অর্থনীতি

বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় বেড়েছে ১৬২ শতাংশ

এক বছরের ব্যবধানে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে নেওয়া বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় বেড়েছে ১৬২ শতাংশ। অর্থ বিভাগের সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যানে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, গেল ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ১১ হাজার ৬০২ কোটি টাকা। এর আগের বছর ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে একই সময়ে (জুলাই-মার্চ) সুদ পরিশোধে ব্যয় হয়েছিল চার হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বেড়েছে ১৬২ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা সাত হাজার ১৬৭ কোটি টাকা।

অন্যদিকে, একই সময়ে দেশি ঋণের সুদ ব্যয় বেড়েছে ৭ শতাংশ। এই অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক খাতে ঋণের সুদ বেড়েছে ২১ শতাংশ। কিন্তু নন-ব্যাংক বা সঞ্চয়পত্র থেকে সুদ ব্যয় নেগেটিভ হয়ে গেছে। গত অর্থবছরে নয় মাসে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ব্যয় ছিল ৫৯ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে একই সময়ে যা ছিল ৫৫ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সুদ ব্যয় বেড়েছে তিন হাজার ৬২ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে নয় মাসে সুদ খাতে অর্থ ব্যয় হয়েছে ৭১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। এর আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ৬০ হাজার ৪০৪ কোটি টাকা। এক বছরে সুদ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ১৮ শতাংশ বা ১০ হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগের হিসেবে, আগামী তিন অর্থবছরে শুধু সুদ খাতে ব্যয় করতে হবে চার লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। যা দিয়ে দেড় বছরের বেশি উন্নয়ন ব্যয়(এডিপি) মেটানো সম্ভব। চলতি অর্থবছরে এডিপি ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

সুদ ব্যয়ের এই চিত্র অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৪-২০২৫ থেকে ২০২৬-২৭’ এ প্রকাশ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে নীতি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে সুদ খাতে ব্যয় করতে হবে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে নেওয়া সুদ ব্যয় ৯৩ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি ঋণের সুদ ব্যয় ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। একইভাবে ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে সুদ ব্যয় বেড়ে হবে এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সুদ ব্যয় এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা এবং বিদেশি সুদ ব্যয় হবে ২৩ হাজার কোটি টাকা।  এর পরের অর্থবছরে অর্থ্যৎ, ২০২৬-২০২৭ তা আরও বৃদ্ধি পেয়ে হবে এক লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশি সুদ ব্যয় হবে এক লাখ ২৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং বিদেশি সুদ ব্যয় হবে ২৬ হাজার কোটি টাকা।

অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, মধ্যমেয়াদে সরকারের প্রাক্কলিত সুদ ব্যয় এ খাতে সরকারের ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা নির্দেশ করে। সুদ পরিশোধের প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২১ অর্থবছরের সুদ ব্যয় ছিল ৭৭ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। সেখানে ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে তা বেড়ে হবে এক লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। মোট বাজেটের অনুপাতে সুদ পরিশোধ হ্রাস-বৃদ্ধি লক্ষ্যণীয়। সুদ ব্যয় ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাজেটের ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ হতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১২ দশমিক ৪ শতাংশে হ্রাস পায় তবে তা ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে পুনরায় ১৫.৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।