ক্যাম্পাস

আরবিতে গুরুত্ব দিয়ে চবিতে উপ-ইউনিটের সিদ্ধান্ত, আপত্তি শিক্ষার্থীদের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) আরবি সাহিত্য এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ নিয়ে ‘বি-২’ নামে নতুন একটি উপ-ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে বলে জানা গেছে। তবে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত মানছেন না বিভাগগুলোতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, “আরবি সাহিত্য এবং ইসলামিক স্টাডিজ কলা অনুষদভুক্ত ‘বি’ ইউনিটের দুটো বিভাগ। নতুন উপ-ইউনিট করা হলে বিভাগ দুটি অনুষদের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে মূল্যহীন হয়ে পড়বে। কলেজ পর্যায়ের এবং আরবিতে দূর্বল কোনো শিক্ষার্থী এ বিভাগগুলোতে পড়ার সুযোগ পাবে না। তাই, প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত মানা সম্ভব না।”

এ বিষয়ে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, “যেখানে ঢাবি, রাবিসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ ‘বি’ ইউনিটে অন্তর্ভুক্ত। সেখানে চবিতে উপ-ইউনিট কেনো হবে? এমনিতেই এ বিভাগগুলোকে ছোট করে দেখা হয়, তার উপর উপ-ইউনিট করা হলে আরও ছোট করে দেখা হবে। চাকরির বাজারে বিভাগগুলোর মূল্য কম, এখন আরও কমে যাবে। আমরা কোনো উপ-ইউনিট মানবো না। ‘বি’ ইউনিটের হয়েই এ সব বিভাগ পরিচালিত হবে।”

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক ও চবির ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী বলেন, “যে উদ্দেশ্যে আলাদা উপ-ইউনিট করা হচ্ছে, সেটা না করলেও হয়। এ সব বিভাগে প্রায় ৯৭ শতাংশ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়া হয়। দু’চারজন কলেজ শিক্ষার্থীকে সুযোগ না দিলে তো ভারসাম্য হচ্ছে না। তাই, আলাদা উপ-ইউনিট না করে ‘বি’ ইউনিটের অধীনেই থাকুক।”

২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আরবি সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তানভীর আহমেদ বলেন, “আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ দুটিকে কলা অনুষদের মূলধারা থেকে বের করে ‘বি-২’ নামে উপ-ইউনিট করার অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।”

তার স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, “ঢাবি ও রাবিতে এ দুই বিষয় কলা অনুষদের প্রথম সারির বিষয় বলে বিবেচিত হলেও চবিতে কেনো এ মূলধারা থেকে বের করে উপ-ইউনিট করা হবে? চবি প্রশাসনের কাছে এর যৌক্তিক জবাব চাই। আরবি বিভাগ চবিতে বিদ্যমান ইংরেজি, বাংলা, ফার্সি, পালি, ও সংস্কৃত বিভাগগুলোর মতো একটি ভাষা ও সাহিত্যের বিভাগ। এ বিভাগ দুটি নিয়ে আলাদা উপ-ইউনিট করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, তা বিভাগাধীন হাজার হাজার শিক্ষার্থীর আশা-আকাঙ্ক্ষার বিপরীত সিদ্ধান্ত। আমার মতো বিভাগদ্বয়ে অধ্যয়নরত শতশত শিক্ষার্থীর সঙ্গে একপ্রকার হঠকারিতাও।” তিনি আরও বলেন, “ঢাবি ও রাবিতে কলেজ ব্যাকগ্রাউন্ডের শিক্ষার্থীরাও এ সব বিভাগে ভর্তি হয়ে পাণ্ডিত্য অর্জনের পাশাপাশি ভালো সিজিপিএ নিয়ে বের হচ্ছেন। কিন্তু চবিতে আমরা সম্পূর্ণ এর বিপরীত চিত্র প্রত্যক্ষ করছি। ঢাবি ও রাবিতে কলেজ ব্যাকগ্রাউন্ড ও আরবিতে দুর্বল ছাত্ররা যদি ভালো করেন, তাহলে চবিতে কেনো পারেন না? শিক্ষকরা কি তাদের অ্যাকাডেমিক উন্নয়নে শ্রম দিতে ব্যর্থ বা পারছেন না? তারা কি সরকার থেকে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন না?”

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, “আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ নিয়ে ‘বি-২’ নামে নতুন উপ-ইউনিট গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিভাগগুলোতে আলাদা ভর্তি পরীক্ষা হবে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা জানানো হবে।”

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “অনেক শিক্ষার্থী আরবিতে দূর্বল থাকে। অনেকে আবার ভালো করে পড়তেও জানে না। তাই বিভাগগুলোকে মানসম্মত করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

এদিকে ‘বি-২’ নামের উপ-ইউনিটের সিদ্ধান্তের বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন আরবি সাহিত্য বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নেয়ামত উল্লাহ। তিনি বলেন, “সিদ্ধান্ত হলে বিষয়টি ইতিবাচক। ভর্তি পরীক্ষায় আরবি না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী এ সব বিভাগের জন্য উপযুক্ত নন। ফলে অ্যাকাডেমিক যোগ্যতার অভাবে তারা যোগ্য গ্রাজুয়েট হিসেবে তৈরি হতে পারছেন না।”

তিনি আরও বলেন, “২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ উপ-ইউনিট হিসেবেই ছিল। পরবর্তীতে আমরা পুনরায় উপ-ইউনিট করার দাবি জানিয়েছিলাম। ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানের পাশাপাশি আরবি যুক্ত হবে। ফলে এ সব বিভাগে যোগ্য শিক্ষার্থীরা আসায় অ্যাকাডেমিক মান বজায় থাকবে।”