অর্থনীতি

ইভ্যালির গ্রাহকরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়: টিক্যাব

আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির গ্রাহকরা যাতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টেলি কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিক্যাব)।

বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) অর্থ আত্মসাতের মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন এবং তার স্বামী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেলের গ্রেপ্তারের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এ আহ্বান জানান টিক্যাবের আহ্বায়ক মুর্শিদুল হক।

তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘জুলাইয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক জানায় ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ কোটি ১৮ লাখ টাকা। গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছ থেকে ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকার মালামাল বাকিতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

এরপরও প্রতিষ্ঠানটি তাদের সাইক্লোন অফার বন্ধ করে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। গ্রাহকদের নানা অনিয়মের অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় ছিল প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে গত ২৫ আগস্ট ইভ্যালির এমডি ও চেয়ারম্যানের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টের হিসাব চায় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এরপর গত ১৪ সেপ্টেম্বর ইভ্যালির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজকে ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও এমডিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

তিনি আরও বলেন, ‘ইভ্যালি চেয়ারম্যান ও এমডির গ্রেপ্তারে এ প্রতিষ্ঠানে অর্থ আটকে থাকা গ্রাহকরা তাদের অর্থ ফেরত পাওয়া নিয়ে আতঙ্কিত।’

এর আগে গত ১৮ আগস্ট আরেকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের মূল মালিক সোনিয়া মেহজাবিন ও তার স্বামী মাসুকুর রহমানকে আইনের আওতায় নেওয়া হয়েছে।  

ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ১১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছে এর গ্রাহকরা। একইভাবে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন গ্রাহকরা। লোভনীয় অফার দিয়ে এবং আস্থাশীল ব্যক্তিদের দিয়ে বিজ্ঞাপন বানিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমে প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের কাছে থেকে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় ছিল ইভ্যালি।

টিক্যাব আহ্বায়ক বলেন, ‘করোনা মহামারিতে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে অনলাইন প্লাটফর্মে পণ্য কেনাকাটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বেশির ভাগ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস সন্তোষজনক হওয়ায় মানুষের আস্থাও বেশ বৃদ্ধি পায়। আর মানুষের এই আস্থাকে পুঁজি করে কিছু প্রতারক চক্র লোভনীয় অফারের ফাঁদে ফেলে মানুষের অর্থ হাতিয়ে নেয়া শুরু করে। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি। পাশাপাশি গ্রাহকদের প্রতি আহ্বান জানাবো আপনারা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বরাবরে যথাযথ প্রমাণসহ অবিলম্বে অভিযোগ দায়ের করুন।’

বিবৃতিতে টিক্যাব জানায়, অবিলম্বে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অধীন একটি বিশেষ সেল গঠন করে অনলাইনে এ সকল প্রতিষ্ঠানের যেসব গ্রাহক অর্থ পরিশোধের পরও এখনো পণ্য পাননি তাদের অভিযোগ গ্রহণ করতে হবে এবং অর্থ উদ্ধার করে গ্রাহকদের মধ্যে ফিরিয়ে দিতে হবে।

ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ অভিযুক্ত সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগের ভিত্তিতে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে এবং গ্রাহকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা টিকিয়ে রাখতে ভবিষ্যতে যাতে গ্রাহকরা প্রতারিত না হয় সেজন্য ই-কমার্স সেক্টরে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে ও অভিযোগ প্রমাণ হলে গ্রাহকদের আস্থা ফেরাতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।