ক্যাম্পাস

ইসকন নিষিদ্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো উত্তাল

চট্টগ্রাম আদালতের সামনে গতকাল মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে চিন্ময় প্রভুর সমর্থকদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন। এরপর থেকেই ইসকন নিষিদ্ধ ও আইনজীবী হত্যার বিচার দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

গতকাল মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যার পর মধ্যরাত পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বুধবারও (২৭ নভেম্বর) থেমে নেই আন্দোলন। বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশসহ গায়েবানা জানাযা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এসব বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তাদের ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার’, ‘শহীদের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘১,২,৩,৪ ইসকন তুই বাংলা ছাড়’, ‘ভারতীয় দালালরা, হুশিয়ার সাবধান’, ‘ইসকন এর গালে জুতা মার তালে তালে’, ‘উগ্রবাদী হিন্দু হুশিয়ার সাবধান’, ‘একটা একটা ইসকন ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’, ‘ইসকনের পিঠের চামড়া তুলে নিবো আমরা’, ‘মোদির দুই গালে জুতা মার তালে তালে’, ‘ইসকনের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘চিন্ময়ের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘ইসকনের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘শাহবাগীদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘‍‍দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ‍’, ‘তুমি কে আমি কে, সাইফুল সাইফুল’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে থাকছে বিস্তারিত।

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি)

বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১১টায় সনাতন ধর্মবিশ্বাসী সংগঠন আন্তর্জাতিক শ্রীকৃষ্ণ ভাবনামৃত সংঘকে (ইসকন) নিষিদ্ধ ও আইনজীবী হত্যার বিচার দাবিতে পাবিপ্রবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বিক্ষোভ মিছিলটি শহীদ মিনার থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এরপর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ঢাকা-পাবনা মহাসড়ক অবরোধ করে মাহাতাব টাওয়ার পর্যন্ত গিয়ে আবার ক্যাম্পাস ফটকে এসে কিছু সময় অবস্থান করে শহীদ মিনারে যান। সেখানে আইনজীবী সাইফুল হক আরিফের গায়েবানা জানাযা করেন তারা।

মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী মেরাজ হোসেন বলেন, “উগ্রবাদী হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকনকে বিরুদ্ধে সবাইকে এক হতে হবে। তাদের সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। দেশে যে বিপ্লব হয়েছে, সেটা যেন প্রতিবিপ্লবে রুপ না নেয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।”

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)

বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও গোল চত্বরে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুব আলম বলেন, “ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম মানবতার ধর্ম। গতকাল আমরা দেখেছি জঙ্গি সংগঠন ইসকন কীভাবে আমাদের ভাইকে নৃসংশভাবে হত্যা করেছে। আজ আমরা তার প্রতিবাদে এখানে দাঁড়িয়েছি। তারা ভুলে গেছে এ দেশ মুসলমানদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। এ দেশে যদি কোনো উগ্র ও জঙ্গি সংগঠন আস্তানা গড়তে চায়, তাহলে তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করা হবে।”

আইসিটি বিভাগের শিক্ষার্থী দীন ইসলাম হৃদয় বলেন, “আমরা বলি হিন্দু ভাই, হিন্দু বন্ধু। কিন্তু ওরা কখনো আমাদের ভাই বা বন্ধু হিসেবে নিতে পারেনি। আমরা যতবারই তাদের বুকে টেনে নিয়েছি, ততবারই তারা বুকে লাথি মেরেছে। আমরা ওদের মন্দির পাহারা দিয়েছি। কিন্তু ওরা আমাদের মসজিদ ভেঙেছে। ওরা এভাবেই আমাদের প্রতিদান দিয়েছে। কোনো মুসলিম অপরাধ করলে আমরা ধর্ম দেখি না, তার প্রতি কোনো সহানুভূতি দেখাই না। কিন্তু হিন্দু ধর্মের কেউ অপরাধ করলে, তারা কথা বলে না।”

এর আগে, মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয়ে মূল ফটকে এসে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। সেখানে তারা বাংলাদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধ ঘোষণাসহ আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)

বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-১ এর গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে পরবর্তীতে প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় বক্তারা বলেন, “দেশকে অস্থিতিশীল করার একটি চক্রান্ত চলছে, স্বৈরাচারী দোসররা ইসকনকে ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশকে অস্থিতিশীল করছে। আমরা ছাত্র-সমাজ এদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবো। ছাত্র-সমাজ এর আগে ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রক্ত দিয়েছে, প্রয়োজন হলে আমরা আবারো রক্ত দেব। ইসকনকে জঙ্গি সংগঠন আখ্যায়িত করে এর নিষিদ্ধের দাবি জানাচ্ছি।”

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত ১০ টায় শাহপরাণ হলের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গোল চত্বর প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে অবস্থান করেন শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।

মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা বলেন, “সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকন একজন আইনজীবীকে পিটিয়ে হত্যা করার মাধ্যমে তারা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভুমিকায় আবিষ্ট হয়েছে। কিছুদিন আগেও ইসকন সদস্যরা সন্ত্রাসী কায়দায় একজন পুলিশ সদস্যের উপর এসিড নিক্ষেপ করেছে। আমরা দেখে আসছি ইসকন নেতা ফ্যাসিস্ট হাসিনার তোষামোদি করে তাদের পুনর্বাসন করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”

ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী দেলোয়ার হোসেন শিশির বলেন, “আমরা সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পক্ষে। কিন্তু ভারতের প্রেসক্রিপশনে যদি এ সম্প্রীতি ধ্বংসের পরিকল্পনা করা হয়, তাহলে এ দেশের আপামর জনতা দাঁতভাঙা জবাব দেবে।”

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাতে ১০টায় জবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্ত চত্বর থেকে মিছিল নিয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে এসে একত্রিত হয়।

সেখানে জবি হিউম্যান রাইটস সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ মাসুদ বলেন, “আমাদের দেশ এবং অন্তর্বর্তী সরকার একটি প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চারিদিক থেকে পতিত স্বৈরাচারের দোসরেরা ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যেকোনো ধরনের ধর্মীয় দাঙ্গা আমাদের সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করতে হবে। দেশে শান্তিপূর্ণ ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ গণমানুষের অধিকার।”

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুম বলেন, “পাবলিক প্রসিকিউটরকে কুপিয়ে হত্যার দ্রুত বিচার করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে এ সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। অখন্ড ভারত তত্ত্বকে নিয়ে তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে আইএস, জেএমবি যেমন নিষিদ্ধ, তেমনইভাবে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।”

এদিকে, বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে গায়েবানা জানাযা আদায় করেন জবি শিক্ষার্থীরা। জানাজ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে ভাস্কর্য চত্বরে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মশিয়ূর রহমান হল ও মুন্সি মেহেরুল্লাহ হলের শিক্ষার্থীরা হল গেট থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকের সামনে সমাবেশ করেন।

বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, “উগ্রবাদী জঙ্গী সংগঠন ইসকনের সদস্যরা যোগ্যতাসম্পন্ন একজন দেশপ্রেমিক আইনজীবীকে হত্যা করেছে। জুলাই বিপ্লবের পর দেশ স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু এই ফ্যাসিস্টের দোসররা দেশকে অস্থিতিশীল করতে তৎপর। বাংলাদেশের ছাত্র-সমাজ ও শিক্ষিত-সমাজ থাকতে আমরা এ ফ্যাসিবাদকে কোনোভাবেই ঠাঁই দেব না। আমাদের এ আন্দোলন কোনো হিন্দু ভাইদের বিরুদ্ধে নয়, এ আন্দোলন সব উগ্রবাদের বিরুদ্ধে।”

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, “বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ। আমরা সবাই মিলেমিশে থাকি। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশের লোকজন তা পছন্দ হয় না। তারা সবসময় আমাদের দেশে দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টায় থাকে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এ ঘটনায় জড়িতদের ফাঁসি চাই।”

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি নিয়ে তারা ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে শহিদ মিনারে এসে সমাবেশে মিলিত হন।

সমাবেশে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী শোয়াইব হাসান বলেন, “চট্টগামের আদালত প্রাঙ্গণে হত্যার ঘটনা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি এক ধরনের ঔদ্ধত্য প্রকাশ। আমরা এ ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে আজ এখানে দাঁড়িয়েছি। পতিত স্বৈরাচার আমাদের সাম্প্রদায়িক বিরোধ তৈরি করতে চায়। আমরা দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ি, এটা তারা চায়। কিন্তু এদেশের বিবেকবান মানুষরা কোনো ফ্যাসিবাদের ফাঁদে পা দেবে না।”

এ সময় বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ সাদ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আনজুম, মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান শাহরিয়ার, তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু প্রমুখ বক্তব্য দেন।

এদিকে, বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর ২টায় শহীদ মিনারে আধিপত্যবাদ বিরোধী মঞ্চ গায়েবানা জানাযার আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন বিভাগের অর্ধশতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া বিকেলে আসরের নামাজের পর কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখা। পরে মুখে লাল কাপড় বেঁধে কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে একটি শোক মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার পর্যন্ত যান শিক্ষার্থীরা।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবির, আধিপত্যবাদবিরোধী মঞ্চ, গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনসহ বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)

চট্টগ্রামে ইসকন সদস্য কর্তৃক এক আইনজীবীকে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে জিয়া মোড়ে সমবেত হয়ে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ইবি শিক্ষার্থীরা। মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাস সংলগ্ন শেখপাড়া বাজার ঘুরে প্রধান ফটকের সামনে এসে তারা সমাবেশে মিলিত হন।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, “২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ছাত্র-জনতা কাঁধে কাঁধ রেখে আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি। এ দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় রাখতে নিরাপদে হিন্দুরা যেন পূজা পালন করতে পারে, সেজন্য আমরা দিনরাত মন্দির পাহারা দিয়েছি। কিন্তু হিন্দুদের ব্যবহার করে কুচক্রী মহল ইসকন বারবার দেশকে অস্থিতিশীলতা করতে চাচ্ছে।”

তারা বলেন, “এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে ইসকন নির্মমভাবে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অনতিবিলম্বে এ হীন কাজে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”

এদিকে, বুধবার (২৭ নভেম্বর) ইবির জিয়া মোড় থেকে শাখা ছাত্রশিবিরের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জমিয়তে তলাবায়ে আরাবিয়া ও ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

বিক্ষোভ মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটক হয়ে ক্যাম্পাস সংলগ্ন শেখপাড়া বাজার প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটকে এসে অবস্থান নেয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। এসময় শিক্ষার্থীরা ইসকন নিষিদ্ধের দাবি জানান।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (সিকৃবি)

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিচার ও ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসে মুল সড়ক হয়ে আবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।

মিছিল শেষে বক্তারা বলেন, “২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে আমাদের বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটি পক্ষ এখনো লেগেই আছে। ইসকন গণঅভ্যুত্থানের পক্ষে কোনো কথা বলেনি। অথচ স্বৈরাচারের পতনের পর আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নে লেগে পড়েছে। আমরা দেখেছি অভ্যুত্থান পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে দিয়ে মন্দির পাহারা দেয়া হয়েছিল। অথচ তারা আমাদের মসজিদ ভাঙচুর করল, আমাদের ভাইকে হত্যা করল। এ রক্তের বিনিময়ে হলেও ইসকনকে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে‌। আমাদের আন্দোলন সনাতনী ভাইদের বিরুদ্ধে নয়, আন্দোলন জঙ্গি সংগঠন ইসকনের বিরুদ্ধে।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)

বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট এলাকায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের গায়েবানা জানাযার আয়োজন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর আগে, মঙ্গলবার রাতে তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।

জানাজার নামাজের পূর্বে চবি যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.শহিদুল হক বলেন, “বাংলাদেশ হচ্ছে ধর্মীয় সম্প্রীতির দেশ। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান সবাই সমান। কিন্তু আমাদের এ সম্প্রীতি নষ্ট করার জন্য গভীর চক্রান্ত হচ্ছে। গতকাল চট্টগ্রাম জেলা আদালতের আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে উগ্র জঙ্গী সংগঠন ইসকনের সদস্যরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমরা হিন্দু বা খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে নই। আমরা ইসকন জঙ্গীদের বিরুদ্ধে। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে আজকের মধ্যে গ্রেফতার করে কঠিন বিচারের দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে সবাইকে  আমাদের দেশকে নিয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হক বলেন, “বাংলাদেশে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও অনেক কিছু থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছে। বিপরীতে সংখ্যালঘুরা সুবিধা ভোগ করেছে। মাইনরিটি হিসেবে আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের নিরাপত্তার দেব। কিন্তু তারা দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে, অখণ্ড ভারত বানাতে চাইবে, তা কখনও হতে দেওয়া হবে না। আমি শহীদ সাইফুল ইসলাম আলিফের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।”

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) 

বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে নিহত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামের গায়েবানা জানাযা শেষে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি প্রধান ফটক থেকে শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মহাসড়ক, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়।

এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করে বলেন, “বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার একটা পাঁয়তারা করছে ইসকন। ইসকনকে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তবেই বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পাবে। আমরা কখনো বিভাজন করতে চাই না। কিন্তু ইসকন দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।”

গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)

বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সপোর্ট চত্বরে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের গায়েবানা জানাযা পড়েছেন গবি শিক্ষার্থীরা। এরপর সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন ও বাদামতলা হয়ে প্রধান ফটকে এসে সমাবেশ করেন তারা।

এ সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা দেশের মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সকল ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন তুলে ধরে ইসকনের ঘৃণিত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের মাটিতে ইসকনের সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।

গবির মেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান বলেন, “সন্ত্রাসী সংগঠন ইসকনের সদস্যরা দিন-দুপুরে আদালত প্রাঙ্গণে আমাদের ভাইকে হত্যা করেছে। যখন সবাই দেশ সংস্কারের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন, তখন ফ্যাসিস্ট হাসিনা ভারতের সঙ্গে আঁতাত করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে। ছাত্র-জনতা ও দেশের প্রতিটি নাগরিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সব ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করবো। তারা উস্কানি দিচ্ছে, কিন্তু আমরা আগুনে ঘি ঢালবো না।”

ইসকনের সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. আবু রায়হান বলেন, “ইসকন এখন তাদের উদ্দেশ্য থেকে বাইরে চলে গেছে। তারা এখন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ দেশের সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ সহাবস্থানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করায় বিশ্বাসী।”

তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ এবং ২৪-এর বিপ্লবের পরে মানুষ শান্তি ও শৃঙ্খলার মধ্যে থাকতে চেয়েছে। কিন্তু সংগঠনটির কর্মকাণ্ড এই সম্ভাবনাকে নষ্ট করছে। তারা সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের মিথ্যা ন্যারেটিভ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় এ সংগঠনের সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার দাবি জানাচ্ছি।”

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় ইসকন সমর্থকদের হামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন। এ হামলায় আহত আরও ৭-৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গত সোমবার (২৬ নভেম্বর) ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা চিম্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার করে।