অর্থনীতি

মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে যে ১৪ ব্যাংক 

দিন যতই যাচ্ছে, দেশে ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ ততই বাড়ছে। নানা কারণে খেলাপি ঋণ আদায় কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের সরকারি-বেসরকারি ১৪টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ মোট ৩৭ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।

সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মূলধন ঘাটতিতে থাকা ১৪ টি ব্যাংকের মধ্যে আছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, অগ্রণী, বেসিক, জনতা ও রূপালী ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক। বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে আছে— ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও হাবিব ব্যাংক।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৪ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকের ঘাটতি ৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংকের ৩ হাজার ৩০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ২ হাজার ১২২ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঘাটতি সবচেয়ে বেশি ১৫ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) ঘাটতি ২ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঘাটতি ১ হাজার ৪০২ কোটি টাকা, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের ৭১ কোটি টাকা, সিটিজেন ব্যাংকের ৯৫ কোটি টাকা, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের ১ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংকের ২ হাজার ২৪ কোটি টাকা, পদ্মা ব্যাংকের ঘাটতি ৬০৮ কোটি টাকা। ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঘাটতি ৪৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং হাবিব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। 

ব্যাংকগুলো গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে। ওই অর্থ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়। ব্যাংকিংয়ের আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, আমানতকারীদের অর্থের সুরক্ষা দিতে সব ব্যাংককে একটি নির্দিষ্ট হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের অর্থ ও প্রতিবছরের মুনাফা থেকে এ মূলধন সংরক্ষণের বিধান আছে। দেশে বর্তমানে মূলধন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুসরণ করা হয়। ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বা রিস্ক ওয়েটেড অ্যাসেটের ১০ শতাংশ বা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি, সেই পরিমাণ মূলধন সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যেসব ব্যাংক এ নীতিমালা অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে পারে না, সেসব ব্যাংককে মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূলধন ঘাটতিতে থাকা সেসব ব্যাংক শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ দিতে পারে না।

ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির ক্ষেত্রে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ। দিন দিন খেলাপি ঋণ বাড়ছে। বিপরীত দিকে নানা কারণে এই খেলাপি ঋণ আদায় কমে গেছে। নিয়ম অনুযায়ী ঋণ মানের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন বাড়ছে; যা রাখতে গিয়ে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় হিমশিম খাচ্ছে ব্যাংকগুলো। প্রভিশন রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পাশাপাশি বড় বেসরকারি ব্যাংকগুলোও মূলধন ঘাটতিতে পড়ছে। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে এমন ব্যাংকের সংখ্যা ১৪টি। ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি ৩৭ হাজার ৫০৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। তিন মাস আগে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে মূলধন ঘাটতি বেড়েছে ৩ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা।