কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীদের এক সময়ের পরিচিত ও প্রিয় স্থান ছিল বাবুই চত্বর ও সানসেট ভ্যালি। ক্যাম্পাসে সময় কাটানোর জন্য এ দুটি স্থানকে শিক্ষার্থীরা বেশ উপভোগ করতেন।
গান, কথা আর আড্ডায় মেতে উঠত চত্বর দুটি। সবসময় শিক্ষার্থীদের ভীড় লেগেই থাকত। অথচ বাবুই চত্বর আর সানসেট ভ্যালির আজ কোনো অস্তিত্ব নেই। সাবেক শিক্ষার্থীদের স্মৃতিতেই কেবল চত্বর দুটি বেঁচে আছে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়তো বাবুই চত্বর। এ চত্বরটি বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নাহিদা বেগম ও বিভাগের শিক্ষার্থীরা মিলে তৈরি করেন। তৈরির সঙ্গে সঙ্গে চত্বরটি গানে, কবিতায়, চায়ের আড্ডায় সবসময় সরগরম থাকতো। গিটারের টুং টাং শব্দে আর সুরের মূর্ছনায় ব্যস্ত থাকতো চত্বরটি। কিন্তু আজ তার অস্তিত্ব সম্পূর্ণরূপে বিলীন।
চত্বরটি ব্যাপারে ড. নাহিদা বেগম বলেন, “পরিচর্যার অভাবে চত্বরটির অস্তিত্ব নেই। চত্বরটি পুনঃনির্মিত হলে ক্যাম্পাস অভ্যন্তরেই শিক্ষার্থীরা সুস্থধারার আড্ডা দেওয়ার সুযোগ পাবে। একসময় এ চত্বরটি মুখরিত ছিল উচ্ছ্বল তরুণ-তরুণীর কলহাস্যে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাবুই চত্বরের দোলনায় দোল খাওয়া ছবি শেয়ার করা ছিল ট্রেন্ড। সেই পরিবেশ আবার ফিরে আসবে এ প্রত্যাশা তো রাখতেই পারি।”
অন্যদিকে, পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি সানসেট ভ্যালি সূর্যাস্তের মতোই হারিয়ে গেছে। নবীন শিক্ষার্থীরা এখন তার নামও জানেন না। এক সময় যে স্থানে গান, কথায় আড্ডা জমতো আজ আর তার চিহ্নমাত্র নেই, যা প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ব্যথিত করে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাবুই চত্বর
সানসেট ভ্যালি নিয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের ১৩তম আবর্তনের শিক্ষার্থী অজয় চন্দ্র বর্মণ বলেন, “সময়ে স্রোতে কতকিছুই হারিয়ে যায় অযত্ন আর অবহেলায়। ঠিক তেমনি হারিয়ে গেছে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রচেষ্টায় বানানো নান্দনিক সানসেট ভ্যালি।”
তিনি বলেন, “তখন ২০১৮ সালের শেষ দিক, আমি বিভাগে নতুন এসেছিলাম। এসে দেখলাম বিভাগের সিনিয়র ভাইবোনেরা বিজ্ঞান অনুষদের পাদদেশে নতুন চত্বর বানাচ্ছে। তারপর আমাদের সবার টানা কয়েকদিনের পরিশ্রমে তৈরি হলো সানসেট ভ্যালি। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বিকালে আড্ডা ও গানের আসর বসতো সেখানে। এভাবেই পশ্চিমের রক্তিম সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে সন্ধ্যা উপভোগ করতো সবাই। পুরো ক্যাম্পাসে সানসেট ভ্যালি হয়ে উঠেছিল সবার প্রিয় জায়গা।”
স্যানসেট ভ্যালির সংরক্ষণ নিয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী বলেন, “দীর্ঘ সময় এবং আবহাওয়ার প্রভাবে স্যানসেট ভ্যালি হারিয়ে গেছে। স্যানসেট ভ্যালি থেকে সূর্যাস্ত দেখলে মন জুড়িয়ে যেত। শিক্ষার্থীরা ওই সময়টা খুব উপভোগ করতো। শিক্ষার্থীরা উদ্যোগ নিয়ে কিছু ফান্ড সংগ্রহ করলে বিভাগ থেকেও আমরা কিছু ফান্ড দিব। সানসেট ভ্যালি আবারও তার চিরচেনা রূপে ফিরে আসুক।”
চত্বরগুলোর পুনরায় স্থাপনের ব্যাপারে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা কার্যালয়ের পরিচালক ড. মো. আব্দুল্লাহ আল মাহবুব বলেন, “পুরো ক্যাম্পাস নিয়ে আমাদের ভিন্নধর্মী পরিকল্পনা আছে। শিক্ষার্থীদের সুস্থ ও স্বাভাবিক গল্প, আড্ডা দিতে এবং অবসর সময়কে আনন্দময়ভাবে কাটাতে এ চত্বরগুলোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমি এ ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।”