ই-কমার্সের নামে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের অর্থ লুটপাটের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এফবিসিসিআই-এর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ।
তিনি বলেন, ‘দেশে ই-কমার্সের ব্যাপক প্রসার হলেও আইনী কাঠামোর অনুপস্থিতি ও পরিবীক্ষণ না থাকায় এই খাতে জবাবদিহিতা গড়ে ওঠেনি। কিছু সংখ্যক মুনাফালোভী প্রতারক গ্রাহকদের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে টাকা লুট করছে।’
শনিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এফডিসিতে ‘ই-কমার্স খাতে নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের পদক্ষেপ’ বিষয়ক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
এ কে আজাদ বলেন, ‘যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ লুট করেছে তাদের সবাইকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে প্রতারিত হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থা নিতে হবে।’
যেখানে দেশের ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার পরিমাণ বাড়ছে সেই টাকা বিনিয়োগে না এনে সাধারণ নাগরিকদের অস্বাভাবিক এবং লোভনীয় অফার দিয়ে তাদের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দিনশেষে অনলাইন পণ্য কেনার নামে প্রতারণার শিকার গ্রাহকদের সংখ্যা দীর্ঘায়িত এবং সমাজে অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে। সার্বিকভাবে এই খাতে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বিশেষায়িত সেল গঠন জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘দেশের কোম্পানি আইন, ট্রেড লাইসেন্স আইন বা আয়কর আইনে ই-কমার্স হিসেবে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়নি। বর্তমানে ই-কমার্স ব্যবসা তথ্য প্রযুক্তি সেবা হিসেবে নিবন্ধিত হয়। অনুসন্ধানে দেখা যায় বাংলাদেশে, ই-কমার্স খাতে নিয়োজিত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কোনো ঘোষণা ছাড়াই ব্যবসা বন্ধ করে আত্মগোপন করেছে। সম্প্রতি আলোচিত ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এবং ইঅরেঞ্জের মালিক ও তার স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর ই-কমার্সের প্রতারণার চিত্র আরও দৃশ্যমান হয়।’
তিনি বলেন, ‘ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জ ছাড়াও নিরাপদ ডটকম, ধামাকা শপিং ডটকম, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিড ডটকম ডটবিডি, কিউকুম নামক আরও অনেক প্রতিষ্ঠান গা-ঢাকা দেওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরা ভোক্তাদের বোকা বানিয়ে মায়াজাল ও প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বাহারি বিজ্ঞাপন, অস্বাভাবিক ও আকর্ষণীয় অফার, অবিশ্বাস্য ডিসকাউন্ট, ক্যাশব্যাক ইত্যাদি প্রলোভনের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। প্রাথমিক হিসাবে জানা গেছে ইভ্যালির দেনা ৪০৩ কোটি টাকা আর সম্পদ রয়েছে ৬৫ মাত্র কোটি টাকার। গ্রাহকদের কাছ থেকে পণ্যমূল্য বাবদ ২১৪ কোটি টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহ না করা এবং পণ্য কেনা বাবদ ১৯০ কোটি টাকা দেয়নি ইভ্যালি। এছাড়াও ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রাহকের ১ হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।’
সভা থেকে ই-কমার্স খাতে নৈরাজ্য বন্ধ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা তৈরির মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি সরকারের কাছে সাতটি সুপারিশ করেছে।
সুপারিশগুলো হলো- ১. ই-কমার্স খাতের নৈরাজ্য বন্ধে নীতিমালা ও নির্দেশিকার পাশাপাশি আইন প্রণয়ন জরুরি। ২. ই-কমার্স খাতে বিদ্যমান নৈরাজ্য অনুসন্ধান ও আইনি কাঠামো তৈরির জন্য একটি কমিশন গঠন করা। ৩. জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অনলাইন কেনাকাটায় বিভিন্ন প্রতারণায় অভিযুক্তদের দৃশ্যমান শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রহকের অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা করা। ৪. দুর্নীতি দমন কমিশন, প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের বিদ্যমান আইনের আওতায় প্রতারিত গ্রাহকরা কীভাবে আই নি প্রতিকার পেতে পারেন তা জনগণকে অবহিত করা। ৫. ইভ্যালি বা ই-অরেঞ্জসহ অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যারা প্রতারিত হয়েছে তাদের সঠিক তালিকা ও অর্থের পরিমাণ জানার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি কমিটি গঠন করা। ৬. প্রতারণার সঙ্গে জড়িত কাউকে ই-ক্যাব বা অন্য কোনো ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য না করা। ৭. ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতারনায় অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসক বসিয়ে তাদের সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে যতোটা সম্ভব ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেওয়া।
প্রতিযোগিতায় ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি এর বিতার্কিকরা চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।