ক্যাম্পাস

এক দশকেও ক্ষতিপূরণ পায়নি ইবিতে নিহত শিক্ষার্থীর পরিবার

গত ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গাড়ি চাপায় নিহত হন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদুর রহমান টিটু। এ ঘটনার ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো ক্ষতিপূরণ বা বিচার পায়নি নিহতের পরিবার।

এছাড়া তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেওয়া তার পরিবারের সদস্যদের একজনকে যোগ্যতা অনুসারে চাকরি এবং তার নামে একটি ভবনের নামকরণের প্রতিশ্রুতি অধরাই রয়ে গেছে। এদিকে টিটুকে হারিয়ে তার পরিবার এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছে। 

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসির প্রেস কর্ণারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান নিহত টিটুর ছোটভাই তারেক আজিজ। এ সময় তার পরিবারের অন্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। 

সংবাদ সম্মেলনে টিটুর পরিবার জানান, এ ১০ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলেও তাদের পারিবারিক অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। টিটুর বাবা আব্দুল আজিজ পেশায় একজন কৃষক। বর্তমানে ওপেন হার্ট সার্জারি করার পর এখন তিনি কর্মক্ষমতা হারিয়েছে ফেলেছেন। তার ছোটভাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যয়নরত। বর্তমানে পরিবারটির হাল ধরার মতো কেউ নেই। গত ১০ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে বার বার যোগাযোগ করলে প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মেলেনি।

তার পরিবারের অভিযোগ, তারা বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় তৎকালীন প্রশাসন কোনো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেননি। বরং নানাভাবে হয়রানি করেছে। ২০১৬ সালে তার বোন আফরোজা আক্তার লাকিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে চুক্তি ভিত্তিক চাকরি দেয়। আট বছর পার হলেও তা স্থায়ী করা হয়নি। এদিকে ঘাতক চালক জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

নিহত টিটুর বাবা আব্দুল আজিজ বলেন, “আমার অনেক আশা ছিল ছেলে বড় হয়ে পরিবারের হাল ধরবে। কিন্তু আমার ছেলের মৃত্যুর ১০ বছর পার হলেও কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি। আমার পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা দেওয়া হয়নি। আমি চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করুক।”

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তিনটি দাবি উপত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো- অনতিবিলম্বে টিটুর বোনের চাকরির স্থায়ী করতে হবে, তার স্মৃতি রক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভবনের নামকরণ করতে হবে এবং তার পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে টিটু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবাহী ভাড়ায় চালিত ঝিনাইদহগামী বাসে ওঠার চেষ্টা করেন। এ সময় চালক হঠাৎ দ্রুত চালালে তিনি বাসে উঠতে ব্যর্থ হয়ে রোডে পড়ে যান। এ সময় পেছন থেকে ভাড়ায় চালিত অপর একটি বাস (সাগর পরিবহন) দ্রুতবেগে তার গলার উপর দিয়ে চলে যায়। এতে গলা ছিঁড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন টিটু।

এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাসসহ প্রায় ৪০টি বাস পুড়িয়ে দেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় চার মাস বন্ধ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও জানা গেছে, গাড়ি পোড়ানোর ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও ১ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করা হয়। তবে ঘাতক ড্রাইভার জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এই বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে তারা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আমার কাছে আসুক। আমি সবার কথা শুনবো এবং সবার অধিকার নিয়েই  কাজ করবো।”