জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দুই বান্ধবীসহ ঘুরতে এসে আটক হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচিত ‘প্রলয় গ্যাং’ এর অন্যতম সদস্য তবারক মিয়া। এ সময় পার্শ্ববর্তী দোকানের পাশ থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় ৫০ গ্রাম পরিমাণ গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলার এক চায়ের দোকান থেকে তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন জাবি শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বটতলায় মাঝামাঝি স্থানে একটি চায়ের স্টলে বসে চা পান করছিলেন তবারক। এ সময় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা এসে তার পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জাবির নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৫১ ব্যাচের জিতাদিত্য বড়ুয়ার আমন্ত্রণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই বান্ধবীসহ ঘুরতে এসেছেন বলে জানান। পরে শিক্ষার্থীরা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ রাত ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে এসে তাকে আটক করে আশুলিয়া থানায় নিয়ে যায়।
তবে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তবারক জানান, তার বিরুদ্ধে যে মামলা ছিল, সেটা থেকে অক্টোবর মাসে তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। বর্তমানে তার নামে কোন অভিযোগ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের সমন্বয়ক আরমানের স্বাক্ষর করা হলফনামাও দেখান তিনি।
তার সঙ্গে থাকা দুই নারী জানান, মামলায় দীর্ঘদিন কারাগারে থাকায় তবারক মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তাকে ২ বছর বহিষ্কার করা হয়েছে। তাই তারা তাকে ঘুরতে এনেছেন। জাহাঙ্গীরনগরে তাদের বন্ধু আছে, ওই বন্ধুদের সঙ্গে তারা দেখা করতে এসেছেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুল ও মার্জিউর বলেন, আমরা বটতলায় বসে ছিলাম। এ সময় তবারক আসে ফ্রেন্ডদের নিয়ে। তাকে প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্য বলে আমাদের সন্দেহ হয়। পরে আমাদের কয়েকজন ও উপস্থিত সাংবাদিকরা তার পরিচয় জিজ্ঞেস করেন। অনলাইন থেকে নিউজ দেখে তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি। তিনি আগে শিক্ষার্থীদের মারধরে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এক পর্যায়ে জাবি প্রক্টরিয়াল টিম এসে পুলিশে খবর দেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল হাসান চৌধুরী বলেন, “ছাত্ররা আমাদের খবর দেয় যে, ঢাবির প্রলয় গ্যাংয়ের এক সদস্যকে এখান থেকে ধরা হয়েছে। আমার সঙ্গে ঢাবির প্রক্টরের কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, মেয়েদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য। তবারককে পুলিশ থানায় নিয়ে যাক। ওর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করবে।”
এ ব্যাপারে দায়িত্বরত আশুলিয়া থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান বলেন, “আমরা তবারককে থানা হেফাজতে নিয়ে যাচ্ছি। তার সঙ্গে থাকা দুই নারীর পরিচয় লিখে রেখে ছেড়ে দিচ্ছি। তবারকের নামে কোনো অভিযোগ আছে কিনা আমরা খতিয়ে দেখব। আমরা দোকানের পাশ থেকে পলিথিনে কিছু গাঁজা উদ্ধার করেছি।”
আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বকর বলেছেন, “আশুলিয়া থানায় তার নামে কোনো মামলা নেই। শাহবাগ থানার মামলার বাদী আরমান তার অভিযোগ তুলে নিয়েছেন। বিধায় তিনিও তাকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেছেন। আর শাহবাগের মামলার তদন্ত কর্মকর্তাও তাকে ছেড়ে দিতে বলেছেন।”
তিনি বলেন, “এজন্য আশুলিয়া থানা পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। তার কাছে যে গাঁজা পাওয়া গেছে, তা পরিমাণে কম। তাই প্রাথমিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে।”