অর্থনীতি

‘পোশাক শিল্পে তিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা জরুরি’

বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের টেকসই উন্নয়ন ও বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে জরুরি ভিত্তিতে তিনটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা জরুরি। এগুলো হলো— ডিকার্বোনাইজেশন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পরবর্তী পরিস্থিতি এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বা উৎপাদন পদ্ধতিতে প্রযুক্তির স্বয়ংক্রিয়করণের প্রভাব।  

শনিবার (১১ মে) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘বুনন ২০৩০: নীতিনির্ধারণী আলোচনা’য় মূল প্রবন্ধে এ কথা বলা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লাইটক্যাসল পাটনার্সের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক জাহেদুল আমিন।

এলডিসি থেকে উত্তরণ ও প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকতে পোশাক শিল্পে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় ও সুপারিশ তুলে ধরতে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বিজনেস কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠান লাইটক্যাসল পার্টনার্স ও পলিসি এক্সচেঞ্জ। বৈঠক সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ। সূচনা বক্তব্য দেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট বিভাগের পরিচালক আইনি ইসলাম।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, সবচেয়ে বেশি সঙ্কট আসছে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর। এলডিসির কারণে জেনারেলাইজড প্রেফারেন্স স্কিমসহ (জিএসপি) অন্যান্য বাণিজ্যসুবিধা কমে যাওয়া, শ্রমিকদের মজুরি বেড়ে যাওয়া, আন্তর্জাতিক ক্রেতারা তুলনামূলক কম খরচে পোশাক উৎপাদন করা দেশগুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ার আশঙ্কা, পোশাক শিল্পের কিছু মালিক কমপ্লায়েন্স পুরোপুরি না মানার ফলে এ সঙ্কট আরও বাড়বে।  

এতে আরও বলা হয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বাংলাদেশ ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের পোশাক রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২০৪ অর্থবছরে জিডিপিতে এ খাতের অবদান ১০.৩৫ শতাংশ।  পোশাক খাতে কর্মরত আছেন ৪ .১ মিলিয়ন বা ৪১ লাখের অধিক শ্রমিক। তাদের ৬০ শতাংশই নারী। ফলে, এখনই এ সমস্যাগুলো মোকাবিলা করতে না পারলে পোশাক শিল্পের পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনীতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।   

বিশিষ্টজনদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন—বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. সেলিম হোসেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) মহাপরিচালক মো. আরিফুল হক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. আবদুর রহিম খান, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম, দি এশিয়া ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি কাজী ফয়সাল বিন সিরাজসহ অন্যান্য  কর্মকর্তা।

গোলটেবিল বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মো. সেলিম হোসেন বলেন, পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) আওতায় রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ একটি উৎপাদনভিত্তিক, সৃজনশীল ও সময়পোযোগী ব্যবসায়িক মডেল গ্রহণ করতে পারে। 

বিডার মহাপরিচালক আরিফুল হক বলেন, দেশের পোশাক খাতের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা অনুযায়ী কার্যকর রপ্তানিমুখী নীতি প্রয়োজন। এজন্য নীতিনির্ধারকরা দেশের বিখ্যাত কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ নিতে পারেন।

বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণের জন্য ভারতের আদলে প্রোডাক্ট লিঙ্কড ইনসেনটিভ (পিএলআই) স্কিমের মতো সফল মডেলগুলো অনুসরণ করার তাগিদ দেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক মো. আবদুর রহিম খান। 

বিকেএমইএর নির্বাহী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ফাইবার উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনতে ম্যান-মেড ফাইবার (এমএমএফ) উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেওয়া প্রয়োজন।