করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েই চলছে। এদিকে আর কয়েকদিন পরই কোরবানির ঈদ। তাই কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় পশুর হাট গাবতলী।
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) গাবতলিতে গিয়ে দেখা গেছে, হাট প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন সংশ্লিষ্টরা। চলছে হাটের বর্ধিতাংশে প্যান্ডেলের বাঁশ লাগানোর কাজ। কোথাও কোথাও লাইট লাগানোর কাজ চলছে।
প্রতি বছরের মতো এবারও হাটের ইজারা পেয়েছেন মো. লুৎফর রহমান। মূল হাটের সঙ্গে প্রতি বছরের মতো এবারও যুক্ত হচ্ছে গাবতলী বেড়িবাঁধের পশ্চিমাংশ। থাকবে সাতটি হাসিল ঘর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জায়গা ভাড়া নেওয়া বিভিন্ন এগ্রো ফার্ম ও গবাদি পশু ব্যবসায়ীরা ইতিমধ্যে কাজ করছেন নিজ নিজ প্যান্ডেল তৈরির।
হাটের ২ নম্বর গেটে গিয়ে দেখা গেছে, গরু বাঁধার জন্য প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে। হাট সংশ্লিষ্টরা দাঁড়িয়ে থেকে এসব কর্মীদের কাজ বুঝিয়ে দিতে দেখা গেছে।
হাটের ইজারাদার পক্ষের একজন কর্মী মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘প্যান্ডেলের কাজ চলছে। কাজ দেখতে আসলাম। প্যান্ডেলের কাজ শেষ হতে আরও চার-পাঁচদিন লাগবে। আর গরু নিয়ে আসা হবে ১৫ তারিখ থেকে।’
এদিকে, এই স্থায়ী হাটে কুষ্টিয়া থেকে গরু নিয়ে আসা এক ব্যবসায়ী মো. তনু মিয়া বলেন, হাটের মূল বেচাকেনা হয় শেষের তিন থেকে চার দিন। তাই তেমন তাড়াহুড়া এখনো নেই। ইতিমধ্যে হাটের নিয়মিত বিক্রেতারা কিছু কোরবানির পশু নিয়ে এসেছেন। তবে, বিক্রি হয়নি একটিও।
কুষ্টিয়া থেকে আসা বিক্রেতা মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গতকাল ঢাকায় গরু নিয়ে এসেছি। এবার ১০টি গরু নিয়ে আসছি। আমরা সারা বছরই এখানে ব্যবসা করি। কিন্তু ঈদের বেচাকেনা এখনো শুরু হয় নাই। ১৫ থেকে ১৬ তারিখের দিকে বিক্রি শুরু হবে।
দেশের সর্ববৃহৎ কোরবানির পশু বিক্রির হাটের নিরাপত্তা রক্ষা পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি থাকবে হাট ইজারাদারের পক্ষ থেকে ভলান্টিয়ার দল।
হাটের ইজারাদার মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘হাটে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাসহ সবার নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য পুলিশ থাকবে। র্যাবের সদস্যরাও থাকবেন। হাটের পক্ষ থেকেও প্রচুর ভলান্টিয়ার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিন চার দিন পর থেকেই তারা কাজ করবে।’
করোনায় এবার পশুর হাট বসবে কিনা এমন কোনো নির্দেশনা পাওয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে এখনো নির্দেশনা আসেনি। শুনেছি আগামী সপ্তাহে মিটিং করবে। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবার হাট কোথায় কোথায় বসবে।
তিনি বলেন, করোনায় গতবছরও আমরা হাট পরিচালনা করেছি। হাটে আসা ক্রেতারা যেন স্বাস্থ্যবিধি মানেন সেদিকে আমরা নজর রেখেছিলাম। হাটের বিভিন্ন স্থানে জীবাণুনাশক স্প্রে রেখেছিলাম। এবারো সব ধরনের ব্যবস্থাই থাকবে।
গাবতলি হাটে গিয়ে দেখা গেছে, হাটের প্রধান গেট বানানোর কাজ এখনো চলছে। এছাড়া হাটের প্রধান আকর্ষণ থাকে বড় গরু। প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে।
জানা গেছে, এবার ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে বেশ কয়েকটি হাট বসার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটির হাট: গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট (স্থায়ী হাট), উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় অবস্থিত বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদনগর) পশুর হাট, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজ সংলগ্ন মস্তুল ডুমনী বাজারমুখী রাস্তার উভয়পাশের খালি জায়গা, উত্তরখান মৈনারটেক শহীদনগর হাউজিং প্রকল্পের খালি জায়গা, ভাষানটেক রাস্তার নির্মাণাধীন অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত অংশ এবং পাশের খালি জায়গা, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং ব্লক-ই সেকশন-৩ এর খালি জায়গা, উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমের অংশ এবং ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের ফাঁকা জায়গা, মিরপুর সেকশন ৬ ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটির হাট: সারুলিয়া পশুর হাট (স্থায়ী হাট), পশুর হাট বসবে মেরাদিয়া বাজার-সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, গোপীবাগ বালুর মাঠসহ কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা ইস্টঅ্যান্ড ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন উন্মুক্ত জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজার মৈত্রী সংঘের ক্লাবসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, হাজারীবাগ এলাকায় ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, আফতাবনগর (ইস্টার্ন হাউজিং) ব্লক ই, এফ, জি, এইচ সেকশন ১ ও ২ এর খালি জায়গা, আমুলিয়া মডেল টাউনের আশপাশের খালি জায়গা, লালবাগের রহমতগঞ্জ ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, শ্যামপুর-কদমতলী ট্রাক স্ট্যান্ড সংলগ্ন খালি জায়গা, গোলাপবাগে সিটি করপোরেশন মার্কেটের পেছনের খালি জায়গায়, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটসংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা।