অর্থনীতি

‘কর নিয়ে চোর-পুলিশ খেলা বন্ধ করতে হবে’

কর আদায় নিয়ে করদাতা আর রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে চোর পুলিশ খেলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেছেন, নতুন আয়কর আইন এমনভাবে করা উচিত যাতে করদাতা ও রাজস্ব বোর্ডের মধ্যে চোর-পুলিশ খেলা বন্ধ হয়।

বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) আয়কর আইন-২০২২ এর ওপর আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এমন মতামত দিয়েছে। 

ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম(ইআরএফ) ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। রাজধানীর পল্টনে ইআরএফ কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি শারমীন রিনভী। 

ইআরএফ’র সঞ্চালনায় মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বারভিডা সভাপতি আব্দুল হক, এমসিসিআইর বোর্ড সদস্য হাসান মাহমুদ, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশের (আইবিএফবি) সভাপতি হুমায়ুন কবির, আইসিএবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান খসরু প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বর্তমান আইনে এমন কিছু বিধি রয়েছে যা করদাতাদের হয়রানির সুযোগ সৃষ্টি করে। আবার কর ফাঁকিরও সুযোগ রয়েছে। ফলে করদাতা ও কর কর্মকর্তা কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না। নতুন আইন এ অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি করেছে। তবে আইনটি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করে আরও সময় নেওয়া উচিত। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মতামত রাখার সুযোগ দেওয়া উচিত।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেন, আইনের ক্ষেত্রে প্রণয়নকারী, প্রয়োগকারী ও মান্যকারীদের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। তা না হলে আইন লক্ষ্য অর্জন করে না। 

এনবিআরের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, আয়কর আইনের মত আইনে মৌলিকতা আনতে সময় দরকার। যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তার অর্থনীতির দক্ষতা বাড়ছে কিনা, সাম্য নিশ্চিত হচ্ছে কিনা তা দেখা দরকার।

বিশেষ অতিথি এনবিআর’র প্রথম সচিব (আয়কর নীতি) মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, আয়কর এমন ব্যবস্থা এখানে বৈধ কাজ করলেও হয়রানি মনে হয়। ফলে করদাতাদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। কর দিয়ে গর্ববোধ করতে হবে। দেশের মানুষ কর দিচ্ছে বলেই দেশ এগোচ্ছে।  

তিনি বলেন, নতুন আইন বিষয়ে জাতীয় সংসদে প্রস্তাব পাশ হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগও কাজটি দ্রুত শেষ করতে চাচ্ছে। এজন্য মনে হচ্ছে তাড়াহুড়ো করছে এনবিআর। কিন্তু এনবিআর মনে করে সবার মতামত নিয়েই উপযুক্তভাবে আইনটি করা দরকার। এজন্য এনবিআর সময় নিয়েছে। তবে বেশি দেরি করারও সুযোগ নেই।

আগাম কর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবাই যদি অক্টোবর নভেম্বরে এসে কর পরিশোধ করে, তাহলে বছরের বাকি সময় ব্যয়ের টাকা সরকার কোথায় পাবে। এজন্য আগাম কর, উৎসে কর নেওয়া হয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ ধরনের পদ্ধতি রয়েছে।

অডিট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাত্র ৩ শতাংশ করদাতাকে অডিট করা হয়। ফলে করদাতাদের সিংহভাগই অডিটের বাইরে থাকে। সরকার বিভিন্ন খাতে কর ছাড় দেয়। যা জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এনবিআর সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখেছে যে বিভিন্ন খাতে যে কর ছাড় দেওয়া হয়, তার পরিমাণ জিডিপির ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

বিল্ডের চেয়ারপার্সন আবুল কাশেম খান বলেন, দেশ বর্তমানে একটা রূপান্তরের পর্যায়ে রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হতে যাচ্ছে। এতে সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা আসবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে। দেশের রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা কম। এটা এক ধরনের দুর্বলতা। কর আইন, আমদানি রপ্তানি নীতির মত উদ্যোগের মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এসব নীতিমালাতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুবিধা দিতে হবে।

তিনি বলেন, এসব নীতিমালা করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করা খুবই জরুরি। কিন্তু  আয়কর আইন চূড়ান্ত হওয়ার পথে। ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানেন না। ব্যবসায়ীদের কাছে এনবিআরের পক্ষ থেকে মতামত চাওয়া হলেও সময় দেওয়া হয়েছে খুবই কম। এজন্য আরও সময় প্রয়োজন।  

তিনি বলেন, মানুষের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকা দরকার। কর হার বাড়ানো হলে কর ফাঁকির প্রবণতাও বাড়বে। এজন্য করের হার কমিয়ে আওতা বাড়ানো দরকার।

তিনি আগাম আয়করকে (এআইটি) একটি ‘ব্যাড ল’ উল্লেখ করে বলেন, এনবিআর ধরেই নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা কর দিতে চায় না। ফলে আগেই কর কেটে নিচ্ছে। হয়ত কেউ কেউ কর ফাঁকি দিতে চায়। সেজন্য সবাইকে চোর ভাবলে তো হবে না। করের অ্যাসেসমেন্টেও হয়রানি হয়। সবচেয়ে বেশি হয়রানি হয় অডিটে। প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা এসব সমস্যা সমাধান করতে পারলেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা তা পারেন না।