ক্যাম্পাস

অভিজিতের মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে: ন্যাশনাল মেডিকেল

ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর নিয়ে সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে বিভ্রান্তিকর ও উস্কানিমূলক তথ্য ছড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইন্সটিটিউট হাসপাতাল ও কলেজের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. ইফফাত আরা এ দাবি করেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “এ মৃত্যুর ঘটনায় গত ২০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা মোল্লা কলেজের শিক্ষক এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের উপস্থিতিতে ছাত্ররা নয়টি বিষয় উত্থাপন করেন। ন্যাশনাল মেডিকেল কর্তৃপক্ষ বিশদ আলোচনা ও ব্যাখ্যা প্রদান করলে তারা সন্তুষ্ট হয়েই সভা কক্ষ ত্যাগ করেন। কিন্তু এ আলোচনার সঠিক তথ্য সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে উপস্থাপন না করে বিভ্রান্তিকর ও উস্কানিমূলক তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, “পরবর্তীতে ২১ তারিখ দ্বিতীয় দফায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধি এবং অভিভাবক প্রতিনিধিদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আলোচনা হয়। তখন উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে আলোচনার জন্য প্রতিনিধি দেওয়ার অনুরোধ করা হলে আফতাব আহমেদসহ উপস্থিত শিক্ষার্থীদের সম্মতিক্রমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অভিজিতের স্থানীয় অভিভাবক, কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে সর্বসম্মতিক্রমে পূর্ব গঠিত ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি পুনঃগঠনের সিদ্ধান্ত হয়।”

ডা. ইফফাত আরা বলেন, “মৃত্যুর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানের বিষয়টি যেহেতু একটি মেডিকেল ইস্যু এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সত্যতা যাচাই করা একজন ডাক্তারের পক্ষেই সম্ভব। সেজন্য তদন্ত কমিটিতে শিক্ষার্থীদের মনোনীত ডেঙ্গু বিশেষজ্ঞ চিকিৎয়ক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আফতাব আহমেদ ৩ ঘণ্টার মধ্যে নাম দিবেন বলে জানালেও তিনি এখন পর্যন্ত কোনো ডাক্তারের নাম সুপারিশ করেননি।”

ডা. ইফফাত আরা আরও বলেন, “প্রায় ৩ ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা শেষে ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটির পূর্ণাঙ্গতা নিশ্চিত করে অভিজিতের চিকিৎসায় কোনো ধরনের গাফিলতি বা অবহেলা ছিল কিনা, এ ব্যাপারে দ্রুত অনুসন্ধান করে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এ সিদ্ধান্তে অভিজিতের পরিবার ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরাও এক মত হয়ে সভা কক্ষ ত্যাগ করেন।”

হাসপাতাল পরিচালক বলেন, “কতিপয় ছাত্র প্রতিনিধি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার ফলাফল কোমলমতি সাধারণ ছাত্রদের মাঝে প্রচার করেনি। বরং অসৎ উদ্দেশ্যে অসত্য ও উস্কানিমূলক তথ্য প্রদান করে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্ট করে এবং রোগী সেবায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে “

তিনি বলেন, “মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিভিন্ন কলেজের দেড় হাজার শিক্ষার্থী হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয়, বহিঃবিভাগ, জরুরি বিভাগ, দন্ত বিভাগ ও প্যাথলজি বিভাগে ব্যাপক ভাংচুর করে। এছাড়া ক্যাশ কাউন্টারে ভাংচুর করে নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। হাসপাতালের অভ্যন্তরে দেশি-বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী, সাধারণ রোগী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর্থিক সেবায় নিয়োজিত পূবালী ব্যাংকের শাখাতেও ব্যাপক ভাংচুর করে। তাদের এ বর্বরোচিত হামলায় শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।”

ছাত্র প্রতিনিধিদের অসহযোগিতার কারণে তদন্ত কাজ সম্পন্ন হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনোরূপ গাফিলতি বা সদিচ্ছার অভাব না থাকলেও ভুল চিকিৎসা বা বিলম্বিত ব্যবস্থা গ্রহণের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। হাসপাতালের রোগীর চিকিৎসা সেবার সুস্থ পরিবেশ বিনষ্ট করা, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জিম্মি করে হাসপাতাল ও কলেজ ভবনের ব্যাপক ভাংচুর করা, অসুস্থ্য রোগীদের মাঝে ভীতি সঞ্চার করার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।”

সংবাদ সম্মেলনে মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ড. শামসুর রহমান বলেন, “মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ কোনোভাবেই যুক্ত নয়। তারপরও কেনো কলেজে হামলা হলো, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এছাড়া তদন্তের জন্য কয়েকজন ডাক্তারকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।”

ভুল চিকিৎসায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিতের মৃত্যুর দাবির পর ১০ হাজার টাকা দিয়ে ধামাচাপার বিষয়টি অস্বীকার করেছে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইন্সটিটিউট হাসপাতাল। কর্তৃপক্ষ বলছে, “এ টাকাটা গ্রামের বাড়িতে লাশ পাঠানোর জন্য দিতে চাওয়া হয়েছিল।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ রেজাউল হক বলেন, “আপনারা হয়তো জানেন, অভিজিতের বাবা একজন কেয়ারটেকার। এটা আমরাও জানতাম। অভিজিতের মৃত্যুর সময় আইসিইউ বিল এসেছিল প্রায় ৩৬ হাজার টাকা। তারা বাবা এটা মওকুফের জন্য অনুরোধ করেন। হাসপাতালের বিল সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে পরবর্তীতে পরিশোধ করা হবে- এটি জানার পর রোগীর সম্পূর্ণ বিল স্থগিত করা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “সেদিন রাত ২-৩টা বেজে গিয়েছিল। অভিজিতের লাশ তার গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর পাঠানোর জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়ার জন্য ১০ হাজার প্রয়োজন ছিল। সেদিন সেটিও দিতে চাওয়া হয়। কিন্তু অভিজিতের বাবা আঞ্জুমান মফিদুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে। তাই পরে তিনি টাকাটা লাগবে না বলে আমাদের জানান।”