অর্থনীতি

পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদীশাসন ব্যয় বাড়ছে ২৪৯ কোটি টাকা

পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে নদীশাসনের কাজে নানা কারণে বিলম্ব হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন (এসএইচসিএল) মেয়াদ বৃদ্ধিজনিত (এক্সটেনশন অব টাইম) ভেরিয়েশন মূল্য বাবদ ২৪৯ কোটি ৪২ লাখ ৫২ হাজার ৩৪৯ টাকা দাবি করেছে। এর ফলে নদীশাসন কাজে ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৯ হাজার ৮৩৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪৯ টাকা। এ কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মূল চুক্তি ছিল ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি ৩৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকার।

সূত্র জানিয়েছে, পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। প্রকল্পের নদীশাসন কাজের জন্য এসএইচসিএল’র কাজ সমাপ্তির তারিখ ছিল ২০২৩ সালের ৩০ জুন। তবে, প্রকল্পের ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড ২০২৪ সালের ৩০ জুন শেষ হবে। প্রকল্পের নদীশাসন কাজের মূল চুক্তিমূল্য ৮ হাজার ৭০৭ কোটি ৮১ লাখ ৪১ হাজার ৪৪৬ টাকা, যা গত ২০১৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রথম সংশোধিত চুক্তিমূল্য ৯ হাজার ৫৮৫ কোটি ৩৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, যা ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় অনুমোদন করা হয়। পরবর্তীতে ঠিকাদার এক্সটেনশন অব টাইম-জনিত (ইওটি) কারণে ক্লেইম দাখিল করে। দাখিল করা ক্লেইমগুলো মূল সেতু ও নদীশাসন কাজ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত কন্সট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট কর্তৃক পর্যালোচনা ও যাচাই-বাছাই করা হয়েছে।

নদীশাসন কাজের ঠিকাদারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদার দুটি কারণে এক্সটেনশন অব টাইম দাবি করে— (১) প্রকল্পের জাজিরা প্রান্তের নদীশাসন কাজের সীমানায় অবস্থিত কাঁঠালবাড়ী ফেরি ঘাট, লঞ্চ ঘাট, স্পিডবোট ঘাট ও আশপাশের প্রায় ১ কিলোমিটারের বেশি দৈর্ঘ্যের এলাকা নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখার স্বার্থে বিআইডব্লিউটিএ’র দখলে থাকায় প্রায় ৩ বছরের বেশি সময় (২০২৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত) ঠিকাদারকে হস্তান্তরে দেরি হয়। (২) নদীশাসন কাজের ডিজাইন চূড়ান্ত হওয়ার পরে মাওয়া প্রান্তে মূল সেতুর উজানে নদীশাসন কাজের সীমানা বরাবর ২০১২ সালে নদীর প্রচণ্ড স্রোতে নদীভাঙন হয়ে ঠিকাদারের কাজের কিছু এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর ফলে ওই ভাঙনের শিকার এলাকার নদীর তলদেশের গভীরতা লেভেল দাঁড়ায় (-) ৩৩ মিটার পিডব্লিউডি। নদীশাসন কাজের ডিজাইন অনুযায়ী অ্যাপ্রনের লেভেল (-) ২৫ মিটার পিডব্লিউডি। নদীর তলদেশে গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতোপূর্বে সম্পাদিত ডিজাইন অনুযায়ী কাজ করা সম্ভব হয়নি। ফলে, পরিবর্তিত ডিজাইন প্রণয়নের প্রয়োজন হয়। সৃষ্ট গভীরতা প্রকৃতিগতভাবে ভরাট হতে কয়েকটি বর্ষা মৌসুমের প্রয়োজন হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্তিত নতুন ডিজাইন প্রণয়নে বিলম্ব হয়। এছাড়াও জমি হস্তান্তরে দেরি হওয়ায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এক্সটেনশন অব টাইম দাবি করে।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ইভেন্টের জন্য ডেইলি ম্যানেজমেন্ট কস্ট ৪৭ লাখ ৮২ হাজার ৯৪৭ দশমিক ৮৬ টাকা হারে ১ হাজার ৬৯৭ দিনের জন্য এক্সটেনশন অব টাইমের খরচ বাবদ ভ্যাট ও ট্যাক্স ছাড়া ৮০৩ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫৬ দশমিক ৯৪ টাকার ক্লেইম দাখিল করে। প্রকল্পের মূল সেতু ও নদীশাসন কাজ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত কন্সট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট (সিএসসি) ঠিকাদারের যৌক্তিকতা ও সঠিকতা নিয়ে পর্যালোচনা ও যাচাই-বাছাই করে। ১ হাজার ৬৯৭ দিনে এক্সটেনশন অব টাইম-জনিত ৮০৩ কোটি ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৪৫৬ দশমিক ৯৪ টাকা দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিলম্বে জমি হস্তান্তরের জন্য ৫১০ দিন এবং বিলম্বে ডিজাইন প্রণয়নের জন্য ১৮০ দিনসহ মোট ৬৯০ দিন এক্সটেনশন অব টাইম এবং বিলম্বে ডিজাইন প্রণয়নের জন্য ১৮০ দিনসহ মোট (৫১০+১৮০)=৬৯০ দিন এক্সটেনশন অব টাইম এবং ডেইলি ম্যনেজমেন্ট কস্টের হার ৩৮ লাখ ২০ হাজার ৪৭১ দশমিক ৫৮ টাকা হারে মোট ৬৯০ দিনের জন্য ভ্যাট ও ট্যাক্স ব্যতীত মোট ২৬৩ কোটি ৬১ লাখ ২৫ হাজার ৩৯০ দশমিক ২০ টাকা সিএসসি কর্তৃক সুপারিশসহ প্রকল্প দপ্তরে পাঠায়। পরে গত ৯ জুন তারিখে প্যানেল অব এক্সপার্টসের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলে প্যানেল এ দাবিতে একমত পোষণ করে। পরবর্তীতে সেতু কর্তৃপক্ষ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নেগোশিয়েশন করে। এর মাধ্যমে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সুপরিশকৃত অর্থের আরও ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে। ফলে, ভ্যাট ও ট্যাক্স ছাড়া চূড়ান্তভাবে দাবি দাঁড়ায় ২৩৭ কোটি ২৫ লাখ ১২ হাজার ৮৫১ দশমিক ১৮ টাকা। ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ মোট ২৭২ কোটি ৮৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭৮ দশমিক ৮৬ টাকা। সংশোধিত চুক্তিমূল্যেও বিপরীতে সম্পাদিত কাজে মোট ২৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৭ হাজার ৪২৮ দশমিক ৯১ টাকা সাশ্রয় হয়। অতএব, নদীশাসন কাজের সংশোধিত চুক্তিমূল্য সর্বমোট ৯ হাজার ৮৩৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪৯ দশমিক ৯৫ টাকা (যা মূল চুক্তিমূল্যর চেয়ে ১২ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি এবং প্রথম সংশোধিত চুক্তিমূল্যের চেয়ে ২ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি।

পদ্মা বহুমুখী সেতুর নদীশাসনে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দাবিকৃত অর্থ পরিশোধ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির পরবর্তী সভায় উত্থাপন করা হতে পারে বলে সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।