সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুঁজিবাজার নিয়ে গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব গ্রুপ বা পেজ আইডি ব্যবহার করে গুজব চালানো হচ্ছে তার একটি তালিকা তৈরি করেছে বিএসইসি। এই তালিকাসহ বিটিআরসিকে বৃহস্পতিবার একটি চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অনেকে গ্রুপ বা পেজের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বাড়া বা কমার বিষয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এসব পেজ বা গ্রুপের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইডি বন্ধ করতে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। কিছু দিন আগে বিএসইসি থেকে এ ব্যাপারে একটি আদেশ জারি করেছে কমিশন।
ওই আদেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব ব্যক্তি বিএসইসি, ডিএসই, সিএসইর লোগো ব্যবহার করছে তাদের বিরত থাকতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে কোনো শেয়ারের মূল্য ওঠানামার পূর্বাভাস, অনুমান নির্ভর তথ্য, কোনো কোম্পানির অপ্রকাশিত তথ্য প্রচার থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এরপরও যদি কারো বিরুদ্ধে এ ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনার প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে দ্য সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একই সঙ্গে অভিযুক্তদের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর আওতায় আনা হবে। আদেশ জারির আগে ও পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়টি গ্রুপ বা পেইজ গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে তার একটি তালিকা তৈরি করেছে বিএসইসি। এতে 'ডিসিশন মেকার' নামের একটি গ্রুপও রয়েছে বলে জানা গেছে। বৃহস্পতিবার তালিকাসহ একটি চিঠি বিটিআরসিকে দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে জানান, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে বাজারের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে। তাই এসব গ্রুপ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় কিছু পেইজ বা গ্রুপ বন্ধ করতে বিটিআরসিকে বৃহস্পতিবার একটি চিঠি দিয়েছে বিএসইসি।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেসবুক, টুইটার, ইমো, হোয়াটস অ্যাপ, ভাইভার ও অন্যান্য অ্যাপসে গ্রুপ বা পেইজ খুলে কিছু চক্র বাজারে শেয়ারের দাম বাড়া বা কমার আগাম তথ্য দিয়ে থাকে। বাজারে এভাবে গুজব ছড়িয়ে একাধিক চক্র লাভবান হচ্ছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শাকিল রিজভী রাইজিংবিডিকে বলেন, `সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে শেয়ারের দর সম্পর্কে যে তথ্য প্রচার করা হয় তাতে বিনিয়োগকারীরা দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েন। এসব অপপ্রচারে বিনিয়োগকারীরা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
এদিকে, ডিসিশন মেকার গ্রুপের অ্যাডমিন এম তালুকদার ডিএম রাইজিংবিডিকে বলেন, `ডিসিশন মেকার গুজব ছড়ায় না। প্রচলিত টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে, বিশ্বব্যাপী আধুনিক প্রচলিত পদ্ধতিতে বিশ্লেষণ করে, বিনিয়োগকারীদেরকে সচেতন এবং প্রশিক্ষিত করি। বিএসইসি থেকে যদি সিদ্ধান্ত হয় যে, টেকনিক্যাল অ্যানালাইসিস পোস্ট করা যাবে না। তাহলে আমরা তা বন্ধ করে দিবো।'
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘গুজব রটনাকারীদের সহায়তায় ম্যানুপুলেশনকারীরা সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিঃস্ব করে। এসব বন্ধ হলে বাজারে কারসাজি চক্রের দৌরাত্ম্য কমবে, বাজারে স্বাভাবিক গতি ফিরবে।’