অর্থনীতি

ইজারা দেওয়া হচ্ছে বিটিএমসির আরও ৩ কল 

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) বন্ধ আরও তিনটি মিল ইজারা দেওয়া হচ্ছে। এর আগে ২টি বস্ত্রকল পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) পদ্ধতিতে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরই মধ্যে ইজারা সংক্রান্ত সার-সংক্ষেপ অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই  ইজারা প্রস্তাব মূল্যায়নে কমিটি করেছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, গত ২৮ ডিসেম্বর মিলগুলোর ইজারা প্রস্তাব মূল্যায়নের জন্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মুহাম্মদ মুখলেছুর রহমানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

কারখানা ৩টি ইজারা দিতে শিগগির টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করবে বিটিএমসি। ইজারার অনুমতি পাওয়া পাটকলগুলো হলো- চট্টগ্রামের ভালিকা উলেন মিলস, সিলেট টেক্সটাইল মিলস ও কুড়িগ্রাম টেক্সটাইল মিলস। এরআগে পিপিপিতে যে দুইটি বস্ত্রকল চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয় সেই ২টি হলো- চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডুতে অবস্থিত আর আর টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড এবং রাজশাহীতে অবস্থিত রাজশাহী টেক্সটাইল মিলস।

সূত্র জনায়, বিটিএমসির মালিকানাধীন ২৫টি শিল্প প্রতিষ্ঠানই এখন বন্ধ। এরমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ১৬টি কারখানা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বন্ধ থাকা এসব বিটিএমসির কারখানাগুলো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পুনরায় চালুর জন্য পিপিপি অথবা ইজারা দেওয়া হচ্ছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বিটিএমসির ২৫টি মিলের ৬৩৬ দশমিক ৩৮ একর জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় বিটিএমসির বন্ধ মিল চালুর বিষয়ে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পরিপ্রেক্ষিতে নানা উদ্যোগের পর ঢাকার ডেমরায় অবস্থিত আহমেদ বাওয়ানী টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ও গাজীপুরের টঙ্গীতে অবস্থিত কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড পিপিপি পদ্ধতিতে চালু করা সম্ভব হয়। কিন্তু করোনার সময় নানা আর্থিক সমস্যার কারণে মন্ত্রণালয়ের সে উদ্যোগ আর সামনে আগায়নি। 

সম্প্রতি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় চাপ প্রয়োগ করে বিক্রি হওয়া মিল চালুর বিষয়ে সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি।

বছর ছয়েক আগে লোকসানের কারণে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর থেকে সেগুলো বেসরকারি খাতে ইজারা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে ইজারা নিতে আগ্রহী হলেও ফের সেখানে পাটকল স্থাপনে আগ্রহ কম বেসরকারি উদ্যোক্তাদের। পরিস্থিতি বিবেচনায় এসব পাটকল ইজারা নিয়ে সেখানে টেক্সটাইল শিল্প স্থাপনের সুযোগ দিচ্ছে বিজেএমসি। এর আগে চার দফা দরপত্র দিয়েও পাটকল করার জন্য আগ্রহী উদ্যোক্তা পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে টেক্সটাইল মিল করা হচ্ছে।

বেসরকারি পাটকল লাভের মুখ দেখলেও বিজেএমসির পাটকলগুলো বছরের পর বছর লোকসান গুণছিল। লোকসানের বোঝা বইতে না পেরে ২৪ হাজার ৮৮৬ জন স্থায়ী শ্রমিককে স্বেচ্ছা অবসরে (গোল্ডেন হ্যান্ডশেক) পাঠানোর প্রক্রিয়ায় পাটকল বন্ধ করে দেয় সরকার।

এরপর ইজারা প্রক্রিয়া শুরু করার প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রণয়নের শুরুতে দেশের বড় প্রতিষ্ঠানগুলো রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাটকলের ইজারা নেওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে। এছাড়া, ভারত ও যুক্তরাজ্যের কিছু উদ্যোক্তা পাটকলগুলোর ইজারা পেতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু সরকারের নানা শর্ত ও মধ্যমেয়াদী ইজারার সময়ের কারণে পরে আগ্রহে ভাটা পড়ে অনেক প্রতিষ্ঠানের।

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের অনাগ্রহের কারণ মিলগুলোর দূরবস্থা ও সরকারের নানা শর্তের বেড়াজাল বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ জুট মিল অ্যাসোসিয়েশনের একজন কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, বিজেএমসির সব মিল অত্যন্ত পুরোনো। এগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা নতুন নতুন মেশিনের এক চতুর্থাংশ। শ্রমিক খরচ কয়েকগুণ বেশি। 

তিনি বলেন, এ কারখানা নিয়ে ব্যাংক লোন নেওয়া যাবে না, এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না- এমন দুই ডজন শর্ত রয়েছে। যে বিনিয়োগ করবে তারা এত শর্ত দিয়ে কীভাবে অন্যের কারখানা চালাবে। আবার এত কম সময়ের জন্য এগুলো লিজ দেওয়া হচ্ছে। এত অল্প সময়ের জন্য কেন একজন উদ্যোক্তা এত বড় বিনিয়োগ করবেন।

তিনি বলেন, টেক্সটাইল মিলগুলো বিদেশ থেকে তুলা এনে সুতা বানাবে। আর আমার দেশের পাট চাষিরা দাম না পেয়ে পাট উৎপাদন বন্ধ করে দেবে। এসব মিল পুনরায় চালু করে পাটের যে উন্নয়নের স্বপ্ন ছিল তা পূরণ সম্ভব না।