অর্থনীতি

৮০ শতাংশ ব্রোকার ব্যয় তুলতে পারছে না: ডিবিএ প্রেসিডেন্ট

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেছেন, ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম) বেঁধে দেওয়ায় গত দেড় বছরে দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন ব্যাপক কমেছে। এতে প্রায় ৮০ শতাংশ ব্রোকারেজ হাউজ তাদের পরিচালন ব্যয় তুলতে পারছে না। বিগত দেড় বছরে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। এখানে কোনো লেনদেন করা যাচ্ছে না প্রায় ২০ মাস ধরে। ২৫০টি ব্রোকারেজ হাউজ এবং ৭০টির মতো ট্রেকহোল্ডার আছে। সব মিলিয়ে ৩২০টির মতো কোম্পানি এখানে রান করছে। প্রায় দেড় বছর ধরে ৮০ শতাংশের মতো কোম্পানি তার পরিচালন ব্যয় তুলতে পারেছে না।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর নিকুঞ্জে ডিএসই টাওয়ারে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এবং ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরামের (সিএমজেএফ) সদস্যদের মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ডিবিএ প্রেসিডেন্ট বলেন, মার্কেটকে মার্কেটের মতো চলতে দিতে হবে। আমাদের ডিমিউচুয়ালাইজেশন (স্টক এক্সচেঞ্জ মালিকা থেকে ব্যবস্থাপনা পৃথককরণ) হয়েছে ২০১৩ সালে। ডিমিউচুয়ালাইজেশনের কারণে আমাদের ক্ষতি হয়েছে। তারপরও আমরা মেনে নিয়েছি। ২০১৩ সাল থেকে ১০ বছর হয়ে গেছে। এই ১০ বছর পর আমরা যেটা বিশ্বাস করি, এটা (ডিমিউচুয়ালাইজেশন) এখন রিভিউ করার সময় এসেছে। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নতির সঙ্গে যদি তুলনা করি, পুরো ইকোনমি এগিয়ে যাচ্ছে একভাবে আর আমরা অন্যভাবে যাচ্ছি। গত ১৫ বছরে যে আইপিও এসেছে, আমি মনে করি, তা রিভিউ করার সময় এসেছে।

ডিবিএ’র সাবেক সভাপতি রিচার্ড ডি রোজারিও বলেন, আমাদের যে তিনটি ব্রোকারেজ হাউজের কথা বলা হয়েছে, এই তিনটি হাউজের এই অবস্থার জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ডিএসই’র দায় আছে। আমরা দেখতে পেরেছি, শুরুতে হাউজগুলোর সমস্যা খুবই কম। ধীরে ধীরে সমস্যা বড় হয়েছে। অসহযোগিতার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। ফ্লোর প্রাইসের মতো জঘণ্য ঘটনা আবার বিপদে ফেলেছে। স্বল্প সময়ের জন্য এটা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু, এত দীর্ঘ সময়ের জন্য এটা গ্রহণযোগ্য না।

ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান বলেন, শেয়ারবাজারের আইন-কানুনগুলো মার্কেটফ্রেন্ডলি হতে হবে। 

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি এবং আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ও মহাব্যবস্থাপক মাজেদা খাতুন বলেছেন, আমি বিএমবিএ’র নতুন সভাপতি হয়েছি। আশা করি, নতুন বছরে আর্থিক খাতে ভালো হবে।

ডিএসই‘র পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, আমরা চাচ্ছি, একটা ভালো শেয়ার মার্কেট। শেয়ার মার্কেট ভালো হলে শিল্পায়নের সহযোগী হবে। মানুষের কর্মসংস্থান বাড়বে। পুঁজিবাজারে মানুষের অংশগ্রহণ বাড়বে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে আমরা দেখতে পারি, ব্যাপক মানুষ শেয়ারবাজারে। আমরা চাই, আমাদের শেয়ারবাজারেও ব্যাপক মানুষের অংশগ্রহণ হোক।

ডিএসই’র সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ব্রোকারেজ হাউজগুলোর ৬০-৭০ শতাংশ কর্মী চলে গেছে। বড় হাউজগুলো কোনোরকমে টিকে আছে। ছোট হাউজগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। আমাদের তিনটি হাউজ সমস্যায় পড়ে যাওয়ার তথ্য আপনারা পেয়েছেন। আমাদের সহযোগিতা করেন, আমরা আপনাদের একটি ভালো বাজার উপহার দিতে পারব।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. সাইদুর রহমান বলেন, বাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত না হলে বাজারের উন্নতি সম্ভব না। অন্যদিকে, তালিকাভুক্ত অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার সাড়ে ৭ শতাংশ, এটা খুবই কম। কর হার বাড়ানোটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সব সময় এই বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আসছি। কিন্তু, কার্যকরী পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। সুতরাং, ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মাজেদা খাতুন বলেন, পুঁজিবাজারের সার্বিক সহযোগিতায় আমরা সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করি। সবাই মিলে দেশের শেয়ারবাজারের উন্নয়নে একসাথে কাজ করব। সবাই যার যার জায়গা থেকে এগিয়ে আসলে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন হবে বলে আশা করছি।

এদিকে, সভায় সিএমজেএফ’র সভাপতি এস এম গোলাম সামদানী ভুঁইয়া বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে গেছে, সেভাবে পুঁজিবাজারের উন্নতি হয়নি। যখন দেশের অর্থনীতি ভালো ছিল, তখন যেমন পুঁজিবাজার খারাপ ছিল; বর্তমানে অর্থনীতিতে কিছুটা মন্দা, এখনও শেয়ারবাজার খারাপই রয়েছে। দেশের পুঁজিবাজারে বর্তমানে ফ্লোর প্রাইস একটা বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফ্লোর প্রাইসের কারণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি দিন দিন বাড়ছে। সঠিক সময় শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করতে না পারায় অনেকের পুঁজি আটকে পড়েছে। এমন পরিস্থিতি থেকে বিনিয়োগকারীরা পরিত্রাণ চায়। সবার প্রত্যাশা বাজারের লেনদেন স্বাভাবিক গতিতে চলুক। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ডিএসই ও সিএমজেএফ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করবে।

সিএমজেএফ’র সাবেক সভাপতি জিয়াউর রহমান বলেন, আমরা যদি পুঁজিবাজার ভালো অবস্থানে দেখতে চাই, বাজারে সকল স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে একটি ইকো সিস্টেম তৈরি করতে হবে। তাহলে বাজারে ভালো ভালো প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হবে। ফ্লোর প্রাইস নিয়ে আপনাদের যে উদ্বেগ, তা আমরা লেখা-লেখির মাধ্যমে প্রকাশ করেছি। সরাসরিও আমারা তাদের কাছে তুলে ধরেছি৷ এর ফলে যে আস্থার সঙ্কট তৈরি হচ্ছে, তা যদি মানুষের মাঝে থেকে যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীরা আর বাজারে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে না।

এমজেএফ’র সেক্রেটারি আবু আলী বলেন, সিএমজিএফ পুঁজিবাজারের উন্নয়ন এবং সাংবাদিকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আমরা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকি। আমরা বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছি, যা বাজারের উন্নয়নে কাজে আসবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ— বাজার উন্নতি করতে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

মতবিনিময় সভায় ডিবিএ’র পক্ষে প্রেসিডেন্ট ও ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেডের পরিচালক সাইফুল ইসলাম, সিনিয় ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইডএলসি সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুদ্দিন, ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইমিন্টে সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উমর হায়দার খানসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে, সভায় সিএমজেএফ’র পক্ষে প্রেসিডেন্ট এস এম গোলাম সামদানী ভূঁইয়া, জেনারেল সেক্রেটারি আবু আলী, সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, ভাইস প্রেসিডেন্ট বাবুল বর্মণ, জয়েন্ট সেক্রেটারি ইব্রা‌হিম হো‌সেন রেজওয়ান, ফাইন্যান্স সেক্রেটারি মাহফুজুল ইসলামসহ সংগঠনের অন্যান্য নেতা ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।