ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ড. হাফিজ মো. হাসান বাবু বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রবর্তনের পর বাংলাদেশের সামনে হাতছানি দিচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ৷ ২০৪১ সালের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করা হবে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের একটি দেশে পরিণত হবে৷ইতোমধ্যে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে পদার্পণ করেছি৷ স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণ করতে প্রয়োজন স্মার্ট পুঁজিবাজার।
সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) ডিএসইর নিকুঞ্জ টাওয়ারে অনুষ্ঠিত ‘স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম অব ডিএসই গো লাইভ’ প্রোগ্রামের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডিএসই থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএপিএলসির প্রেসিডেন্ট রুপালী হক চৌধুরী এবং ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম৷
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান সিপিএ এবং প্রধান রেগুলেটরি কর্মকর্তা খাইরুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ৷
ডিএসই’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের ৪টি উপাদানের মধ্যে একটি উপাদান হলো স্মার্ট ইকোনমি। আর স্মার্ট ইকোনমির দুইটি সেক্টর হচ্ছে ক্যাপিটাল মার্কেট ও মানি মার্কেট। আজকের এই বিষয়টি শুধু প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য পূরণ নয়, এটি স্মার্ট পুঁজিবাজার তৈরির অংশ হিসেবে কাজ করবে। অন্যান্য দেশে পুঁজিবাজার অর্থনীতিতে অনেক ভূমিকা রাখলেও বাংলাদেশে দুর্ভাগ্য জনক সেটা হয় না। আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে পুঁজিবাজারকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যেটা এখনো হয়ে উঠেনি। কারণ আমাদের দেশের মেগা প্রকল্পগুলোতে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়ন হচ্ছে। সেটা উন্নত দেশগুলোতে পুঁজিবাজারের মাধ্যমে হয়। এতে পুঁজিবাজার যেমন বড় হয় তেমনই দেশের উন্নয়নেও অবদান রাখে।
তিনি আরও বলেন, পুঁজিবাজারকে স্মার্ট করার জন্য এর কার্যক্রমকে পেপারলেস করতে হবে। আর সেই পেপারলেসের যাত্রা আজকে এই প্ল্যাটফর্ম চালুর মাধ্যমে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ডিএসই নিজস্ব স্মার্ট ডাকা সেন্টার তৈরি করছে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে পুঁজিবাজার যে স্মার্টের দিকে যাচ্ছে সেটা ডিএসই গত বছর থেকেই শুরু করেছে। আজকে ছিল এর দ্বিতীয় উদ্যোগ। পুঁজিবাজারের অন্যতম উপাদান হলো স্টেকহোল্ডারদের তথ্য সঠিকভাবে নেওয়া। সেটা যদি না নেওয়া যায় তাহলে আধুনিক পুঁজিবাজার করা সম্ভব হবে না। সেই তথ্যই স্মার্টভাবে নেওয়ার কার্যক্রম আজকে থেকে শুরু করা হলো। এতে তথ্য সঠিক সময় পাওয়া যাবে এবং সঠিক সময়ে নানা উদ্যোগ ও সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। আমরা যদি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে পুঁজিবাজারে উন্নয়নে কাজ করতে পারি তবে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট ইকোনমি বাস্তবায়ন করতে পরবো।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এটিএম তারিকুজ্জামান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণের অংশ হিসেবে স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেম চালু হওয়ায় পুঁজিবাজার আরেক ধাপ এগিয়ে গেলো। স্মার্ট সাবমিশন সিস্টেমের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো এখন থেকে সহজে নির্ভুল তথ্য প্রকাশ করতে পারবে। আগে যে ইচ্ছা ও অনিচ্ছাভাবে ভুল তথ্য প্রদান ও প্রকাশ করার ঝুঁকি ছিল সেই ঝুঁকি আর থাকবে না। এবং কেউ কোনো অনিয়ম করলে তা সহজেই চিহ্নিত করা যাবে।
