আবেদনের সময় পুনর্নিধারণ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রথম বর্ষের (২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষ) ভর্তি পরীক্ষায় ১০ ইউনিটের পরিবর্তে সাত ইউনিটে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি ও উপাচার্য কোটা বাতিলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা) ও কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ মোহাম্মদ আলী রেজা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৯ ডিসেম্বর ১০ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ইউনিট সংখ্যা ও ভর্তি আবেদন ফি কমানোর উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি), তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট এবং আইন অনুষদ আলাদা পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।
আইআইটি গাণিতিক এবং পদার্থ বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে আইন অনুষদ, তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট কলা অনুষদের অধীনে ভর্তি পরীক্ষা নেবে। বাকি ইউনিটগুলো পূর্ববর্তী বিজ্ঞপ্তির মতোই থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি সূত্রে জানা গেছে, অনলাইন আবেদন শুরু আগামী ১ জানুয়ারির পরিবর্তে ৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে। ভর্তির পুনঃনির্ধারিত আবেদন ফি এর ক্ষেত্রে ‘এ’ ইউনিটের (গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদ ও আইআইটি) আবেদন ফি ৭০০ টাকা, ‘বি’ ইউনিট (সমাজবিজ্ঞান অনুষদ) আবেদন ফি ৭০০ টাকা, ‘সি’ ইউনিটের (কলা ও মানবিকী অনুষদ+আইন অনুষদ+তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট) আবেদন ফি ৭০০ টাকা, ‘সি-১’ ইউনিটের (নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ এবং চারুকলা বিভাগ) আবেদন ফি ৫০০ টাকা, ‘ডি’ ইউনিটের (জীববিজ্ঞান অনুষদ) আবেদন ফি ৭০০ টাকা, ‘ই’ ইউনিটের (বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ) আবেদন ফি ৬০০ টাকা, আইবিএ-জেইউ পৃথক ইউনিটে আবেদন ফি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরো জানা গেছে, ভর্তি পরীক্ষার শিফটের ক্ষেত্রে একাধিক শিফটে অনুষ্ঠিতব্য ইউনিটের ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত মোট আসনকে সমহারে বন্টন করে প্রতি শিফটে আসন বরাদ্দ করে মেধা তালিকা প্রস্তুত করা হবে। গ্রুপভিত্তিক আসন বরাদ্দকৃত ইউনিটের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণপূর্বক আনুপাতিক হারে প্রতি শিফটে গ্রুপভিত্তিক আসন বরাদ্দ করে মেধা তালিকা প্রস্তুত করা হবে।
মাধ্যমিক/সমমান পরীক্ষায় (চতুর্থ বিষয়সহ) প্রাপ্ত জিপিএ-কে ১.৫ দ্বারা এবং উচ্চমাধ্যমিক/ সমমান পরীক্ষায় (চতুর্থ বিষয়সহ) প্রাপ্ত জিপিএ-কে ২.৫ দ্বারা গুণ করে লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে যোগ করে মোট সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ইউনিট বা বিভাগের আসন সংখ্যার সর্বাধিক ১০ গুণ শিক্ষার্থীর পৃথক মেধা তালিকা প্রস্তুত করা হবে। এছাড়া পোষ্য শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিভাগে সর্ব্বোচ্চ চারজন মেধাক্রম অনুযায়ী ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার আলী রেজা বলেন, “কিছু নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের তারিখ পেছানো হয়েছে। আজ অনুষ্ঠিত সভায় পাস মার্ক ৩৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে। একটি বিভাগে চার জনের বেশি পোষ্য কোটায় ভর্তি না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং আবেদন ফি কমানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আজ ভর্তি কমিটির সভায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনি কোটা ও উপাচার্য কোটা চূড়ান্তভাবে বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
এদিকে, বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে পোষ্য কোটার যৌক্তিক সংস্কারসহ চার দফা দাবিতে মানববন্ধন করে গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলন।
তাদের উত্থাপিত দাবিগুলো হলো- ভিসি কোটা বাতিল করতে হবে; পোষ্য কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে; ভর্তি পরীক্ষার আবেদন ফি ও ইউনিট কমাতে হবে এবং অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করতে হবে।
গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের ব্যানারে গত ১৪ নভেম্বর থেকে উপাচার্য কোটা বাতিল ও পোষ্য কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা।