সদ্য মুক্তি পাওয়া ফরাসি চলচ্চিত্র ‘লাস্ট মার্সেনার’ থেকে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ বিষয়ে আপত্তিকর সংলাপ এখনো সরিয়ে নেয়নি পরিচালক ডেভিড শ্যারন। এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়াও জানানি নেটফ্লিক্সের কর্তা ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আবারও বাংলাদেশে নিযুক্ত ফরাসি রাষ্ট্রদূত জ্যাঁ মেরিন সুহ এবং প্যরিসে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেনকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমই)।
চিঠিতে ফরাসি সরকার ও চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের প্রশ্নবিদ্ধ সংলাপটি অনতিবিলম্বে অপসারণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে সংগঠনটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। গত ৯ আগস্ট চিঠি দেওয়া হলেও এ বিষয়ে কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত গ্রহণ করেনি প্যারিস।
এর আগে নেটফ্লিক্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও চলচ্চিত্র পরিচালককে বাংলাদেশের এই উদ্বেগের বিষয়টি জানানো হলেও তাদের কাছ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি বলে দাবি বিজিএমইএর। সংগঠনটি বলছে, চলচ্চিত্রটি এখনও নেটফ্লিক্সেরে প্লে-লিষ্টে আছে এবং চলচ্চিত্র থেকে সেই আপত্তির সংলাপগুলোও সরিয়ে ফেলা হয়নি।
বিজিএমইএর দেওয়া চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ শুধু যে আমাদের জাতির জন্য গর্বের বিষয়, তা নয়; তারচেয়েও এর ব্যপ্তি আরও ব্যাপক। এর মধ্য দিয়ে জাতি হিসেবে আমাদের গৌরবময় আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ এর মূল লক্ষ্যই হলো দেশের ব্র্যান্ডিং। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে লাখো লাখো প্রাণের বিনিময়ে। এই স্বাধীনতা অজর্নের ৫০ বছরের ধারাবাহিকতায় পোশাক শিল্প আজ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। গত তিন দশক ধরে অর্থনীতির অন্যান্য খাতগুলোতেও এই শিল্পের সরব পদচারণা প্রশংসিত হয়েছে।
বিজিএমইএ দাবি করে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প কোভিড-১৯ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত, আন্তর্জাতিক বাজার তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাওয়ার পথে রয়েছে, তখন আমাদের নিজস্ব ব্র্যান্ড নিয়ে এ ধরনের অযৌক্তিক ও আপত্তিকর মন্তব্য কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সংগঠনটি বলছে, ‘সত্যিকার অর্থেই, আমরা বিশ্ব দরবারে আমাদের পোশাক শিল্পকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছি। তাই পোশাক শিল্পকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য আমাদেরকে ব্যথিত করেছে। আমরা এর নিন্দা জানাই।
বিজিএমএইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করা মানবাধিকার আইন ১৯৯৮ এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। তবে এটি অবশ্যই দায়িত্বশীলতার সাথে পালন করতে হবে। তারপরও জনপ্রতিনিধিরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারকে সীমাবদ্ধ রাখার ক্ষমতা রাখেন, যদি কিনা সেটি কোন সুপ্রতিষ্ঠিত খ্যাতিকে বিনষ্ট করে দেয়। তারপরে বলা যায়, চলচ্চিত্রে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নিয়ে যে মন্তব্য আছে, তা ভুল। কারণ, বাংলাদেশ বুলেট প্রুফ জ্যাকেট তৈরি করে না। গত চার দশক ধরে আমরা যে পোশাক তৈরি করছি, তা বিশ্বব্যাপী ক্রেতা ও ভোক্তাদের আস্থা অর্জন করেছে তার গুণগত মান ও প্রতিযোগিতামূলক মূল্য দিয়ে। অতএব, এটি একটি যুক্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।