নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার ৮ লাখ মানুষের জন্য বেশকিছু সুসংবাদ দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ।
শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে হাতিয়ার শিক্ষার্থীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ‘হাতিয়া ছাত্র ফোরাম, ঢাকা’ এর ১০ বছর পূর্তি উৎযাপন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসব সুসংবাদ দেন তিনি।
অবহেলিত দ্বীপ হাতিয়ার ৮ লাখ মানুষের জন্য সুখবর দিয়ে এ অঞ্চলের কৃতি সন্তান আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, “ইতোমধ্যে হাতিয়ার ৮ লাখ মানুষের জন্য ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল অনুমোদন হয়েছে। খুব শীঘ্রই হাতিয়া থেকে নোয়াখালীর মূল ভূখণ্ডে যাওয়ার নদী পথে ফেরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হাতিয়ার তমরদ্দী ইউনিয়নের বেকের বাজার থেকে সোনাদিয়া ইউনিয়নের হিল্টন রোড পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১১ কিলোমিটার সড়ক মেরামতের টেন্ডার পাস হয়েছে। অতি দ্রুতই সেটার কাজ শুরু হবে।”
তিনি বলেন, “খবির মিয়া থেকে দাসের হাট পর্যন্ত সড়কের টেন্ডার পাস হয়েছে। শীঘ্রই এটারও কাজ শুরু হবে। এছাড়া হাতিয়ার প্রধান সড়কের কাজ নিয়েও রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে বিভাগে কথাবার্তা চলছে। এ রকম তিনটিসহ মোট পাঁচটি সড়কের কাজ অতি শীঘ্রই শুরু হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এছাড়া হাতিয়ার মানুষের দুঃখ খ্যাত ‘নদীভাঙন’ রোধে প্রায় ১০ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে ব্লক বাঁধ দেওয়া হবে। প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার ব্লক নির্মাণের কাজ শুরু হবে আগামী বছরেই। এটা প্রাথমিকভাবে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত কাভার করবে।”
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর সমালোচনা করে মাসুদ বলেন, “যদি মাত্র তিনমাসে পাঁচটি রাস্তার কাজ হাতে নেওয়া যায়, তাহলে ভাবেন ১০ বছরে কী পরিমাণ কাজ করা যেত! অথচ প্রায় ১ যুগের বেশি সময় ধরে বেশ কয়েকটি সড়কের বেহাল দশা। যাতায়াত ব্যবস্থাসহ সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে সব সেক্টর ধ্বংস করা হয়েছে।”
দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে বঞ্চিত ও অবহেলিত এ অঞ্চলের মানুষের সুখ দুঃখ নিয়ে তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে হাতিয়ার মানুষ চরম অবহেলিত, নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত। নেতা আসে, নেতা যায়, কিন্তু এ অঞ্চলের ৮ লাখ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন নেই।”
তিনি হাতিয়ার মানুষদের দোষারোপ করে বলেন, “আপনারা একদিকে নিজেদের উন্নতি চান, অন্যদিকে নেতা নির্বাচন করার ক্ষেত্রে সমাজের সবচেয়ে খারাপ মানুষটাকেই নির্বাচিত করেন। আগামীর বাংলাদেশ হবে তারুণ্যের বাংলাদেশ। একটি সমাজের নেতা হবে ওই অঞ্চলের সবচেয়ে শিক্ষিত, মার্জিত ও সুন্দর চরিত্রের মানুষটি। আপনারা যদি আমাকে প্রতিটি গ্রাম থেকে প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে একজন করে এমন সৎ যোগ্য ও শিক্ষিত মানুষ উপহার দিতে পারেন, তাহলেই সম্ভব একটি সুন্দর হাতিয়া গড়ে তোলা।”
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রফিকুল আলম, হাতিয়া দ্বীপ সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. জাহেদুল আলম, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের পরিচালক মোহাম্মদ তাজিব উদ্দিন প্রমুখ।
গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, “ছাত্ররা শিক্ষকের চেয়ে এগিয়ে গেলে এটা শিক্ষকদের জন্য গর্বের। যিনি দেশের চরম ক্রান্তিলগ্নে গণমানুষের কন্ঠ হয়েছিল, সেই হান্নান মাসুদের মাধ্যমে আমরা হাতিয়ার উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছি। মাসুদের মতো যারা হাতিয়ার মতো একটা দ্বীপ থেকে মূল ভূখণ্ডে এসে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে, আমরা তাদের দেখে আনন্দিত ও উচ্ছ্বসিত।”