সান ফ্রান্সিসকোর সান্তা ক্লারার শহরের মেয়র লিসা এম. গিলমোর বলেছেন, ‘সান্তা ক্লারাতে অনুষ্ঠিত ‘রোড শো’ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে অপার সম্ভাবনা সৃষ্টিতে সহায়ক হবে। একইসঙ্গে দু’দেশের প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এ রোড শো সম্ভাবনার অনেক নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।’
সোমবার (২ আগস্ট) সান ফ্রান্সিসকোর স্থানীয় সময় বিকাল সাড়ে ৫টায় (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট সকাল সাড়ে ৬টা) হায়াত রিজেন্সি সান্তা ক্লারা হোটেলের বল রুমে রোড শো’র শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি এ আশা ব্যক্ত বলেন।
এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সান্তা ক্লারার শহরের কাউন্সিল মেম্বার ক্যাফি ওফানাবি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
লিসা এম. গিলমোর বলেন, বাংলাদেশের ডিজিটাল যোগাযেগ দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। পাশপাশি দেশটির সামাজিক সম্প্রীতি অর্জিত হয়েছে। এ রোড শোর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করতে সহায়তা করবে।
লিসা এম. গিলমোর বলেন, রোড শো’র এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি আনন্দিত। সান্তা ক্লারার মেয়র হিসেবে আমি এ অনুষ্ঠান আপনাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই শহর আপনাদের অতিথি হিসেবে পেয়ে সত্যিকার অর্থেই গর্বিত। কোভিডের কারণে প্রায় দেড় বছরের মতো সময় ধরে এখানে সব কিছু বন্ধ ছিল। অনেকদিন পর আমি কনভেনশন সেন্টার এলাকায় প্রথম অনুষ্ঠান করতে এসেছি। আমি এখানে এসে খুব খুশি হয়েছি। এ ইভেন্টটি করতে আমাদের শহরকে বেছে নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। এ জন্য আমি সত্যিই খুব সন্তুষ্ট। এই শুভ সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এ রোড শো’তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সহযোগিতা এবং প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে সহযোগিতার প্রতিফলন ঘটবে। সিলিকন ভ্যালিতে আমাদের কোম্পানিগুলোর জন্য বাংলাদেশের মতো উদীয়মান দেশের ব্যবসায় সম্প্রসারনে সম্ভাবনা রয়েছে।
সান্তা ক্লারার মেয়র বলেন, বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীতে বছরব্যাপী উদযাপনের সময়ে এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। আজকের অনিশ্চিত চ্যালেঞ্জিং সময়ে শেখ মুজিব রহমানের কল্পনা বাস্তবায়নের ধারা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চল এবং এর বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক অর্জন করেছেন।
তিনি আরো বলেন, গত এক দশক ধরে তার (শেখ হাসিনা) ভিশন এবং দিক নির্দেশনায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলায় পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ কয়েক ধাপ এগিয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে দেশটির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আর এটি বোঝা যাচ্ছে দেশটির সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নতি দেখে। যা সারা বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো অনুসরণ করতে পারে। উপরন্তু, দেশটির জনগনের আয়ু উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি শিশু ও মাতৃমৃত্যু দ্রুত হ্রাস পেয়েছে এবং নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে।
রোড শো’তে শুভেচ্ছা বক্তব্যে শেষে সান্তা ক্লারার মেয়র লিসা এম. গিলমোর সালমান এফ রহমান ও অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে মেয়রাল সার্টিফিকেট প্রদান করেন (মেয়রের পক্ষ থেকে স্বীকৃতি সনদ)। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সান্তা ক্লারার মেয়রকে নকশি কাঁথা উপহার দেওয়া হয়। মেয়র গিলমোর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্রেস্ট দেন। ক্রেস্টটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দিতে সালমান এফ রহমানের হাতে তুলে দেন তিনি।
সান ফ্রান্সিসকোর এই রোড শো’তে মঞ্চে প্রথমেই বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান ড. অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি ও লস অ্যাঞ্জেলসে সাফল্যের পর এবার আমেরিকার অন্যতম বড় শহর সান ফ্রান্সিসকোর সিলিকন ভ্যালিতে এটি ছিল রোড শো’র চতুর্থ ও শেষ পর্ব।
‘দি রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার: পটেনশিয়ালস অব ট্রেড এবং ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’- শীর্ষক চতুর্থ পর্বের এ রোড শোতে সান ফ্রান্সিসকোর বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারী এবং স্টেক হোল্ডাররা অংশ নেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের শেয়ারবাজারের ব্যাপ্তি ও প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে বিএসইসি। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে আগত অতিথিরা বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধা এবং সরকারের গৃহীত বিনিয়োগবান্ধব নীতি আমন্ত্রিত অতিথিদের সামনে তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের চারটি শহরের মধ্যে গত ২৬ জুলাই নিউ ইয়র্কে প্রথম পর্ব, ২৮ জুলাই ওয়াশিংটন ডিসিতে দ্বিতীয় পর্ব, ৩০ জুলাই লস অ্যাঞ্জলসে তৃতীয় পর্ব এবং ২ আগস্ট সান ফ্রান্সিসকোতে চতুর্থ ও শেষ পর্বের রোড শো সাফলতার সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে আমেরিকার চারটি শহরে বিএসইসির উদ্যোগে আয়োজিত এই রোড শোকে আরও এগিয়ে নিতে অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে বাংলাদেশের টেক জায়ান্ট ওয়ালটন।