মাত্র ১০ হাজার টাকা ডাউনপেমেন্ট দিয়ে কিস্তি সুবিধায় ওয়ালটন প্লাজা থেকে একটি এলইডি স্মার্ট টিভি কিনেছিলেন কেরাণীগঞ্জের জিনজিরা এলাকার গৃহিণী হাসিনা বেগম। ২টি কিস্তি পরিশোধের পর জানতে পারেন জরায়ু ক্যানসার বাসা বেঁধেছে শরীরে।
টাকার অভাবে ঠিকঠাক চিকিৎসাও করানো যায়নি। সম্প্রতি ক্যানসারেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এ প্রেক্ষিতে অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়িয়েছে ওয়ালটন প্লাজা। বাকি সব কিস্তি মওকুফ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পরিবারকে দেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা। ওয়ালটন প্লাজার ‘কিস্তি ক্রেতা ও পরিবার সুরক্ষা নীতির’ আওতায় এই আর্থিক সহায়তা পেয়েছে হাসিনার পরিবার।
উল্লেখ্য, কিস্তিতে পণ্য কেনা গ্রাহকদের জন্য ‘কিস্তি ক্রেতা ও পরিবার সুরক্ষা নীতি’ সুবিধা দিচ্ছে ওয়ালটন প্লাজা। এর আওতায় দেশের যেকোনো ওয়ালটন প্লাজা থেকে কিস্তিতে পণ্য ক্রয়কারীদের কিস্তি সুরক্ষা কার্ড দেওয়া হচ্ছে। কিস্তি চলমান থাকা অবস্থায় ক্রেতার মৃত্যু হলে পণ্যমূল্যের ভিত্তিতে ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ এবং তার পরিবারের কোনো সদস্য মৃত্যুবরণ করলে ২৫ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত সহায়তা দিচ্ছে ওয়ালটন প্লাজা। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পণ্যের অনাদায়ী কিস্তির টাকা সমন্বয়ের পর অবশিষ্ট টাকা ক্রেতা বা তার পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৩ মার্চ, ২০২৩) উপজেলার কালিন্দী এলাকার ওয়ালটন প্লাজায় আনুষ্ঠানিকভাবে হাসিনা বেগমের স্বামী আব্দুস সালামের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, ওয়ালটন প্লাজার ঢাকা বিভাগের চিফ ডিভিশনাল অফিসার মো. আরিফুল ইসলাম, ডিভিশনাল ক্রেডিট ম্যানেজার মো. আল আমিন সরকার, প্লাজা ম্যানেজার মোশাররফ হোসাইনসহ ওয়ালটনের কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, মারা যাওয়া ক্রেতার বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়ায়। পরিবারসহ কেরাণীগঞ্জেই তাদের বসবাস। গত বছরের ১১ ডিসেম্বর ওয়ালটন প্লাজা থেকে কিস্তি সুবিধায় একটি স্মার্ট এলইডি টিভি কেনেন হাসিনা বেগম। তার কিস্তি ক্রেতা সুরক্ষা কার্ড নম্বর ৭৩৫১৬৮৬৮১০৪০৪৩০৯। চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি মারা যান তিনি। ৪ মেয়ে ও ১ ছেলেসহ ৬ সদস্যের পরিবার তাদের। জরায়ু ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন তার স্বামী আব্দুস সালাম। হয়ে পড়েন ঋণগ্রস্ত।
এ অবস্থায় ‘কিস্তি ক্রেতা ও পরিবার সুরক্ষা নীতি’র আওতায় মৃত গ্রাহকের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে ওয়ালটন প্লাজা। মৃত কিস্তি ক্রেতা হাসিনার পরিবারকে দেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এর থেকে কিস্তির অবশিষ্ট ২৩ হাজার টাকা পরিশোধের পর তারা পেয়েছেন নগদ ২৭ হাজার টাকা।
হাসিনার স্বামী রাজধানীর সোয়ারিঘাট এলাকার পাইকারি মাছ বিক্রেতা আব্দুস সালাম জানান, বাসায় এর আগে থেকেই ওয়ালটনের ফ্রিজ ও টিভি করছেন তারা। ওয়ালটনের কিস্তি ক্রেতা সুবিধার বিষয়টি আগে জানতেন না। মৃত স্ত্রীর আবদারে তার নামেই স্মার্ট টিভিটি কেনা হয়েছিলো। ক্রেতা মারা যাওয়ায় কিস্তি মওকুফ করে উল্টো পরিবারকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়টিতে অবাক তারা। এটা তার কাছে বিস্ময়ের ব্যাপার বলেও জানান তিনি। প্রতিটি কোম্পানির এমনভাবেই ক্রেতার পাশে থাকা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হাজী মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন, ক্রেতা মারা গেলে কিস্তি মওকুফসহ আর্থিক সহায়তা দেওয়া ওয়ালটনের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর উদাহরণ কেবল ওয়ালটনই। কিস্তিতে পণ্য কিনে কিস্তি পরিশোধের আগে মারা গেলেও পণ্যের কোনো দায়ভার গ্রহণ করতে হয় না পরিবারের জীবিত সদ্যদের। এমন একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারা আমার জন্য সৌভাগ্যের। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের জন্য আমরা গর্বিত।