‘মেড ইন বাংলাদেশ’ খ্যাত ওয়ালটন টেলিভিশনের উচ্চ গুণগত মান ও রিলায়্যাবিলিটি জয় করছে ইউরোপীয় ক্রেতাদের আস্থা। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপে টিভি রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ, নতুন বাজার সৃষ্টি ও রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধিতে আশাতীত সাফল্য এসেছে বাংলাদেশি ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটনের।
করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতিতেও ইউরোপের ১০টি উন্নত দেশের বাজারে সম্প্রসারণ হয়েছে ওয়ালটন টিভি রপ্তানি বাণিজ্য। ২০২০ সালে আগের বছরের চেয়ে ১০ গুণ বেশি টিভি ইউরোপে রপ্তানি করেছে ওয়ালটন। এদিকে, এ বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি থেকে মে) ইউরোপে ওয়ালটনের টিভি রপ্তানি ২০২০ সালের রপ্তানির পরিমাণকেও ছাড়িয়েছে।
ইউরোপে টিভি রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ, নতুন বাজার সৃষ্টি ও দ্রুত গ্রাহকপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে ওয়ালটনের অসাধারণ সাফল্য অর্জনের প্রশংসা করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফারেনহল্টস। সম্প্রতি গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটন হাই-টেক পার্কে টেলিভিশন ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরি পরিদর্শনকালে জার্মান রাষ্ট্রদূতকে ইউরোপে ওয়ালটন পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের সফলতার বিষয়ে জানানো হয়। ওই সময় তিনি ইউরোপীয় প্রযুক্তির মেশিনারিজের সমন্বয়ে ওয়ালটনের আন্তর্জাতিক মানের অত্যাধুনিক টিভি ম্যানুফ্যাকচারিং ফ্যাক্টরি দেখে অত্যন্ত মুগ্ধ হন।
কারখানা পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাপক উন্নয়ন ও অগ্রগতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে ওয়ালটন। তারা ইউরোপের উন্নত প্রযুক্তির মেশিনারিজ দিয়ে উচ্চ মানের পণ্য তৈরি করছে। ওয়ালটনের তৈরি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। শুধু তাই নয়, তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ বিশ্ববাজারে ওয়ালটন সফলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে পণ্য রপ্তানি আদেশ।’ তার প্রত্যাশা—আন্তর্জাতিক বাজারে ওয়ালটন অতি দ্রুতই অন্যতম সেরা গ্লোবাল ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড হয়ে উঠবে।
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর প্রকৌশলী গোলাম মুর্শেদ বলেন, ‘ওয়ালটনের লক্ষ্য সাশ্রয়ী মূল্যে উচ্চ মানের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য সরবরাহের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের পতাকাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করা। সেজন্য ওয়ালটন নিয়েছে ভিশন—গো গ্লোবাল ২০৩০। অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্যতম সেরা গ্লোবাল কনজ্যুমার ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড হয়ে উঠবে ওয়ালটন। এই লক্ষ্য পূরণে ইউরোপে টিভি রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে ওয়ালটনের ব্যাপক সাফল্য অর্জন এক বিশাল মাইলফলক।
ওয়ালটন টিভির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) প্রকৌশলী মোস্তফা নাহিদ হোসেন বলেন, ‘ওয়ালটন টার্গেট নিয়েছে বিশ্বের অন্যতম সেরা পাঁচটি গ্লোবাল টেলিভিশন ব্র্যান্ডের তালিকায় স্থান করে নেওয়ার। এ লক্ষ্য পূরণে ২০২৩ সালের মধ্যে পাঁচটি মহাদেশীয় অঞ্চলের সবগুলো দেশে টিভি রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের টার্গেট নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে ইউরোপে ওয়ালটন টিভির রপ্তানি বাজার দ্রুত সম্প্রসারণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
তিনি জানান, ইউরোপে ২০২০ সালে আগের বছরের চেয়ে ১০ গুণ বেশি টিভি রপ্তানি করেছে ওয়ালটন। আর ২০২০ সালের রপ্তানির পরিমাণকে এ বছরের প্রথম মাসেই (জানুয়ারি থেকে মে) ছাড়িয়েছে ওয়ালটন।
ইউরোপে নিযুক্ত ওয়ালটনের বিজনেস হেড প্রকৌশলী তাওসীফ আল মাহমুদ বলেন, ‘ইউরোপের বাজারে ওয়ালটনের তৈরি টেলিভিশনের উচ্চ গুণগত মান, সাশ্রয়ী মূল্য ও রিল্যায়াবিলিটি জয় করে নিচ্ছে বিশ্ব ক্রেতাদের আস্থা। তাই, করোনা মহামারি পরিস্থিতিতেও জার্মানি, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া, স্পেন, পোল্যান্ড, ইতালি, রোমানিয়াসহ ইউরোপের ১০টি উন্নত দেশে টিভি রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে ওয়ালটন। টার্গেট নিয়েছি—২০২১ সালের মধ্যে ইউরোপের ২০টি দেশে ওয়ালটন টিভির শক্তিশালী রপ্তানি বাজার সৃষ্টির। সেজন্য ওয়ালটন টিভির উচ্চ গুণগত মান বজায় রাখার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
গাজীপুরের চন্দ্রায় নিজস্ব কারখানায় ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ডে টিভি তৈরি করছে ওয়ালটন। ইতোমধ্যে সর্বাধুনিক টেকনোলজির ডলবি এবং গুগল লিস্টেড ‘লাইসেন্সড টিভি ম্যানুফ্যাকাচারার’ এর স্বীকৃতি পেয়েছে ওয়ালটন। বাংলাদেশে একমাত্র ওয়ালটনই ডলবি’র অফিশিয়াল সাউন্ড কোয়ালিটির টিভি উৎপাদন করছে। এসব টিভির দাম যেমন সাশ্রয়ী, তেমনই মানেও সেরা। তাই, স্থানীয় বাজারে মার্কেট শেয়ার বিবেচনায় শীর্ষে এখন ওয়ালটন টিভি।
স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ২০১০ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে ওয়ালটন টিভি। বর্তমানে ৩৫ টিরও বেশি দেশে শতাধিক বিজনেস পার্টনারের মাধ্যমে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেবেলযুক্ত টিভি রপ্তানি করছে ওয়ালটন। পরিবেশকের মাধ্যমেও বিভিন্ন দেশে নিজস্ব ব্র্যান্ড নামে টিভি রপ্তানি হচ্ছে। শীর্ষ টিভি রপ্তানিকারক হিসেবে ওয়ালটন দেশের রপ্তানি আয় ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রযুক্তি খাতে দক্ষ কর্মী গড়ে তোলায় অবদার রাখছে। সেই সঙ্গে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে রাখছে বিশেষ অবদান।