অর্থনীতি

শুরু হচ্ছে বাজেট সংশোধনের কাজ, কমতে পারে প্রবৃদ্ধির হার

চলতি অর্থবছরের বাজেট সংশোধনের কাজ শুরু হচ্ছে। বাজেটের বড় দুটি বিষয়ে পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হবে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৭ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে পরিবর্তিত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে তা অর্জন করা সম্ভব হবে না। এ অবস্থায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। একইভাবে বাজেটে মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ক্রমান্বয়ে বেড়ে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতির হারও সাড়ে ৭ শতাংশের ওপর প্রাক্কলনের প্রস্তাব করা হতে পারে।

সূত্র জানায়, এমন একটি কঠিন সময়ের মধ্যে সরকারের আর্থিক নীতিনির্ধারক ‘আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল’ সভাটি আগামী ২২ ডিসেম্বর আহ্বান করা হয়েছে। প্রতি বছর এ সভাটি অর্থবছরে দুইবার অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এর একটি  ডিসেম্বরে, অন্যটি এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এই সভায় কৃষিমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ছাড়াও অর্থ, এনবিআর, বাণিজ্য, কৃষি ও পরিকল্পনা সচিবরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভার আগে চলতি অর্থবছরে বাজেট সংশোধন ও আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার নিয়ে অর্থ বিভাগে একটি সভার আয়োজন করা হয়েছে। সভায় শুধু অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। এই সভায় চলতি অর্থবছরের বাজেটে সংশোধিত আকার ও আগামী অর্থবছরের বাজেটের একটি প্রাথমিক আকার প্রাক্কলন করা হতে পারে।

সূত্র জানায়, কো-অর্ডিনেন্স কাউন্সিলের সভায় সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি), রফতানি, আমদানি, রাজস্ব আদায়, মূল্যস্ফীতি, রেমিট্যান্সসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে। অন্যদিকে বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির সভায় চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন পরিস্থিতি ও জিডিপি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, অর্থবছরের মাঝামাঝি সময় এসে আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশের অর্থনৈতিক খাতে বেশ কয়েকটি ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে, রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ। এর পাশাপাশি মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা, বিশ্ববাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং রিজার্ভ কমে যাওয়ায় আমাদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে।

তিনি বলেন, রফতানি কিছুটা বাড়লে আগামী কয়েক মাসে এর মোড় কোন দিকে যাবে তা এখনি বলা যাচ্ছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সহসা থামছে না। এর প্রভাবে উন্নত দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। ইউরোপের ক্রেতারা পোশাক ক্রয় কমিয়ে দিতে পারে। এটি ঘটলে দেশের প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাক রফতানি মারাত্মক ব্যাহত হবে। কারণ এসব দেশে তৈরি পোশাক বেশি রফতানি হয়ে থাকে।

তিনি বলেন, এলসি জটিলতার কারণে দেশে ব্যবসা পরিস্থিতিও কিছু ঝিমিয়ে পড়েছে। আগামীতে রাজস্ব আদায় কতখানি বাড়বে তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। সভায় এ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে সামষ্টিক অর্থনৈতিক বিষয়ে একটি বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হবে। সভায় অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এটি উপস্থাপন করবেন।

এদিকে, দুই মাসের ব্যবধানে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমলেও এখনো তা সরকারি হিসেবে আট শতাংশের ওপরে রয়েছে। গেল নভেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল আট দশমিক ৮৫ শতাংশ। এটি অক্টোবরে ছিল আট দশমিক ৯১ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৯ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সানেমের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দেশের মূল্যস্ফীতি সরকারি হিসেবের চেয়ে আরো বেশি এবং তা ১২ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

শুধু মূল্যস্ফীতিই নয়, অক্টোবরে বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতিও বেড়েছে। রেমিট্যান্স ও আমদানি থেকে পাওয়া অর্থের তুলনায় আমদানিতে ব্যয় বেশি হওয়ায় এটি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরের শেষে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। এক বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে ঘাটতির পরিবর্তে ৪ দশমিক ০৫ বিলিয়ন ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। এই ঘাটতি বাড়তে থাকার অর্থ হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের ওপর চাপ অব্যাহত রয়েছে। দেশের রিজার্ভের পরিমাণও ২৬ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে, যা দিয়ে সাড়ে তিন মাস আমদানি ব্যয় নির্বাহ করা যাবে।

এই অবস্থার মুখোমুখি হয়ে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট সংশোধন করার কাজ করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগ।