কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) অধিকতর উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতাধীন কিছু জমি নিয়ে চলমান মামলার নিষ্পত্তি না হওয়ায় ২০টি পরিবার এখনো তাদের জায়গা ছাড়েনি। এরই মধ্যে কয়েকটি বাড়ি ভাঙা হলেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি তাদের।
ফলে কোনরকম ছাউনির সহায়তায় পরিবারগুলো সেখানেই মানবেতন জীবন-যাপন করছে। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছে, জমি নিয়ে মামলা চলমান থাকায় কাউকেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রকল্পের পুরো টাকা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। সম্পূর্ণ বিষয়টি জেলা প্রশাসকের আওতাধীন।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জমির দাগ নম্বর ৬১১২ এবং খতিয়ান নম্বর ১০২৯ এ মোট পাঁচটি মামলা চলমান থাকায় ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। দাগ নম্বর ৫৭৮২, খতিয়ান নম্বর ৪৭১৩ ও ১১৪৮ এ অংশীদারদের ভেতর দুইটি মামলা চলমান থাকায় তারা ক্ষতিপূরণ পায়নি। জমির দাগ নম্বর ৫৭৭৯ এবং খতিয়ান নম্বর ১০৭৫ ও ১০৫৭ এ খাস খতিয়ানের কারণে ক্ষতিপূরণ পায়নি। দাগ নম্বর ৪২৬৪ এবং খতিয়ান নম্বর ২১৮ এ টাকা পেয়েছে, কিন্তু এখানে বন্টন জনিত সমস্যা। দাগ নম্বর ৬১১২ ও খতিয়ান নম্বর ১০২৯ এ চেক হয়েছে, কিন্তু এখানেও বন্টন জনিত সমস্যা।
এছাড়া জমির দাগ নম্বর ৫৭৭৫ এবং ১০৭৫ নম্বর খতিয়ানে ১৬১৫/২১ ধারার মামলা থাকায় ক্ষতিপূরণ পায়নি। দাগ নম্বর ৪২৮৮ ও ৪২৮০ এবং খতিয়ান নম্বর ৬৯৯৮ এ অংশীদারদের ভেতরে একটি করে মামলা থাকায় ক্ষতিপূরণ পায়নি। দাগ নম্বর ৬১২৩ এবং খতিয়ান নম্বর ২২৭ এ সীমানা নির্ধারণ ও আংশিক ক্ষতিপূরণ বাকী।
ভুক্তভোগী পরিবারগুলো জানিয়েছে, ডিসি অফিস থেকে বেশ কয়েকবার তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু পরে তা দেওয়া হয়নি। ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেখিয়ে বেশ কয়েকটি পাকাঘরও ভাঙা হয়েছে। ক্ষতিপূরণ না পেয়ে তারা কোনরকম ছাউনির সাহায্যে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
দাগ নম্বর ৫৭৭৯ এবং খতিয়ান নম্বর ১০৫৭ জমির দখলদার মো. অহিদ মিয়ার স্ত্রী আনু বলেন, “ডিসি অফিস থেকে লোক আইসা সবকিছু দেখেশুনে বলছে ক্ষতিপূরণ দেবে। ঘর ভাঙছে, কিন্তু এখনো টাকা দেয় নাই। তারা আজকে না পরশু, পরশু না কাল বলে শুধু আসে না। এহানে আমরা তিনটি পরিবার একঘরে থাকতেছি। জায়গার টাকা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নাই, ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিলেই আমরা বাঁচি।”
দাগ নম্বর ৫৭৮২ এবং খতিয়ান নম্বর ৪৭১৩ জমির দখলদার ইমান আলী বলেন, “আমার ঘরের দাম ধরা হইছে ৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। তারা বারবার আইসা দেইখা যাইতেছে, বলে এখান থেকে চলে যেতে। আমার ঘরের ক্ষতিপূরণটা দিয়ে দিলেই আমি চলে যাইতাম। টাকা দিব কইরা ঘর ভাঙাইছে। এহন উনারা শুধু তারিখ পেছায়। টাকা দিবে দিবে বলে দেই না।”
কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পরিবারগুলোর ক্ষতিপূরণ বাবদ আটকে আছে মোট ৬৩ লক্ষ ৯৩ হাজার ৯৪৪ টাকা। এর মধ্যে দখলদার আকতার হোসেনের ২ লাখ ৩৯ হাজার ৫২২ টাকা, মনোয়ারা বেগমের ১০ লাখ ২২ হাজার ৫৭৭ টাকা, খোকন মিয়ার ১২ লাখ ৭৬ হাজার ১০০ টাকা, শামশুন নাহারের ১ লাখ ৩১ হাজার ৮৯৮ টাকা, শেখ ফরিদের ২ লাখ ৫০ হাজার ৩৪ টাকা, অহিদ মিয়ার পাঁচ লাখ ৮৯ হাজার ১২১ টাকা এবং ইমান আলীর ৯ লাখ ৮৩ হাজার ২৭৩ টাকা।
এছাড়াও দখলদার দুলাল মিয়ার ৪ লাখ ৮৯ হাজার ৬২১ টাকা, মো. আব্দুস সালামের ৭ লাখ ২৭ হাজার ৮৮ টাকা, আব্দুল জব্বারের ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩২১ টাকা, আবদুর রশিদের ২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৮৯ টাকা এবং সিরাজ মিয়ার ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮১ টাকা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রধান প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এস.এম শহিদুল হাসান বলেন, “প্রকল্প অনুমোদনের পর আমরা সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। এখন বাকিটা ডিসি অফিসের কাজ। আমরা ক্যাম্পাস পরিদর্শনকালে কিছু বাড়িঘর দেখেছি, তারা এখনো যায়নি। জমিজমা নিয়ে মামলা চলমান থাকায় তাদের এখনো টাকা হস্তান্তর করা হয় নি। তবে এ ব্যাপারে ডিসি মহোদয় ভালো বলতে পারবেন, কেন টাকা দেওয়া হচ্ছে না বা কবে দিবেন।”
কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, “তারা সঠিক কাগজপত্র দাখিল করলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে পেমেন্ট দিয়ে দিব।”
ঘরের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে তিনি বলেন, “চেক প্রস্তুত আছে। তারা রবিবারে নিয়ে যেতে পারবে। তাদের বলা হয়েছে, জমির কাগজপত্র ঠিকঠাকভাবে দেখান, তাহলেই আমরা টাকা দিয়ে দিব।”
২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) ১১তম সভায় প্রস্তাবিত নতুন ক্যাম্পাসের জন্য ১ হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২১ সালের ১১ মার্চ ওই প্রকল্প বাস্তবায়নে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ব্যাটালিয়ন ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়।