তিনি আরও বলেন, আজকের এই কার্যক্রম শুরুর ফলে পুঁজিবাজারের জন্য একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপের যাত্রা শুরু হলো। ডিজিটাল বাংলাদেশের সাথে সঙ্গতি রেখে শেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জের সহযোগিতায় ডিএসই’র কর্মকর্তাবৃন্দ স্পেশাল সাবমিশন সিস্টেম তৈরি করেছে। এতদিন কোম্পানির বিভিন্ন তথ্য ম্যানুয়ালি সাবমিশন করা হতো। যার ফলে অনিচ্ছাকৃত ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকতো। এই সফটওয়্যারটি চালু হবার ফলে এই সমস্যাটিকে সমাধান হবে। আর এর ফলে কমপ্লায়েন্স পরিপালন করা সহজ হবে। একই সাথে ইনফরমেশন গ্যাপ ও অনিয়ম কমে যাবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিএপিএলসি-এর প্রেসিডেন্ট রূপালি হক চৌধুরী বলেন, অনলাইনে তথ্য জমা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হওয়ায় এখন থেকে সময় অনেক বেঁচে যাবে। এতে করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর তথ্য দ্রুততম সময়ে সবার কাছে পৌঁছানো যাবে। তবে সিস্টেমে সমস্যা হলে তা সঙ্গে সঙ্গে সমাধানের ব্যবস্থা থাকতে হবে। যাতে করে সমস্যা হওয়ার কারণে সিস্টেমের কাজ বন্ধ না হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর কাজ হচ্ছে পুঁজিবাজারকে গতিশীল করা। সবার সঙ্গে কাজ করে বাজারের আরও উন্নতি করা। কোম্পানিগুলোর কিছু সমস্যা আছে। তবে সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে বাজারের এবং বিনিয়োগকারীদের যাতে কোনো সমস্যা বা ক্ষতি না হয়। আজকের এই সিস্টেমের ফলে প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশের লক্ষ্য পূরণের অংশ ছাড়াও তথ্য দেওয়া আরও সহজ হবে। এতে সময়ের যে ব্যয় হত সেটাও কমে যাবে। যা সময়পযোগী কাজ হয়েছে। অনেক তালিকাভুক্ত কোম্পানি রয়েছে যারা এই সফটওয়্যারটি অতি সহজে ব্যবহার করতে পারবে। একই সাথে কিছু কোম্পানি রয়েছে যারা অটোমেটেড নয় তাদের এই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে সহযোগিতা করতে হবে। তারা সময়ের সাথে সাথে এই সফটওয়্যারটিরেত অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারের উন্নয়নে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর তথ্য কোনোভাবে যাতে ভুল প্রকাশ না হয় এবং বাদ না যায় সে বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যেন ভুল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাজার থেকে অনৈতিক মুনাফা করতে না পারে এবং ক্ষতি করতে না পারে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। আজকের এই উদ্যোগের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে অনেক ধন্যবাদ। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে ডিএসইর চেয়ারম্যান একজন আইটি বিশেষজ্ঞ। তাই ভবিষ্যতে যদি ডিএসইর আইটি প্ল্যাটফর্মে ঘাটতি থাকে তবে সেটা দুঃখজনক হব। এছাড়া চায়নারা কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার পর এই প্রথম কোনো কাজে তাদের সহযোগিতা দেখা গেছে। তবে কোম্পানিগুলোর তথ্য যাতে ঠিকভাবে যাচাই করে প্রকাশ করা হয়। তাহলে সবার উদ্দেশ্যে পূরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
পরে অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ডিএসই’র সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও লিস্টিং অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্টের প্রধান মো. রবিউল ইসলাম।
মূল প্রবন্ধে তিনি তৈরিকৃত সফটওয়্যারটির উদ্দেশ্য, ব্যবহার ও টেকনিক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক এবং বিভিন্ন মডিউল সম্পর্কে আলোকপাত করেন। অনুষ্ঠানে সমাপণী বক্তব্য প্রদান করেন ডিএসই’র প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা খাইরুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ৷