অর্থনীতি

সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে মডেল পিএসসি অনুমোদন

দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে গভীর ও অগভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ আবার শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। এ উদ্দেশ্যে নতুন করে ড্রাফ্ট বাংলাদেশ অফশোর মডেল প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি) ২০২৩ প্রণয়ন করেছে।

বুধবার অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি সেই ড্রাফটে অনুমোদন দিয়েছে।

সূত্র জানায়, দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মোকাবিলার জন্য নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধান ও আবিস্কারের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে সমুদ্র এলাকার মোট ১,১৮,৮১৩ বর্গমাইল এলকায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারত ও মিয়ানমার ইতোমধ্যে তাদের সমুদ্র এলাকায় তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা (অফশোর)-এর ২৬টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ইতোপূর্বে ‘অফশোর’ বিডিং’ আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু সন্তোষজনক সংখ্যক আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি (আইওসি) এতে অংশগ্রহণ  করেনি।

এছাড়া, অংশগ্রহণকারী আইওসিগুলোর মধ্যে ২০১২ সালে ব্লক এসএস-১১ এ জন্য সান্টোষ সাংগু ফিল্ড লিমিটেড এবং ২০১৭ সালে ব্লক ডিএস-১২ এর জন্য পসকো ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন (পিআইসি)-কে নিয়োগ দেওয়া হলেও আর্থিক শর্তাবলি তাদের কাছে আকর্ষণীয় প্রতীয়মান না হওয়ায় তারা পিএসসির অবসান ঘটিয়ে চলে যায়।

সূত্র জানায়, এ অবস্থায় অফশোর-এর মডেল পিএসসিকে সংশোধন করে পুনঃপ্রণয়ন করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। সে অনুযায়ী তেল-গ্যাস অনুসন্ধান জোরদার করার লক্ষ্যে আগের ‘মডেল পিএসসি ২০১২’কে পরিমার্জন করে ‘অফশোর মডেল পিএসসি ২০১৯’ প্রণয়ন করা হয়।

প্রণীত ‘অফশোর মডেল পিএসসি ২০১৯’-এর আওতায় গত ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক বিড রাউন্ড আহ্বানের কথা থাকলেও কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে বর্তমান বৈশ্বয়িক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানিগুলোকে (আইওসি) বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক করার লক্ষ্যে ‘অফশোর মডেল পিএসসি ২০১৯’-কে আরও যুগোপযোগী ও প্রতিযোগিতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

সূত্র জানায়, এ লক্ষ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘উড ম্যাকেঞ্জি এশিয়া প্যাসিফিক লিমিটেড, সিঙ্গাপুরকে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। উক্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দাখিলকৃত রিপোর্টের আলোকে পেট্রোবাংলা কর্তৃক গঠিত একটি কমিটি ‘বাংলাদেশ অফশোর মডেল পিএসসি ২০১৯’ পরিমার্জন করে হালনাগাদ/যুগোপযোগী করে খসড়া ‘বাংলাদেশ অফশোর মডেল পিএসসি’ প্রণয়ন করে। উক্ত খসড়া বাংলাদেশ অফশোর পিএসসির ওপর সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে মতামত সংগ্রহ করা হয়।

উল্লেখ্য, লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত ভেটিংয়ের ১৪টি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ/মতামতের মধ্যে আরবিট্রাটর নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউনাইটেড ন্যাশনস কমিশনস অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ল আরবিট্রাশন রুলস (ইউএনসিঅঅইটিআরএএল রুলস) অনুসরণের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশের সালিস আইন, ২০০১’ অনুসরণ করা এবং আর্টিকেল ৩০.১০ এ উল্লেখিত সালিশের স্থান সিঙ্গাপুরের পরিবর্তে ঢাকা প্রস্তাব করার বিষয়ে প্রদত্ত মতামতটি পুনর্বিবেচনা করার বিষয়ে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগকে অনুরোধ করা হলে উক্ত বিভাগ বিষয় দুটিতে এ বিভাগ কর্তৃক প্রস্তাবিত বিধানে বহাল রাখার বিষয়ে অনাপত্তি জ্ঞাপন করে।

এছাড়া, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়ার আর্টিকেল ১৯.৫ সংশোধনের বিষয়ে যে মতামত দেওয়া হয় তা পুনর্বিবেচনা করে বর্ণিত অনুচ্ছেদটি বিদ্যমান মডেল পিএসসির মতো একইভাবে বহাল রাখার বিষয়ে অনাপত্তি জ্ঞাপনের জন্য এনবিআরকে অনুরোধ করা হয়। এনবিআর ‘আয়কর আইন, ২০২৩’-এর আলোকে এ বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত যৌক্তিকতা বিবেচনায় নিয়ে বর্ণিত আর্টিকেলটি পরিমার্জন করে পাঠায়।

সূত্র জানায়, এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ এবং এনবিআর কর্তৃক সর্বশেষ প্রদত্ত অনাপত্তির আলোকে প্রয়োজনীয় সংযোজন/সংশোধন/পরিমার্জনগুলো সন্নিবেশ করে প্রস্তাবটি ড্রাফট বাংলাদেশ অফশোর মডেল প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট ২০২৩ চূড়ান্ত করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রণীত ‘বাংলাদেশ অফশোর মডেল পিএসসি ২০২৩’-তে গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু বিষয়ে, যেমন-কোস্ট রিকভারি সিলিং, গভর্মেন্ট প্রফিট শেয়ার, গ্যাস প্রাইস এবং সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রীয় স্বার্থে এক্সপ্রোপ্রিটেশন বা স্বত্ব নিরসন এর প্রয়োজন হলে বিদ্যমান ‘দি ফরেন প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট এর বিধান অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে তার বিনিয়োগের বিপরীতে সুরক্ষা প্রদান ইত্যাদি বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয় যার মাধ্যমে সরকার এবং আইওসি উভয়পক্ষই লাভবান হবে। বিদ্যমান ‘বাংলাদেশ অফশোর মডেল পিএসসি ২০১৯’-এর যেসব অংশে সংযোজন/সংশোধন/পরিমার্জন করা হয়েছে তার একটি তুলনামূলক বিবরণী মতামতসহ মেট্রিক্স আকারে এবং উল্লিখিত পরিবর্তন/পরিমাজনগুলো আর্টিকেলওয়ারি যৌক্তিকতা তুলে ধরে পৃথকভাবে একটি স্মরণী প্রস্তুত করা হয়েছে।

সরকার আশা করছে দেশের উত্তরোত্তর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্য গভীর ও অগভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ড্রাফট বাংলাদেশ অফশোর মডেল প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট ২০২৩ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

এ অবস্থায় ড্রাফটি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হলে কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে।