বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) আবাসিক এলাকায় প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. রিজওয়ানুল হকের ওপর হামলা হয়েছে। এ সময় তাকে বেধড়ক মারপিট করা হয়। তবে হামলাকারীদের পরিচয় এখনো জানা যায়নি।
হামলার পর আবাসিক এলাকা ছেড়ে যাওয়ার সময় পরপর তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। এ নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আবাসিক এলাকা সংলগ্ন সড়কে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরে ওই শিক্ষক ও ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক আফরিনা মুস্তারীর বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ করে হামলাকারীরা।
একই রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. শহীদুল আলমের বাসায়ও ভাঙচুর চালানো হয় বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক আফরিনা মুস্তারী।
ভুক্তভোগী শিক্ষকদের অভিযোগ, এসব ঘটনার সময় নিরাপত্তা কর্মীদের অনুপস্থিতি দেখা যায়নি। এছাড়া ঘটনা পরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরেই শিক্ষকদের ওপর এ রকম হামলা এবং তার বিরুদ্ধে কোন সক্রিয় পদক্ষেপ না নেওয়াকে প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকবৃন্দ।
ভুক্তভোগী সহযোগী অধ্যাপক মো. রিজওয়ানুল হক বলেন, “গতকাল (মঙ্গলবার) রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাব থেকে বাসায় ফিরছিলাম। ঠিক সেই সময় একটি মোটরসাইকেলে তিনজন দুর্বৃত্ত আমার পিছু নেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে তারা আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। মোটরসাইকেল থেকে নেমে দৌঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তারা আমাকে আবারও আক্রমণ করে।”
তিনি বলেন, “তারা আমাকে এলোপাথাড়ি লাথি দেয় এবং হাতের মুঠিতে কিছু একটা রেখে ঘুষি দিতে থাকে। মাথায় হাত দিয়ে ঢেকে রাখার কারণে বড় কোনো বিপদ হয়নি। হামলার পর তারা আমার বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি আমার বাসাতেই উপস্থিত ছিল।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে অবহিত করেছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে একজন শিক্ষককে এভাবে মারধর করা হলো। অথচ নিরাপত্তা কর্মীদের দেখা মেলেনি। প্রক্টরিয়াল বডিকে জানালেও তদন্ত বা বিচার নিয়ে কোনো আশ্বাস আমাকে তারা দেয়নি। প্রক্টরিয়াল বডি আমার বাসায় এসে শুধু বলেছে, বিষয়টি দুঃখজনক। গতকাল যদি আমাকে গুলি করতো, তাহলেও কেউ নিরাপত্তা দিতে আসতো না। আমি মনে করছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা দিতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।”
ভুক্তভোগী অধ্যাপক আফরিনা মুস্তারী বলেন, “গতকাল রাত ১ টার দিকে আমার বাসার সামনে তিনটি ককটেল বিস্কোরণ করা হয়েছে। দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেলে করে এসে ককটেল বিস্ফোরণ করে চলে যায়। গভীর রাতে মোটরসাইকেল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার ভেতরে ককটেল নিয়ে কেউ কিভাবে অবাধে চলে আসতে পারে, সেটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।”
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মীদের কাজটা কি? এত রাতে আবাসিক এলাকার তেতরে কেউ আসলে তাকে অবশ্যই তল্লাশী করে তারপরে অনুমতি দিতে হবে।”
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. শহীদুল হককে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. আব্দুল আলীমও কল রিসিভ করেননি।