আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫। যা চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের চেয়ে এক শতাংশ কম। চলতি অর্থবছর এ হার নির্ধারণ করা হয় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেন্স কাউন্সিল’ ও ‘বাজেট ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত’ সভায় বাজেটের প্রবৃদ্ধি সংক্রান্ত এ তথ্যগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভার্চুয়াল সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, অর্থ সচিব, বাণিজ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় আগামী অর্থবছরের জিডিপি কমানোর কারণ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাবের ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে পর্যদুস্ত করে ফেলে। বিশ্ব জুড়েই এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সে ধাক্কা বাংলাদেশেও লেগেছে। এ অবস্থায় জিডিপি কমানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিলো না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সভায় জিডিপি কমানো ছাড়াও মূল বাজেটের আকারও কাটছাট করার প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে আকার ছিল সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবায়ন সক্ষমহীনতার কারণে মূল বাজেটের চেয়ে ছয় দশমিক ৭ শতাংশ কম। অন্যদিকে, আগামী জুন থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে আট লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের নির্ধারিত বাজেটের চেয়ে তের দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি এবং সংশোধিত বাজেট থেকে পাঁচ দশমিক ৬ ভাগ বেশি।
টানা ৫ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ ভাগের ওপরে থাকলেও বাজেটে অর্থমন্ত্রী মূল্যস্ফীতির টার্গেট দিয়েছিলেন ছয় শতাংশ। কিন্তু এই সীমার মধ্যে কোনো অবস্থায় মূল্যস্ফীতিকে ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে এখন মনে করা হচ্ছে। ফলে সংশোধিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার শূণ্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। কিন্তু বছর শেষে এটি ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এটি শেষ পর্যন্ত সাত শতাংশের উপরে থাকবে।
চলতি বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-এর আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না বলে সভায় এই টার্গেট কমিয়ে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
চলতি বাজেটে অনুদান ব্যতীত সার্বিক ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এটি বাজেটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এবং জিডিপি’র ৫ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে দুই লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
এদিকে, আগামী অর্থবছরের বাজেটের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অর্থায়ন তথা রাজস্ব আদায়। বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে এ খাতে আদায়ের টার্গেট থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকা বেশি।