অর্থনীতি

ঋণ নিতে পারবেন নারী উদ্যোক্তারা

ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কেবল পুরুষ নয়, নারীকেও জামানতকারী দেখিয়ে ঋণ নিতে পারবেন নারী উদ্যোক্তারা। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রতিনিধিদল। সাক্ষাতকালে এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলমের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর নারী জামানতকারী দেখিয়ে ঋণ নিতে পারবেন বলে আশ্বাস দেন।

এ সময় এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি খায়রুল হুদা চপল, শমী কায়সার, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, ড. যশোদা জীবন দেবনাথ, মুনির হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, আবু ফারাহ মো. নাছের, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক উপস্থিত ছিলেন।

গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাতকালে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) খুলতে ব্যাংকগুলো ডলারের অতিরিক্ত দাম নেওয়া, সুদহার না বাড়ানোসহ বেশি কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছে। এর মধ্যে ডলারের অতিরিক্ত দাম না নেওয়ার বিষয়েও আশ্বাস দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে চলেছেন নারী উদ্যোক্তারাও। কিন্তু ব্যবসা পরিচালনা এবং সম্প্রসারণের জন্য নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি এখনও ততটা সহজ হয়নি। নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোরও উৎসাহ কম দেখা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এছাড়া ঋণ পাওয়ার জন্য একজন নারী উদ্যোক্তাকে তার বাবা, ভাই কিংবা স্বামীকে জামানতকারী হিসেবে দেখাতে হয়। কোন নারীকে জামানতকারী হিসেবে দেখালে ব্যাংকগুলো সেটি গ্রহণ করতে চায় না উল্লেখ করে তিনি এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে কামনা করেন। একই সাথে ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যাংক ঋণ সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকায় উন্নীত করার আহ্বান জানান মাহবুবুল আলম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে ব্যবসায়ীবান্ধব গভর্নর উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, দেশের অর্থনীতিতে করোনা মহামারির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধজনিত বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিতভাবে আর্থিক ও নীতি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পলিসি সহায়তার কারণে করোনা মহামারির ধকল সফলভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে এবং সে সাথে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধজনিত ধকল সন্তোষজনকভাবে মোকাবিলা করা হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

করোনা মহামারি, ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে বিবেচনায় নিয়ে সব খাতের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের সুবিধা প্রদান ও বিদেশি বাজারে বাংলাদেশি  পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে সুদের হার বৃদ্ধি না করার জন্য অনুরোধ জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।

নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি সহজীকরণে বাংলাদেশ ব্যাংক নানাবিধ উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ব্যাংকগুলো যেন নারীদেরকেও জামানতকারী হিসেবে গ্রহণ করে সেজন্য ব্যাংকগুলোকে বলা হচ্ছে। নারীদের ঋণ প্রাপ্তি সহজ করতে ব্যাংকগুলোকে সম্প্রতি প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

গভর্নর বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে আমরা ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছি। ব্যবসা, বাণিজ্য এবং শিল্প খাতে নারীরা যেন আরও এগিয়ে আসতে পারে সে লক্ষ্যে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ প্রাপ্তি ধাপে ধাপে আরও সহজ করার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইতিমধ্যে যার সুফল ভোগ করছেন অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা।