ছাত্র ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) সংসদের একাংশের সভাপতি অর্মত্য রায় ও সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারসহ তিন দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করা হয়েছে।
তাদের দাবিগুলো হলো- শেখ মুজিবের গ্রাফিতি মুছে ধর্ষণবিরোধী গ্রাফিতি আঁকার দায়ে অমর্ত্য রায় এবং ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলীর নামে জারিকৃত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অবিলম্বে তুলে নিয়ে মামলা প্রত্যাহার করতে হবে; বিগত প্রশাসনের করা স্বৈরাচারী বহিষ্কারাদেশ বাতিল করতে হবে; ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর ছাত্রলীগের হামলার প্রত্যক্ষ মদদদাতা ও অমর্ত্য-ঋদ্ধর বহিষ্কারের দাবিতে আন্দোলন করা শিক্ষক সোহেল আহমেদকে অবিলম্বে উপ-উপাচার্য পদ থেকে অপসারণ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টায় ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ এর ব্যানারে এ অবরোধ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। তবে দিনভর অবরোধ কর্মসূচি পালনের কথা থাকলেও দুটি দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে বেলা দেড়টার দিকে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
কর্মসূচির ব্যাপারে নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রথম দুই দফা দাবির সঙ্গে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করেন। প্রশাসন জানিয়েছে, আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সিন্ডিকেট মিটিংয়ের মাধ্যমে অন্যায্য বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। এছাড়া অন্যায়ভাবে করা মামলা প্রত্যাহার করার কার্যক্রম ইতোমধ্যেই চলমান ।
তারা আরো জানিয়েছে, নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে আস্থার সঙ্গে গ্রহণ করেছে। কিন্তু স্বৈরাচারের দোসর সোহেল আহমেদের বিষয়ে প্রশাসন তার এখতিয়ারের মধ্যে না থাকার কারণ দর্শিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর দিতে পারেনি। তবে প্রথম দুই দফা দাবি দ্রুততম সময়ের মধ্যে কার্যকর করা জরুরি ছিল। এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করায় পূর্ণ দিবস অবরোধ সংক্ষিপ্ত করে তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এদিকে, শীতকালীন ছুটির শেষদিনে রেজিস্ট্রার ভবন অবরোধ করে রাখায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ অন্যান্য সেবা প্রত্যাশীদের। বন্ধের আগে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফরম ফিলাপ, জমা দেওয়া, বৃত্তির টাকা উত্তোলন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন সংক্রান্ত কাজসহ দাপ্তরিক সব কাজই থমকে ছিল। এতে সংশ্লিষ্টদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে।
জাবির ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবির হাসান বলেন, “শীতকালীন বন্ধের আগে আজ শেষ কার্যদিবস ছিল। আমার বৃত্তির কাগজটা জমা দেওয়া দরকার ছিল। তাদের অবরোধের কারণে জমা দিতে পারিনি।”
৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সোহান আনাম বলেন, “আমার পরীক্ষার ফরম ফিলাপের আজ শেষদিন ছিল। এভাবে মানুষের অসুবিধা না বুঝে অবরোধ মোটেই কাম্য নয়।”
চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর গ্রাফিতি মুছে ধর্ষণবিরোধী দেয়ালচিত্র আঁকার অভিযোগ উঠে অমর্ত্য ও ঋদ্ধর বিরুদ্ধে। পরে এক বিশেষ সিন্ডিকেট সভা ডেকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার ও তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় আইনে মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।