দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস পালন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে থেকে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। রাইজিংবিডির সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে থাকছে বিস্তারিত...
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)
‘নিরাপদ ক্যাম্পাসে নির্ভয়ে পথচলা’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক’ এর উদ্যোগে দিবসটি উপলক্ষে কুবির গোলচত্বর থেকে একটি র্যালি শুরু হয়। র্যালিটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে গোলচত্বরে এসে শেষ হয়।
এর আগে, সোমবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক এর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে অর্থনীতি বিভাগের নাইমুর রহমান সভাপতি, বাংলা বিভাগের সোহাগ মিয়া সহ-সভাপতি ও ফার্মেসী বিভাগের সোহানুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন।
নবগঠিত কমিটির সভাপতি নাইমুর রহমান বলেন, “আমরা দেখেছি বিগত সরকারের আমলে প্রভাবশালী ছাত্র সংগঠনগুলোর দ্বারা সাধারণ শিক্ষার্থীরা র্যাগিং এর নামে অমানুষিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। কিন্তু এসবের সুষ্ঠু বিচার তারা পায়নি।”
তিনি বলেন, “আমরা এখন থেকে চেষ্টা করবো, যারা বিচার পায়নি তাদের উপযুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে বিচারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার। এছাড়া কেউ যাতে ক্যাম্পাসে কোন ধরনের নির্যাতনের শিকার না হয়, সে চেষ্টা করা হবে।”
এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে ‘নির্যাতনের শিকার ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিপীড়নের ঘটনার যথাযথ বিচার’ দাবিতে মানববন্ধন করেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এ সময় গুমের শিকার ছাত্রদলের সকল নেতাকর্মী ও সকল নাগরিকের মুক্তি, আওয়ামীলীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্মম হত্যাকান্ড ও নির্যাতনের শিকার ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের নিপীড়নের ঘটনার যথাযথ বিচারের দাবি জানান নেতাকর্মীরা।
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি)
‘আমাদের অধিকার, আমাদের ভবিষ্যৎ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বশেমুরবিপ্রবিতে আইন বিভাগের উদ্যোগে মানবাধিকার দিবস পালন করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে সকাল ১১টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি করা হয়। র্যালিটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসান, আইন অনুষদের ডিন ড. মো. রাজিউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন ড. মো. আব্দুল্লাহ আল আসাদ, বিজনেস অনুষদের ডিন ড. ঈশিতা রায়, কৃষি অনুষদের ডিন ড. জিলহাস আহমেদ জুয়েল, মানবিকী অনুষদের ডিন মো. আব্দুর রহমান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ফায়েকুজ্জমান মিয়া, প্রক্টর ড. আরিফুজ্জামান রাজীব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)
দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুনের শিকার নাগরিকদের সন্ধান ও এর সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে ইবি শাখা ছাত্রদল।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক শাহেদ আহম্মেদ ও সদস্য সচিব মাসুদ রুমি মিথুনের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার পারভেজ, আহসান হাবীব, আনারুল ইসলাম, সদস্য রাফিজ আহমেদ, নুর উদ্দিন ও সাব্বির হোসেন প্রমুখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, “মানবাধিকার দিবসে ছাত্রদলের এমন উদ্যোগ সময়োপযোগী। পতিত হাসিনা সরকারে আমলে বিরোধী দলকে দমানোর অন্যতম অস্ত্র ছিল গুম ও খুন। গুম ও খুনের মাধ্যমে তারা মানুষকে দমাতে চেয়েছিল। নিরপরাধ মানুষকে গুম করে বহু মায়ের বুক খালি করেছে হাসিনা সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গুম ও খুনের অপরাধে হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।”
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি)
১০ ডিসেম্বর উপলক্ষে মানবাধিকার বাস্তবায়নের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ববি শাখা ছাত্রদল। আওয়ামী লীগ সরকালের আমলে গুমের শিকার নেতাকর্মী ও নাগরিকদের মুক্তি এবং সব হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে তারা এ কর্মসূচি পালন করে।
এ সময় ছাত্রদলের আরিফ হোসাইন শান্ত, আজমাইন সাকিব মাহমুদ ইমরান, জিয়াদুল ইসলাম , আব্দুল্লাহ নূর কাফি, আরাফাত ওসমান সাকিব, আবু বকর রিফাত, রাকিব হোসেন, রিফাত মাহমুদ, সাজ্জাদ হোসেন, রবিউল খান, হাবিবুর রহমান, মিরাজ, রাহিকুল ইসলাম, আরাফাত, রিফাত, শুভ্র, তাহমীদ মামনুল হক, মিধুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে দেশের জনগণ মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। হাসিনার পতনের সঙ্গে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। মানবাধিকার প্রতিটি মানুষের এমন এক ধরনের অধিকার, যা তার জন্মগত ও অবিচ্ছেদ্য। মানুষ মাত্রই এ অধিকার ভোগ করবে এবং চর্চা করবে। বিএনপি ও ছাত্রদল মানুষের এ অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করছে।”
ঢাকা কলেজ
১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গুমের শিকার নেতাকর্মী ও নাগরিকদের মুক্তি এবং আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্মম হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের যথাযথ বিচারের দাবিতে ঢাকা কলেজের প্রধান ফটকে মানববন্ধন করেছে ঢাকা কলেজ ছাত্রদল।
ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি শাহীনুর রহমান শাহীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মৃধা জুলহাসের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন, কলেজ ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক বোরহান উদ্দিন ইশরাক, সহ সভাপতি ইব্রাহিম কার্দী, পিয়াল হাসান, শাহাবুদ্দিন ইমন, আব্দুল কাইয়ুম খন্দকার পারভেজ, মাজেদুল ইসলাম মাজেদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, রাশেদুল আমীন।
এছাড়া বক্তব্য দেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রহমান মামুন, হাবিবুর রহমান আকাশ, মোশারেফ হোসেন ধ্রুব, মো. মিল্লাদ হোসেন, রাকিবুল হাসান রাকিব, আব্দুর রহিম রাজ, আবু সাঈদ রাকিব, জিয়াউর রহমান খন্দকার জিয়া, সোয়াইব আহমেদ সজিব, মিলন হোসেন, তানভীর আহমদ মাদবর, রাহাত হোসেন, সহ সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান জুহিন, মোজাম্মেল হোসেন রিয়াদ, প্রচার সম্পাদক ইমরান হোসেন রাজ প্রমুখ।
১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ১৯৫০ সালে এ দিনটিকে জাতিসংঘ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। সেই থেকে বিশ্ব জুড়ে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।