ক্যাম্পাস

৩৮ দিন ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) বিভাগের নাম ও ডিগ্রি পরিবর্তনের দাবিতে গত ৩৮ দিন ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করছেন এগ্রো প্রসেস অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

গত ২১ অক্টোবর শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইকেল মধুসূদন দত্ত কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে মানববন্ধন করে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন।

এদিকে, গত ২৩ নভেম্বর ক্লাস বর্জনের ঘটনায় ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস। তবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেনি।

চাপের মুখে পদত্যাগের উদ্ভূত পরিস্থিতিকে কতিপয় শিক্ষার্থীর অসদাচরণের ঘটনা উল্লেখ করে পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি (ইএসটি) বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কে. এম. দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফলিত বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে উক্ত ডিনের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শুরু থেকেই তাদের বিভাগের নাম ও ডিগ্রি ছিলো এগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি। এটা পরিবর্তন করে এগ্রো প্রসেস অ্যান্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং করা হয়। তারা নাম ও ডিগ্রি সংশোধনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লিখিত দাবি জানিয়ে আসছেন। এ দাবির পর মাস পেরিয়ে গেলেও সমাধানের মুখ দেখেনি। তাদের দাবির বিষয়ে জানতে গত ২৩ নভেম্বর বিভাগের চেয়ারম্যানের কাছে গেলে তিনি সন্তোষজনক কোনো জবাব দিতে পারেননি। 

শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ২৩ নভেম্বর চেয়ারম্যান স্যারের কাছে গিয়ে আমরা বিভাগের নাম ও ডিগ্রি পরিবর্তনের স্থায়ী সমাধান না হওয়া, শিক্ষার্থীদের চাকরি জীবনের সমস্যা ও বিভাগের সার্বিক বিষয়ে তার ভূমিকা জানতে চাই। কিন্তু, তিনি আমাদের সঙ্গে বরাবরের মতো অসদাচরণ করেন এবং সব বিষয়ে উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। ওই সময় আমাদের একজন শিক্ষক চেয়ারম্যান স্যারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘যেহেতু শিক্ষার্থীদের অনাস্থা আপনার প্রতি। তাহলে আপনি পদত্যাগ করুন।” পরবর্তীতে তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ডিগ্রি ও বিভাগের এমন জটিলতার কারণে আমরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছি। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একবারের জন্যেও আমাদের পরিপূর্ণভাবে আশ্বস্ত করতে পারেনি। এ সমস্যাগুলো কর্মক্ষেত্রে আমাদের অসুবিধা তৈরি করছে। সিলেবাস ফুড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও নামের কারণে কর্মক্ষেত্রে আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি।

এ বিষয়ে বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, “বিভাগের নাম ও ডিগ্রি পরিবর্তন নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ডিন ও কয়েকজন শিক্ষকদের নিয়ে অনুষদীয় নির্বাহী কমিটি আলোচনায় বসি। সেখানে আমরা ছাত্রদের দাবির পক্ষে সুপারিশ করি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ডিন একমত পোষণ করেন এবং ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। পরে উপাচার্যের পরামর্শে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়।”

তিনি আরও বলেন, “ওই কমিটির সভায় বিশেষ অনুমতিক্রমে ছাত্ররাও তাদের মতামত উপস্থাপন করেন। কয়েকদিন পর ছাত্ররা ওই সভার সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার কাছে জানতে চায়। কিন্তু, সেটা এখতিয়ার বহির্ভূত হওয়ায় আমি তা বলতে অপারগতা প্রকাশ করি। এর বিপরীতে ছাত্ররা আমাকে ১০ মিনিটের ভেতরে তা প্রকাশ করার কঠোর দাবি জানাতে থাকে। অন্যথায় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। ফলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।”

ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বলেন, “যেহেতু ছাত্ররা আমাকে চায় না, তাই আমি শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছি। পদত্যাগপত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করেছি।’’

ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. শিরিন নিগার বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আমরা একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছিলাম। পরে উপাচার্য স্যারের নির্দেশে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে সুপারিশ করেছেন। এরপরও বিভাগের চেয়ারম্যানের রুমে গিয়ে প্রায় ৭০-৮০ জন শিক্ষার্থী মাইক নিয়ে উচ্চস্বরে চেঁচামেচি করে তার পদত্যাগের দাবি তোলে।”

তিনি বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক, যার অবসর নিতে ৩ বছর ২ মাস বাকি; শিক্ষার্থীদের কারণে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। আমি মনে করি, শিক্ষকদের প্রতি শিক্ষার্থীদের এমন আচরণ কাম্য নয়। আমাদের কোনো ভুল বা ত্রুটি থাকলেও এটি শিক্ষার্থীদের মবের শিকার হওয়ার যৌক্তিকতা দেয় না। শিক্ষার্থীরা কখনোই শিক্ষকদের প্রতিপক্ষ হতে পারে না।”

তিনি আরও বলেন, “এ ঘটনার পর আমরা শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। কিন্তু, আমাদের নিরাপত্তার প্রশ্নে প্রশাসন থেকে আমরা কোনো আশ্বাস পাইনি। আমরা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা চাই। যদি একটি ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হয়, তবে তা পুরো শিক্ষাব্যবস্থার জন্য অশনি সংকেত। এ বিষয়ে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।”

শিক্ষকদের নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. আমজাদ হোসেন বলেন, “ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের কোনো শিক্ষকের নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ বা নিরাপত্তা চেয়ে কোনো আবেদন আমার কাছে আসেনি।”

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে কাজ চলছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ইউজিসিতে পাঠাবো। ইউজিসি থেকে অনুমোদন পেলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।”

তিনি বলেন, “যেসব শিক্ষার্থী স্নাতক সম্পন্ন করেছে, চাকরি ক্ষেত্রে তাদের সনদ নিয়ে কোনো সমস্যা যাতে না হয়, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে এসব সমস্যা সমাধানে সময়ের প্রয়োজন। এ জন্য আমি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।”

বিভাগের চেয়ারম্যানের পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ওই বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু, তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়নি।”