পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রিং সাইন টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণ করার সম্মতি পেয়েছে ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলস। এটি কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওয়াং জেমির ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। রিং সাইন টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করায় ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলসকে অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
সম্প্রতি রিং সাইন টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং ওয়াইজ স্টারের চেয়ারম্যানের কাছে এ বিষয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে বলে বিএসএসসি সূত্রে জানা গেছে। সেই সঙ্গে বিষয়টি বেপজা কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এর আগে গত ১৭ মে ইউনিয়ন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিং সাইন টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণে আগ্রহী বলে বিএসইসির চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠায়।
বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, রিং সাইন টেক্সটাইলকে অধিগ্রহণের জন্য ওয়াইজ স্টারকে কমিশন নীতিগত অনুমতি দিয়েছে। তাই রিং সাইনের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের শেয়ার ওয়াইজ স্টারের কাছে স্থানান্তর করার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি। সেই সঙ্গে ওয়াইজ স্টার এবং এর মনোনীতদেরকে প্রাসঙ্গিক সিকিউরিটিজ আইন মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
এর আগে বর্তমান পরিস্থিতি উল্লেখ করে ওয়াইজ স্টার বিএসইসিকে এক চিঠিতে জানায়, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধের কারণে মন্দা চলছে, ফলে গার্মেন্টসের অর্ডার কমে গেছে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী ডলারের হার বৃদ্ধির কারণে বর্তমান পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় অর্থনীতিবিদরা উদ্বিগ্ন। বর্তমানে রিং সাইনের মোট দায় বেপজা, সুদের সাথে ব্যাংকের বকেয়া, কাস্টমস বকেয়া এবং অন্যান্য সবমিলিয়ে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা, যেখানে সম্পদ তার চেয়ে কম। প্রায় ১০-১২ মিলিয়ন সক্ষমতার মধ্যে কারখানাটিকে প্রতি মাসে সর্বোত্তম উৎপাদনে চালানোর জন্য আরও ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
এদিকে স্টেকহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার জন্য, বিএসইসি ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিয়েছে এবং সফলভাবে চুক্তির জন্য সাহায্য করছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বস্ত্র ও গার্মেন্টস শিল্পকে সহায়তা করতে সরকার উদ্বিগ্ন। যে কারণে টেকসই এবং অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন করার জন্য শর্তাবলীর মাধ্যমে এ শিল্পের অনুকূলে ব্যাংক ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি সার্কুলার জারি করেছে। যাতে ব্যাংক ন্যূনতম ডাউন পেমেন্ট সহ ৭ বছর পর্যন্ত ঋণ পুনঃনির্ধারণ করতে পারে৷
এরই প্রেক্ষিতে সকল ব্যাংক যুক্তিসঙ্গতভাবে সুদ মওকুফ করতে এগিয়ে এসেছে এবং সাম্প্রতিক সার্কুলার অনুযায়ী ঋণ পুনঃনির্ধারণে কোম্পানিকে সাহায্য করছে৷এছাড়া ওয়াইজ স্টার দায় পর্যালোচনার জন্য এনবিআর (কাস্টমস, এক্সাইজ এবং ভ্যাট) এর সাথে কাজ করেছে।
বেপজা বিভিন্ন সারচার্জ মওকুফ করে কোম্পানিটির লেনদেন সফলে এবং সাহায্য করার জন্য কোনও অনুকূল পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে জানিয়েছে ওয়াইজ স্টারের এমডি। বেপজার প্রতি মাসে ২ শতাংশ সারচার্জ খুব বেশি, যা প্রতি মাসে প্রায় ১ দশমিক ৫০ লাখ ডলার আসে এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে তা ঠিক নয়। এদিকে রিং শাইনের সাথে সাম্প্রতিক বেপজার বৈঠকে জানানো হয় যে, ৩০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দুই মাসের মধ্যে দিতে হবে। কিন্তু ওয়াইজ স্টার জমার কিছু অংশ এখন এবং কিস্তিতে ৫ বছরের বকেয়া সাথে সমন্বয় করতে প্রস্তুত রয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বেপজার সঙ্গে বৈঠকের বিষয় বিএসইসির অবগতির জন্য এবং বেপজা কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার জন্য সংযুক্ত করা হয়েছে। ওয়াইজ স্টার এই বিষয়ে বিএসইসিকে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানায়, কারণ কোম্পানিটি রিং শাইনের কারখানায় কাজ শুরু করতে প্রস্তুত এবং তারা আশা করে বিএসইসি রিং সাইনের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মতি দেবে। এ বিষয়ে ওয়াইজ স্টারের আইনজীবী এবং হিসাবরক্ষকরা সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া এবং যথাযথ পরিশ্রম করছে।
উল্লেখ, রিং সাইন টেক্সটাইলকে ইউনিয়ন গ্রুপ অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসায় ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলস এ কাজে আগ্রহ প্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, বিএসইসির অধিগ্রহণের অনুমতি ও সহায়তা পেলে প্রথম ৬ মাসের মধ্যে রিংসাইন টেক্সটাইলের সকল মেশিন রিমডেলিং এবং মেরামত করা হবে। আগামী ২০২৩ সালের মার্চ/এপ্রিলের মধ্যে প্রতি মাসে ৬ থেকে ৮ মিলিয়ন (৬০-৮০ লাখ টাকা) ব্যবসায় থেকে আয় করা সম্ভব হবে। এতে কোম্পানিটির প্রতি হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।