আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সিনিয়রদের সঙ্গে জুনিয়র শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক নারীসহ বিভাগের তিন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেট সংলগ্ন রাস্তায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে ঘটনাস্থলে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
দর্শন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিভাগটির ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের কিছু নারী শিক্ষার্থী ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের নবীনদের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার জন্য বসেন। এতে তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল, আবিদ, সাজিদ, রোহানসহ কয়েকজন অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে হুমকি দেন।
পরে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিষয়টি বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের জানালে তারা মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা ব্যর্থ হলে গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) শিক্ষকদের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসা হয়।
তবে এ মীমাংসার রায় ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পছন্দ না হওয়ায় বুধবার (২৭ নভেম্বর) পুনরায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন বিভাগটির শিক্ষকরা। এ সময় শিক্ষকদের সামনেই সিনিয়র শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে থাকে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।
পরিস্থিতি শান্ত করতে বিষয়টি অমীমাংসিত রেখেই বিভাগ থেকে সবাইকে বের হতে বলেন শিক্ষকরা। বিভাগ থেকে বের হয়ে কিছু সময় পর শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়ায়। এতে অন্তত তিনজন শিক্ষার্থী আহত হন বলে জানা গেছে।
বিভাগের শিক্ষার্থী আবির বলেন, “২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। পরে বিভাগের শিক্ষকরা বিষয়টি সমাধান করলেও তাতে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হতে পারেননি। আজ আবার বিভাগে বসা হলে শিক্ষকদের সামনেই জুনিয়ররা সিনিয়রদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার শুরু করেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে শিক্ষকরা আমাদের বাইরে যেতে বলেন।”
তিনি বলেন, “কিছুক্ষণ পর বিভাগীয় প্রধান আমাদের বিভাগে আসতে বলেন। ওই সময় ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের রাসেল, রোহান, আসিফ, সাজিদ, আবিদ এবং ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের মোস্তাফিজ, নীরব, ফাহাদ, লাবিব ও নিশাত অতর্কিত হামলা চালান।”
আরেক শিক্ষার্থী ইবনাত বলেন, “আমরা ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সিনিয়ররা আমাদের মারতে আসেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।”
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, “২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের রোহান, আসিফ, সাজিদ, আবিদের বিরুদ্ধে পূর্বে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন কিছু শিক্ষার্থী এবং বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে তারা বিভাগে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছেন।”
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের রাসেল অন্য শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মী দাবি করে বলেন, “পারভেজ, শান্ত, প্রান্তসহ অনেকেই আমাকে নানাভাবে হয়রানি করেন এবং মারধরের হুমকি দেন। হলের রুম থেকেও বের করে দেন। গত ৫ আগস্টের পর তারা আবারো সক্রিয় হয়ে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার বিরুদ্ধে মতবিরোধ পোষণ করতে থাকেন।”
তিনি বলেন, “আজ আমাদের সব ব্যাচের মতবিনিময় ছিল। যেখানে তারা আমাদের আক্রমণ করতে আসে। এরপর ১ নম্বর গেটের দিকে যাওয়ার সময় তারা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা করেন।”
এ বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান তারিকুল বলেন, “রাসেল তিনজন মেয়েকে গালিগালাজ করে। এ বিষয়টি তারা সিনিয়রদের জানানোর পর সমাধান না হওয়ায় আমরা সব ব্যাচ নিয়ে বসেছিলাম। সেখানে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে শিক্ষার্থীদের বিভাগ থেকে চলে যেতে বলা হয়। কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীদের আবারো বিভাগে আসতে বললে হঠাৎ সংঘর্ষের খবর পাই।”
এ সংঘর্ষের ঘটনায় বিভাগের শিক্ষার্থীরা ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমান জানান, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিবে।