ক্যাম্পাস

বাদ্য-নৃত্য-মন্ত্রে দেবী সরস্বতীর আরাধনায় শিক্ষার্থীরা

বাদ্য-নৃত্য-মন্ত্রে দেবী সরস্বতীর আরাধনায় শিক্ষার্থীরা

সারা দেশে বাদ্য, নৃত্য ও মন্ত্রে মাধ্যমে বিদ্যা ও সংগীতের দেবী সরস্বতীর আরাধনা করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। বাদ যায়নি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারী) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দিনব্যাপী নানা আয়োজন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গানের তালে তালে নেচে তারা পূজার আনন্দ ভাগ করে নেন সবার সঙ্গে। রাইজিংবিডির বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে থাকছে বিস্তারিত-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে প্রতিমা স্থাপনের মাধ্যমে এ বছরের শ্রীশ্রী সরস্বতী পূজার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার ঢাবির ৭৩টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনায় সরস্বতী পূজা আয়োজিত হয়েছে। হল প্রশাসনের পূজা হলের উপাসনালয়ে এবং বিভাগ ও ইনস্টিটিউটগুলোর পূজামণ্ডপ হলের মাঠে স্থাপন করা হয়েছে।

এদিকে, সরস্বতী পূজা উপলক্ষে সকালে মণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয় পূজা, অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকল ধর্মের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পূজা হয়ে উঠেছিল বর্ণিল ও উৎসবমুখর। গানের তালে তালে নেচে শিক্ষার্থীরা পূজার আনন্দ ভাগ করে নেন।

সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা তাদের বিভাগীয় মণ্ডপে এসে পূজার বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেন। পুরোহিতদের মন্ত্রোচ্চারণ, অঞ্জলি প্রদান এবং দেবীর আশীর্বাদ কামনার মাধ্যমে পূজার মূল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এরপর চলে প্রসাদ বিতরণ ও পূজাকে ঘিরে আনন্দঘন সময় কাটানোর পালা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ ব্যাচের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী পায়েল সরকার বলেন, “আমরা সকাল থেকেই একত্রে সরস্বতী পূজা উদযাপন করছি। ক্যাম্পাসে এত মানুষ একসাথে নাচ গান করে পূজা উদযাপন সত্যি অন্যরকম অনুভূতি। সরস্বতী মায়ের কাছে আমাদের একটাই প্রার্থনা আমরা সম্মিলিতভাবে একটি সুন্দর দেশ যেন গড়তে পারি। আমাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ না রেখে সকলে মিলে উৎসব উদযাপনের মাধ্যমে আজকের দিনটা শেষ হোক।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল রাইজিংবিডিকে বলেন, “খুবই সুন্দর ও সুষ্ঠু ভাবে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ পূজা সম্পন্ন হয়েছে। পূজার কার্যক্রম সকালে শেষ হলেও রাত ৮ পর্যন্ত আমেজ করবে শিক্ষার্থীরা। আমরা চাই এ সম্প্রীতি ও ঐক্যের আবহ আগামীতেও বজায় থাকুক।”

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)

সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে এ পূজা উদযাপন শুরু হয়। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

সকাল ৯টায় দেবীর বন্দনা শুরু হয়। সাড়ে ১০টায় পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। দুপুর ১টায় প্রসাদ বিতরণের মাধ্যমে পূজা শেষ হয়।

শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল, পরিসংখ্যান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী, একাউন্টটিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন ও অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ্র দেব, কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বনানী বিশ্বাস প্রমুখ।

কুবি পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সৌরভ বিশ্বাস বলেন, “প্রতিবছরের ন্যায় এবারো পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে সুষ্ঠুভাবে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমাদের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতার প্রশংসা করছি। আশা করি, প্রশাসনের সহযোগিতার ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।”

এছাড়াও বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে নবীন বরন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)

পূজা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় হাবিপ্রবির পূজা উদযাপন কমিটি ও সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের আয়োজনে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আয়োজনের মধ্যে ছিল প্রতিমা স্থাপন, অঞ্জলি প্রদান, ধর্মসভা, মহাপ্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা, বৈদিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সন্ধারতি ইত্যাদি। 

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. এনামউল্যা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম সিকদার, কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র হালদার, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শামসুজ্জোহা, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. নিজাম উদ্দীন প্রমুখ।

অধ্যাপক ড. শ্রীপতি সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন অধ্যাপক ড. বিকাশ চন্দ্র সরকার। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফিসারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কৃষ্ণ চন্দ্র রায়।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)

বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় থানা ফটক সংলগ্ন মাঠে প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছে।  এরপর ধারাবাহিকভাবে পূজার্চনা, দেবী অর্চনা, পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের অধ্যাপক ড. অরবিন্দ সাহার সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নয়ন কুমার রাজবংশী, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টা অ্যাড. সুব্রত কুমার চক্রবর্তী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম প্রমুখ।

এছাড়া প্রধান আলোচক হিসেবে মাগুরার শ্রীশ্রী নিতাই গৌর সেবাশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ চিন্ময়ানন্দ দাস বাবাজী মহারাজ এবং বিশেষ আলোচক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. গৌতম চন্দ্র দাস ও আইসিটি বিভাগের অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ উপস্থিত ছিলেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)

বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ, ইন্সটিউট, হল এবং কেন্দ্রীয় মন্দির প্রাঙ্গণসহ এবার মোট ১৫টি মণ্ডপে জাবির সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব বিদ্যার দেবী সরস্বতীর পূজা উদযাপিত হয়েছে। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় সরস্বতী পূজা উদযাপন পর্ষদের আয়োজনে কেন্দ্রীয় মন্দির প্রাঙ্গনে বাণী অর্চনা-১৪৩১ অনুষ্ঠিত হয়।

বিভিন্ন অনুষদের সামনের এলাকা পূজা উপলক্ষে আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে। এ বছর বিভিন্ন অনুষদভুক্ত ১২টি বিভাগ পূজামণ্ডপের আয়োজন করেছে। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ও আল বেরুনী হল এবং কেন্দ্রীয় মন্দির প্রাঙ্গণে পৃথকভাবে পুজামণ্ডপ করা হয়েছে।

সনাতন বিদ্যার্থী সংসদের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় (ইতিহাস ৪৯ ব্যাচ) বলেন, “অত্যন্ত উৎসব মুখের পরিবেশে এবার সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ গতবারের চেয়েও বড় পরিসরে এবার পূজামণ্ডপ তৈরি হয়েছে। আমরা অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে পূজা করতে পেরেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা ও আন্তরিকতা পেয়েছি। কোন প্রকার দূর্ঘটনা বা সাম্প্রদায়িক ঘটনা একদমই ঘটেনি।”

কেন্দ্রীয় সরস্বতী পূজা উদযাপন পর্ষদের সভাপতি গোবিন্দ চন্দ্র দাস (আইন ও বিচার, ৪৯ ব্যাচ) বলেন, “এবার খুবই উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে আমাদের জন্য প্রতিবছর ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকে। তবে পূজা আয়োজন করতে প্রায় আড়াই লাখ টাকার মত খরচ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে পূজা বাবদ বরাদ্দ বৃদ্ধির আবেদন জানাই।”

গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)

জমকালো আয়োজনে প্রথমবারের মতো দিনব্যাপী সরস্বতী পূজা উদযাপন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থী। সকাল থেকেই পূজা উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস। আয়োজনের মূল দায়িত্বে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতনী সংগঠন ‘বাণী অর্চনা’।

বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী দ্বীপরাজ মজুমদার তৃপ্ত বলেন, “সরস্বতী পূজা ছাত্রজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রত্যেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই সরস্বতী পূজা হওয়া উচিত। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবারই প্রথম। আমরা সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।”

মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রভাষক ড. মৃত্যুঞ্জয় দাস বলেন, “এবারই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে, ৩ নম্বর হোস্টেলে পূজা হত। বিভিন্ন ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে এ পূজা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পূজা কমিটির পক্ষ থেকে সবাইকে ধন্যবাদ জানচ্ছি।