও আবাসিক সুবিধাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতি করবে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। আবাসিক হলের নিকটবর্তী লেকে আসা অতিথি পাখি ও সবুজায়ন হারাবে তার চিরচেনা রূপ।
এতে আরও বলা হয়, পরিকল্পনাবিহীন আবাসিক এলাকায় একটি ছয়তলা বিশিষ্ট ভবন স্থাপিত হলে সম্পূর্ণভাবে শহিদ সালাম বরকত হল ও পাশে থাকা শিক্ষক কোয়ার্টার তার স্বাভাবিক পরিবেশ হারাবে। অন্যদিকে, এ হলের সামনেই তৈরি হচ্ছে একটি খেলার মাঠ। এত বড় জনসমাগম শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশে মারাত্মক ক্ষতি করবে।
হলের শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে গড়ে ওঠা খাবার ও বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দোকানগুলো ইতোমধ্যেই শিক্ষার্থীদের প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। জনসমাগম বাড়লে এ সমস্যা আরও প্রকট হবে। এখানে গড়ে উঠবে দ্বিতীয় বটতলা। বহিরাগত মানুষের জনসমাগমের কেন্দ্রও হবে এলাকাটি।
স্মারকলিপিতে হলের শিক্ষার্থীরা দুটি দাবি জানিয়েছেন। সেগুলো হলো- মাস্টারপ্লানবিহীন কোনোভাবেই একটি আবাসিক হল ও শিক্ষক কোয়ার্টার সংলগ্ন এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে কোনো ভবন নির্মাণ করা যাবে না এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ সময় শিক্ষার্থীদের দেওয়া স্মারকলিপি উপাচার্য বরাবর পৌঁছে দিবেন বলে নিশ্চিত করেছেন একান্ত সচিব মঞ্জুরুল আলম।
গত প্রশাসনের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম-বরকত হল ও লেক সংলগ্ন স্থানে চারুকলা বিভাগের ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। নির্মাণ কাজ শুরুর পূর্ব থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অংশীজনরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। এছাড়া আবাসিক হলের পাশে অ্যাকাডেমিক ভবনের কাজ শুরুর পূর্বে হলের তাদের মতামত নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন হলটির শিক্ষার্থীরা।
নির্মাণকাজ শুরুর পূর্বে হলের শিক্ষার্থীদের মতামত না নেওয়ার বিষয়ে জানতে প্রকল্প পরিচালক ও চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজউদ্দিনের সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।