অর্থনীতি

সরকারের সুদ ব্যয় বাড়ছে

সরকারের নেওয়া দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে বিপুল অর্থ ব্যয় হচ্ছে। মধ্যমেয়াদি হিসেবে আগামী তিন অর্থবছরে শুধু সুদ খাতে ব্যয় করতে হবে চার ৪ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। যা দিয়ে দেড় বছরের বেশি উন্নয়ন ব্যয় (এডিপি) মেটানো সম্ভব।

সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে এডিপি ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।   শুধু ৩ বছরের সুদ ব্যয় দিয়ে ১২টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

সুদ ব্যয়ের এই চিত্র অর্থ বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৪-২০২৫ থেকে ২০২৬-২৭’ এ প্রকাশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নীতি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আগামী ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় করতে হবে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেওয়া সুদ ব্যয় ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। একইভাবে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ ব্যয় বেড়ে হবে এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। এবং বিদেশি সুদ ব্যয় হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা। এরপরের অর্থবছরে অর্থাৎ, ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে তা আরও বৃদ্ধি পেয়ে হবে এক লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশি সুদ ব্যয় হবে এক লাখ ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বিদেশি সুদ ব্যয় হবে ২৬ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, ‘মধ্যমেয়াদে সরকারের প্রাক্কলিত সুদ ব্যয়’-এ খাতে সরকারের ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা নির্দেশ করে। সুদ পরিশোধের প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২১ অর্থবছরের সুদ ব্যয় ছিল ৭৭ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। সেখানে ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে তা বেড়ে হবে এক লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। মোট বাজেটের অনুপাতে সুদ পরিশোধ হ্রাস-বৃদ্ধি লক্ষণীয়। সুদ ব্যয় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেটের ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৪ শতাংশে হ্রাস পায়। তবে তা ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে আবার ১৫.৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।

বাজেট ডকুমেন্ট থেকে দেখা গেছে, প্রতি বছরই বাজেটে সুদ ব্যয় বেড়ে চলেছে। যেমন ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সংশোধিত বাজেটে সুদ খাতে ব্যয় ধরা হয় ৭০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। মূল বাজেটে যা ছিল ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা। সুদ ব্যয়ের মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুদ খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ ব্যয় ধরা আছে চার হাজার ৩০০ কোটি টাকা। একইভাবে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে সুদ ছিল ৭০ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯০ হাজার কোটি টাকা, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯৪ হাজার ৩০ কোটি টাকা, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এক লাখ ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ বেড়ে হবে এক লাখ ৩৮ হাজার ৩০ কোটি টাকা।

এর আগে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় করা হয়েছে ৫৭ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় হয়েছে ৫২ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ৪ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। এর আগের ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাতে সুদ ব্যয় ছিল ৪৫ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা। এবং বিদেশি সুদ ব্যয় তিন হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ৩৮ হাজার ১৬০ কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ছিল তিন হাজার ৬০৫ কোটি টাকা।

একইভাবে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে এই ব্যয় যথাক্রমে ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা এবং এক হাজার ৭১১ কোটি টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে ৩০ হাজার ৪৪ কোটি টাকা ও এক হাজার ৬২৫ কোটি টাকা। এবং ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় ছিল ২৯ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকা। এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় হয়েছে-এক হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা।