পাবনার ঈশ্বরদী থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি) পর্যন্ত—১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল সংযোগের কাজ দেরি হওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ২০২১ সালের মধ্যে এই সংযোগ রেলপথ চালুর কথা ছিল। তবে, করোনা পরিস্থিতিতে নির্মাণ উপকরণ কিনতে না পারা, লোকবল সংকট ও অর্থ বরাদ্দে বিলম্বের কারণে সময়মতো এই সংযোগ রেলপথ তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না।
রেলপথ মন্ত্রণালয়-সূত্র বলছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির জন্য ঈশ্বরদী জংশনটি প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই জংশন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক ছোট। প্ল্যাটফর্মের শেডগুলোও জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে ওয়েটিং রুম-টয়লেটগুলোও। এছাড়া, স্টেশনে যাত্রীদের বসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। এরফলে মাদকসেবী, চোর, ছিনতাইকারী ও প্রতারকদের অভয়াণ্যে পরিণত হয়েছিল এই জংশন।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় অর্থ বরাদ্দে দেরি হয়েছে। ইতোমধ্যে রেললাইনের একটি বিশাল অংশের কাজ শেষ হয়েছে। তবে, স্টেশন ও অন্যান্য কাজ এখনো শেষ হয়নি। করোনাসহ বিভিন্ন কারণে চলতি অর্থবছরের ৩১৩ কোটি টাকা ছাড় করা সম্ভব হয়নি।’
মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, ঈশ্বরদী জংশন একটি ইন্টারলিং সিগন্যাল স্থাপনের কাজ করোনার কারণে দেরি হয়েছে। তবে দেশে করোনা সংক্রমিত হওয়ার আগেই একটি ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ হয় বলে সূত্র জানায়।
সূত্র জানায়, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গত বছর ২২ শে জুন ঈশ্বরদী জংশন পরিদর্শন করেন। এ সময় স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও যাত্রীরা তাকে স্টেশনে নানা ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধার না থাকার বিষয়ে জানান। মন্ত্রী তাদের অভিযোগ শোনেন। এরপর রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপককে জনভোগান্তি কমানোর নির্দেশনা দেন। তার নির্দেশনার পরে, রেলপথ মন্ত্রণালয় স্টেশনটিতে নতুন লাইন স্থাপন ও পরিষেবার মান উন্নয়নের জন্য ৩৩৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। প্রকল্পের অধীনে, প্ল্যাটফর্ম উন্নত করা হয়েছে। যেন শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থরা সহজেই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে পারে। প্রকল্প ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশের স্ট্যান্ডার্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড, ক্যাসল কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড ও ভারতীয় নির্মাণ সংস্থা জিপিটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রজেক্টস লিমিটেড যৌথভাবে এই রেলপথ তৈরি করছে। প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৯৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। পরেরে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়ায় ৩৩৫ কোটি টাকায়। প্রকল্পের আওতায় রেলপথ মন্ত্রণালয় ১৩টি লেভেল ক্রসিং, একটি বি গ্রেড স্টেশন ভবন, একটি প্ল্যাটফর্ম ও সাতটি বক্স কালভার্টও নির্মাণ করেছে। প্রকল্পের আওতায় রেললাইন ও প্ল্যাটফর্ম ১৮টি ট্রেনের কোচ রাখার জন্য সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বিদ্যমান ট্র্যাকগুলোর মেরামত করা হবে। প্ল্যাটফর্ম সংস্কার, যাত্রী-শেড, টয়লেট, ওয়েটিং রুম, বসার ব্যবস্থা ও সিগন্যাল ব্যবস্থাও রয়েছে।
এ বিষয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আকবর বলেন, ‘করোনার কারণে দেশের অন্যান্য প্রকল্প যেভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পও একইভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ফলে, নির্ধারিত সময়ে ঈশ্বরদী রেল সংযোগ প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যাবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় আছি|’ তবে, দ্রুত কাজ শেষ করার বিষয়ে আশা প্রকাশ করেন তিনি।